একটি ছেলের সঙ্গে আমার জানাশোনা ছিল। ভাই বলে ডাকতাম। সে আমার প্রতিটি কাজে সাহায্য করত। তার সহযোগিতায় আজ আমি একটা ভালো চাকরি করছি। পরিচয় হওয়ার কিছুদিন পরই জানতে পারি, সে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে এবং তার দুটি বাচ্চা আছে। দুটি বাচ্চাই বিকলাঙ্গ। একজন পুরোপুরি বিছানায়; অপরজন কথা বলতে পারে না। দুই বছর হলো তার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে গেছি। আমার নিজের অজান্তে কখন যে তাকে ভালোবেসেছি, বলতে পারব না। সে না এলে ভীষণ খারাপ লাগে। তার সবকিছু ভালো লাগে। এখন সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি না বা হ্যাঁ কিছুই বলিনি। এখন আমার প্রশ্ন, পরবর্তী প্রজন্ম কেমন হবে? দোষটা তার স্ত্রীর, নাকি তার। ভেবে চিন্তায় আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
চট্টগ্রাম।
কাউকে ভালোবাসলে, এত চিন্তা না করাই ভালো। তবু সংগত কারণেই আপনি চিন্তা করছেন। ভালোবাসলে তো বোঝাপড়া ভালো হওয়া উচিত। আপনারা দুজন মিলে চিকিত্সকের কাছে যান। জেনে নিন, জিনগত কারণে (জেনেটিক্যালি) আপনারা কোনো সমস্যায় পড়বেন কিনা।
দেখুন, কাউকে ভালোবাসলে সব সমস্যার সমাধান করা যায়। আপনি একজনকে এ রকম ভালোবেসেছেন সেটাই বড় কথা। সেটাই বড় ভাগ্য।
আমার বয়স ২১ বছর। পড়ালেখা করছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইংরেজি বিভাগে। কয়েক মাস আগে রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে ফোনে পরিচয় হয়। খুব কম সময়েই আমাদের সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়। এমনকি আমাদের দৈহিক সম্পর্কও হয়েছে। ওই ঘটনার ঠিক দুই দিন পর থেকে সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ফোনেও কথা বলা বন্ধ করে দেয়। একদিন ফোনে সে বলে, সম্পর্ক ছিন্ন করার একমাত্র কারণ তার পরিবারের সম্মতির অভাব। অনেক যুক্তি আমি তাকে দেখালেও সে নিরুপায় হয়ে বলে, আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসতে পারেনি। সে আমার সঙ্গে এত দিন যা করেছে, তা অন্যায় করেছে বলে ক্ষমা এবং মুক্তি চেয়েছে। অল্প সময়ের হলেও এ সম্পর্কটাকে আমি কোনোভাবেই ছিন্ন করতে চাই না। কারণ আমার মনে হয় কোনো স্বামী হয়তো তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। আর সে সুখী হতে পারবে না। আমিও কোনো দিন তার চাওয়া ‘মুক্তি’ দিতে পারব না। বিষয়টি তার পরিবারকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্তটা কি ভুল হবে?
স্বরবর্ণ
রাজশাহী।
ঘটনাটা পারিবারিকভাবে জানালে বিষয়টা দুজনের মধ্যে আর থাকবে না। তাই এটা হুমকিস্বরূপ হয়ে যাবে। আমি আপনাকে এই পথে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেব।
আর মেয়েটার ভালোমন্দ বিচারে যাব না। কারণ, সে ভালো এই অর্থে যে সে মিথ্যাচার করেনি, আর মন্দ এই অর্থে যে সে সম্পর্ক নিয়ে উচ্ছৃঙ্খলতা করছে।
সে যা-ই হোক, স্বামী তাকে মানবে কি মানবে না, সেই বিচারে যাওয়ার দরকার নেই। বরং এটাই ভালো যে আপনি তার কাছ থেকে সরে যান।
আমার বিবাহিত জীবন সাড়ে তিন বছরের। আমাদের একটি সুন্দর ছেলে আছে, যার বয়স দুই বছর ছয় মাস। আমাদের বিয়ে হয় পারিবারিকভাবেই। বিয়ের রাতেই আমার স্ত্রী আমাকে জানায়, সে একটি ছেলেকে ভালোবাসে এবং তাদের ভালোবাসা প্রায় ছয় বছরের। ছেলেটি দেখতে খুব সুন্দর। সে ছেলেটিকে স্বামী হিসেবেই ধরে নিয়েছিল এবং তাদের ভালোবাসা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেই ছেলেটি আবার আমারই বন্ধু। তাদের ভালোবাসার কথা আগে জানতাম না। জানার পর বাসর রাতে আমার স্ত্রীকে জানাই, জীবনে এ রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। আমি খুশি মনেই ব্যাপারটি মেনে নিই। এখন সমস্যা হচ্ছে, আমার প্রতি স্ত্রী উদাসীন। আমি কোনো কাজ করতে না বললে করে না। আমি স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসি এবং তার সঙ্গ খুব উপভোগ করি, যদিও সে আমাকে বেশি সঙ্গ দেয় না। সে খুব জেদি। তাকে যে ভালোবাসি, সে কোনো দিন তা বোঝার চেষ্টা করে না। এ জন্য ব্যবসার কাজেও মন দিতে পারছি না। আমি এখন কী করতে পারি?
