ফজরের আজান শুনে বিছানায় শুয়ে থাকার আর জো নেই। ঝটপট উঠে চটপট হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে ঢুকে লাচ্ছি, জর্দা, সেমাই, ফিরনি, নুডলস আর চটপটি তৈরির সব উপকরণ সাজাতে মহাব্যস্ত সালমা নাসরিন। এতসব মজাদার খাবার তৈরি করতে করতেই সময় হয়ে যাবে জামাতের, তাই এত তাড়া। ঈদের দিন সকালে বাড়ির গৃহিণীর এ ব্যস্ততা বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপকেই মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু এত ব্যস্ততার পাশাপাশি নিজের সাজটার দিকেও তো একটু নজর দেওয়া চাই। কারণ ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই তো আনন্দ। সে আনন্দ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন কেন? বের করে নিন নিজের জন্য একটু সময়···উৎসবের রঙে সাজিয়ে নিন নিজেকেও।
ঈদের দিন সকালের সাজ কেমন হতে পারে, তা নিয়ে বলেছেন আফরোজা পারভীন। নিজের বিউটি পার্লার পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছেন তিনি। ‘ঈদে আমরা অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠি। ঘুম থেকে উঠেই সেরে নিই গোসলটা। কারণ ঈদের জামাত শুরু হওয়ার আগেই বাড়ির মেয়ে-বউ সবার গোসল হয়ে যাওয়া চাই। এরপর পরে নিই ঈদের নতুন পোশাক। সাধারণত আমরা সবাই ঈদের দিন সকালের জন্য হালকা ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নিই।’
আফরোজা পারভীন জানান, পোশাকে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া-জিনস যেটাই হোক, তার সঙ্গে মিলিয়ে পায়ে দেওয়া যায় দুই ফিতার চটি জুতা। সবাই চান ঈদের খুশি খুশি ভাবটা ফুটে উঠুক তার মধ্যে। পাশাপাশি চেহারায়ও থাকুক সে আনন্দের ছাপটুকু। নিজেকে উৎফুল্ল আর সতেজ দেখানোর জন্য ভারী কোনো মেক-আপের দরকার নেই। মুখটা পরিষ্কার করে খুব হালকা একটা বেইস নেওয়া যায়। বেইস নেওয়ার পর ফেইস পাউডারের আলতো প্রলেপ দিন। চোখে খুব হালকা রঙের শ্যাডো লাগাতে পারেন। পাশাপাশি হালকাভাবে হাইলাইট করতে পারেন যা বোঝা যাবে না, তবে চোখটাকে সুন্দর দেখাবে। যারা কাজল পছন্দ করে, তারা পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চোখের কোলে চিকন করে কাজল টেনে নিন। লাইনারও ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন, লাইনারটা পানিরোধক কি না। অনেকে লাইনার লাগায় না। সে ক্ষেত্রে মাশকারা ব্যবহার করা যায়। মাশকারা লাগানোর পর হালকা ব্লাসন লাগানো যায়। আমরা সাধারণত ঘরে ব্লাসন লাগাই না। তবে ঈদের দিন বলে কথা! যদি লাগাতেই হয়, তাহলে হালকা গোলাপি ব্লাসন লাগানো যায় আলতোভাবে। ব্লাসনটা হালকা হলে এমনিতেই আরও সতেজ লাগবে। পাশাপাশি লিপস্টিক লাগানো যায় ন্যাচারাল টোনের। সেটা ঠোঁটের রংও হতে পারে বা হালকা কোনো রঙের গ্লসও হতে পারে। অথবা শুধু ভ্যাসলিন লাগালেও খারাপ লাগবে না। লিপ লাইনার ব্যবহার না করাই ভালো। এতে আরও বেশি ঘরোয়া দেখাবে।
চুলটা গোসলের পর ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া যায়। ব্লো ডাই করে সারা দিনের জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে অথবা আয়রন করেও খুলে রাখা যেতে পারে। যাদের কাজের চাপ থাকবে, তারা চুল ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে বেঁধে রাখতে পারে। এতে কাজের বিঘ্ন ঘটবে না। আসলে নিজের জন্য কোনটি আরামদায়ক হবে, সেটিই বড় ব্যাপার। ইচ্ছে করলে রান্না শেষ হলে চুলটা খুলেও দেওয়া যায়। পুরোটা মিলেই তো সৌন্দর্য। তাই হাত-পা, ঘাড়, নখের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গোসলের পর হাত-পা ও ঘাড়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেওয়া যায়। যদি সম্ভব হয়, ঈদের আগের দিন রাতে নেইল পলিশ লাগিয়ে নেওয়া যায়। কারণ, ঈদের দিন সকালে খুব একটা সময় পাওয়া যায় না। তবে ইচ্ছে করলে যখন সবাই নামাজে চলে যায়, এ সময়টাকেও কাজে লাগানো যায়। তখন বসে বসে নেইল পলিশটা লাগিয়ে নেওয়া যায়। নেইল পলিশের রংটাও ঘরের হালকা সাজের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। তাই হালকা রংটাই বেছে নেওয়া যায়। ইচ্ছে করলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়েও নেইল পলিশটা লাগানো যায়। ঈদের আনন্দ অনেকটাই অপূর্ণ থেকে যায় মেহেদি-রাঙা হাত ছাড়া। যদি সম্ভব হয়, আগের রাতেই হাত দুটি রাঙিয়ে নিন মেহেদিতে।
উৎসবের দিনে গয়নাটা আর বাদ যাবে কেন? পরা যায় হালকা কিছু। চেইনের সঙ্গে ছোট লকেট গলায় আর কানে ছোট টপ বা রিং। হাতে বেসলেট অথবা চিকন দু-তিনটা চুড়ি পরে নেওয়া যায় পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে। হয়ে গেল ঈদের দিনের সকালের সাজ। এবার স্মিগ্ধ সাজের সঙ্গে প্রাণবন্ত হাসি যোগ করে উপভোগ করুন পুরো ঈদের দিন।
শান্তা তাওহিদা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৫, ২০০৯
Leave a Reply