বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ কোটি লোক দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত। আগামী ২০১০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৪০ কোটিতে উন্নীত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বাংলাদেশেও প্রায় ১ কোটি লোক ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগে ভুগছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অনেকে সিরোসিস, লিভার ফেইলিউর, লিভার ক্যানসারের মতো মারাত্মক লিভার রোগে আক্রান্ত হবে, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগীদের মধ্যে কারা এসব মারাত্মক পরিণতির শিকার হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কষ্টকর। তাই ধরে নিতে হবে যে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগের আক্রান্তের সবাই মারাত্মক লিভার রোগে ভোগার ঝুঁকিতে থাকবে। যেহেতু দীর্ঘ রোগ ভোগের পর এসব রোগী মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তাই রোগাক্রান্তরা পরিবার, সমাজ ও জাতির ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ান। এক দিকে রোগীর চিকিৎসা খাতে যেমন পরিবার ও দেশকে বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করা লাগে, অন্য দিকে রোগীর জীবনে নেমে আসে হতাশা ও চরম ভোগান্তি। যেহেতু ক্রনিক হেপাইটাইটিস বি রোগীর মধ্যে কোনো রকম রোগ লক্ষণ নাও থাকতে পারে। সেজন্য আক্রান্ত রোগ ছড়িয়ে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়ে তুলবে।
হেপাটাইটিস বি রোগের ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা কমাতে এবং সর্বোপরী এ রোগকে নির্মূল করতে রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অনাক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে প্রতিরোধের কার্যকর পন্থাগুলোর সন্ধানে সচেতন করতে হবে। যে কারণে হেপাটাইটিস বি রোগ একজন থেকে অন্যের মধ্যে সংক্রমিত হয় তার প্রতিরোধ এবং হেপাটাইটিস বি টিকার মাধ্যমে বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি রোগের স্বল্পমেয়াদি জটিলতা (যেমন একিউট লিভার ফেইলিউর) এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা (যেমন-লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার) ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব। নবজাতক ও শিশু-কিশোরদের হেপাটাইটিস বি টিকা প্রদানের ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগের প্রকোপ ৮ থেকে ১৫ গুণ কমে এসেছে। এ ছাড়া কার্যকর হেপাটাইটিস বি টিকার ফলে তাইওয়ানে ৬ থেকে ১৪ বছরের ছেলে মেয়েদের মধ্যে লিভার ক্যান্সারে আক্রমণের হার বহুলাংশে কমেছে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য লিভার অসুখ (যেমন ক্রনিক হেপাটাইটিস সি) রোগে বি টিকা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের উপর্যুপরি আক্রমণ প্রতিহত করে মারাত্মক লিভার জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনাকে তিরোহিত করে। সরকার নবজাতক থেকে ২৯ বছর বয়স্ক সব জনসারণের জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি টিকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা আশু প্রয়োজন। হেপাটাইটিস বি টিকার রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী ভূমিকা থাকায় সবাইকে এই টিকা নেয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।
——————-
ডা. মাহবুব এইচ খান
লেখকঃ লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ, সিটি হাসপাতাল, সাতমসজিদ রোড, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১ জুন ২০০৮
Leave a Reply