জীবন, নওগাঁ।
আপনাদের বয়স কম। মেয়েটি প্রেম নিয়ে খেলছে। আর আপনি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্কটা একটা গেম বা খেলার মতো হয়ে যায়। আপনার স্ত্রীর দিক থেকে সে রকমই হচ্ছে মনে হয়। যদি তা-ই হয়, আপনিও কৌশলী হোন।
আপনি তাঁকে যতই ভালোবাসুন, সেটা তাঁকে বুঝতে দেবেন না। ব্যবসায় মন দিন। দেখা যাক কী হয়। আমার ধারণা, আপনার কঠোর অবস্থানে স্ত্রী নতি স্বীকার করবেন।
আমরা পাঁচ ভাই এক বোন। বোন অবিবাহিতা আমি ভাইদের মধ্যে চতুর্থ। বিয়ে করিনি। তৃতীয় ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে গত দুই বছর হলো অপ্রকাশ্যে ভালোবাসেন। ইদানীং তাঁর কথা, তিনি স্বামীর ঘর করবেন না। আমাকে না পেলে আত্মহত্যা করবেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাঁকে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তাঁকে আমার স্ত্রী হিসেবে আমার পরিবার কোনো দিনও মেনে নেবে না। তিনি মেয়ে হিসেবে ভালোমনের মানুষ নন। কিন্তু খুব সুন্দরী। তিনি স্বামী ছাড়া বাড়ির সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। তাঁর কোনো সন্তান নেই। এর পরও আমি তাঁকে শুধু ভাবি হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে চাই। আমি আরেকটি মেয়েকে ভালোবাসি। কীভাবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসব?
সাগর
সিরাজগঞ্জ।
আপনার ভাবি তাঁর সুন্দর চেহারা দিয়ে আপনাকে প্রলুব্ধ করছেন। আপনি আরেকজনকে ভালোবাসেন। হয়তো ভাবি আপনাকে কিছুটা কুপোকাত করে ফেলেছেন। তাই আপনিও সাতপাঁচ ভাবছেন। আপনি বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকুন। ভাবির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে পারলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
আমি দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়ছি। ২০০২ সালে হঠাত্ হূদরোগে আমার মা মারা যান। পরে বাবা বিয়ে করেন। কিন্তু সত্মায়ের কর্মকাণ্ড তেমন ভালো লাগত না। তখন এক স্কুলবন্ধু ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। বন্ধুর মা আমাকে খুব আদর করতেন। তাঁর আদরে মুগ্ধ হয়ে প্রায় দুই বছর আগে আমি তাঁকে মা বলে ডাকতে চাই। তিনি রাজি হন। সেই মায়ের এক ছেলে এক মেয়ে। কিছুদিন আগে সেই মা আমাকে বলেন, তাঁর ছেলেমেয়েরা আমাকে তেমন সহ্য করতে পারে না। তিনি আমার সঙ্গে ফোনে কথা বললে তারা মন খারাপ করে থাকে। আমার বন্ধুর সঙ্গে আগের মতো সম্পর্ক নেই। সেই মা হয়তো তাঁর ছেলেমেয়েদের খুশি রাখতে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছেন। ফোন করেন না। আমি ফোন করলেও আগের মতো কথা বলেন না। কী হয়েছে সেটাও বলেন না। এ অবস্থায় আমার মানসিক অবস্থা ভালো না। পড়ালেখা হচ্ছে না।
রহিম, দিনাজপুর।
আপনি হয়তো তাঁকে ‘মা’ হিসেবে ভেবেছেন, তিনিও আপনাকে ছেলে বলে ভেবেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলেমেয়েদের বিষয়টা ভালো লাগছে না। এ অবস্থায় আপনার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াই ভালো।
আপনি যুবক। মায়ের জায়গায় আসবে অন্য এক সঙ্গী, যে আপনাকে বন্ধুত্ব দেবে, ভালোবাসবে, প্রেম দেবে। সামনের দিকে তাকান। সুন্দর ভবিষ্যত্টা দেখুন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৩, ২০০৯
—————————–
এমন অনেক সমস্যা আছে যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
Leave a Reply