ছোটবেলা থেকেই মাঠে-ময়দানে দৌড়েছেন। শরীরে ধুলাবালি মেখে ঘরে ফিরেছেন। হাত-পা ধুয়ে ঘুমাতে গেলেও মাথার চুলের ময়লা আর পরিষ্কার করা হতো না মোশাররফ করিমের। আস্তে আস্তে চুলে খুশকি হলো। ‘বিশেষ করে শীতকালে তো কাঠ চেরাইয়ের কলের তুষের মতো মাথা থেকে খুশকি পড়ত। সে যে কী যন্ত্রণার!’ বললেন মোশাররফ করিম। একসময় খুশকি দূর করার উদ্যোগ নিলেন তিনি। ‘তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে মাথায় দিলাম। বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন আমার পরিচিত একজন। দারুণ কাজ হলো। এভাবে পেঁয়াজের রসমিশ্রিত তেল মাথায় ম্যাসাজ করে ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতাম। তারপর আর খুশকির দেখা নেই।’
মোশাররফ মনে করেন, চুল খুশকিমুক্ত রাখতে চাইলে চুলের যত্ন নিতে হবে। চুল ছোট হোক বা বড় হোক, তাতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। চুলের গোড়ায় ধুলাবালি থাকলে এ সমস্যা আরও বাড়ে।
অভিনেতা শাহেদ কালো পোশাক পরতে পারতেন না। কোথাও হয়তো কালো রঙের শার্ট-প্যান্টে পরে গেছেন, কিন্তু কষ্ট পেতেন, যখন দেখতেন কাঁধের দুই পাশে সাদা সাদা খুশকি পড়ে আছে। নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পেতেন। এরপর নানাভাবে খুশকি দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। একসময় সফলও হলেন। ‘আমার স্ত্রী নাতাশা যখন লন্ডনে পড়াশোনা করতে গেল, তখন সেখানে একবার গেলাম। খুঁজতে খুঁজতে ভালো একটি শ্যাম্পু পেলাম। এটি ব্যবহার করার পর ম্যাজিকের মতো আমার খুশকি দূর হয়ে গেল। তার পর থেকে আমি নিয়মিত এই শ্যাম্পু ব্যবহার করে আসছি। পরে আমার মনে হয়েছে, একটু সচেতন হলেই চুল খুশকিমুক্ত রাখা সম্ভব।’
চুল খুশকিমুক্ত রাখতে প্রথম থেকেই তত্পর ছিলেন নোবেল। তিনি অনেককেই খুশকিতে বিব্রত হতে দেখেছেন। তাই নিজে এতটাই সচেতন ছিলেন যে মাথায় খুশকির আবাস গড়ে উঠতে দেননি। নোবেল বললেন, ‘আসলে এটা একধরনের রোগ। শরীরে ত্বকের সমস্যা আছে যাদের, তাদেরই এ সমস্যা হয়। আমি যেদিন বাইরে বেশি ঘোরাঘুরি করি, বা কাজ করতে হয়, সেদিনই ভালোভাবে চুল শ্যাম্পু করে নিই। মাঝেমধ্যে গরম তেল মাথার চুলে ম্যাসাজ করি। এভাবে নিয়মিত যত্ন নিই, তাই চুলে খুশকি নেই।’
অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলুর চুল বেশ লম্বা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই লম্বা চুল নিয়েই কাজ করছেন। কিন্তু তাঁর চুলে কোনো খুশকি নেই। কীভাবে তিনি তাঁর লম্বা চুলের যত্ন নেন?
লাভলু বললেন, ‘প্রথমত, আমি সপ্তাহে তিনবার শ্যাম্পু করি। মাথায় কোনো অবস্থাতেই ময়লা জমতে দিই না। দ্বিতীয়ত, প্রচুর শাকসবজি ও ছোট মাছ খাই। আর ১৫ দিনে একবার গরম তেল ম্যাসাজ করি। এ ছাড়া মাসে একবার মেহেদি, ডিম, কলা, হারবাল প্যাক—এসব চুলে লাগাই। ফলে চুল থাকে ঝরঝরে। আর শীতকালে এ ব্যপারে আমি আরও বেশি সচেতন হই। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, প্রতিদিন গোসলের সময় চুল ধুয়ে শুকিয়ে নিই। ফলে চুলে খুশকি বাসা বাঁধতেই পারে না।’
পুরুষদের চুলের পরিচর্যা ও খুশকি দূর করার উপায় নিয়ে এখন একাধিক সেলুন গড়ে উঠেছে। এ রকমই একটি প্রতিষ্ঠান মেন’স কেয়ার।
মেন’স কেয়ার সেলুনের কর্ণধার মো. জাভেদ হোসাইন বললেন, খুশকির জন্য কয়েক ধরনের চিকিত্সা আছে। প্রথমত, কেউ যদি বাড়িতে বসেই চিকিত্সা করাতে চান, তবে রিঠা ফল কিনে তা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি ১৫ মিনিট মাথার চুলে ম্যাসাজ করতে হবে। দেখা যাবে কয়েক দিন পর আপনা-আপনি চুল খুশকিমুক্ত হয়েছে। আবার লেবু ও পেঁয়াজের রস এক করে চুলে তা ম্যাসাজ করেও খুশকি দূর করা যায়। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এসব জিনিস চুলে প্রয়োগ করলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। এ জন্য কন্ডিশনার করা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে চুল ময়েশ্চারাইজ করার জন্য ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এর বাইরেও কিছু প্রোটিন চিকিত্সা আছে আমাদের এখানে।’
জাবেদ আরও জানান. চুলের খুশকি দূর করার জন্য মাথায় গরম তেল ম্যাসাজ করাটাও বেশ উপকারী।
প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো নয়। সপ্তাহে দুবার চুলে শ্যাম্পু করা যেতে পারে বলে তিনি জানান। তবে খুশকির সমস্যা বেশিহলে চিকিত্সকের পরামর্শ দিতে হবে।
কামরুজ্জামান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply