রমজান মাসে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে আসে বেশ পরিবর্তন। এ সময় দরকার বাড়তি পুষ্টি। সেহ্রিতে কী খাবেন সে নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রান্না বিশেষজ্ঞ সিদ্দিকা কবীর। সঙ্গে থাকল তাঁর দেওয়া সেহ্রিতে খাওয়ার উপযোগী দুটি খাবারের রন্ধনপ্রণালী
তৌহিদা শিরোপা
সারা দিন রোজা রাখতে হবে। এ কথা ভেবে সেহ্রিতে অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এর ফলে অনেক সময় শরীরে অস্বস্তি দেখা দেয়। বদহজম হয়। বমি বমি ভাব হয়। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে সেহ্রিতে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীর। ‘রোজা কোন মৌসুমে হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে সেহ্রির খাবার খাওয়া উচিত। খাবার হতে হবে পুষ্টিসম্মত। সব ধরনের খাদ্য উপাদান আছে-এমন খাবার বেছে নিতে হবে। হালকা ধরনের কম মসলাযুক্ত খাবারই সেহ্রির জন্য উপযুক্ত। বেশি মসলাযুক্ত ভারী খাবার খেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেহ্রির সময় ভাত না খাওয়াই ভালো বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্বদের জন্য। তার পরিবর্তে রুটি, পাউরুটি, খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে মাছ, মাংস, ডাল সবজি-এসব খাবার শরীরে শর্করা ও আমিষের জোগান দেয়। অনেকে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন। তাঁরা দুধে তৈরি যেকোনো খাবার খেতে পারেন। এ ছাড়া দুধের সঙ্গে ফল মিশিয়েও খেতে পারেন। যেমন দুধ-কলা, দুধ-আম খাওয়া যেতে পারে। খাদ্যতালিকায় অবশ্যই যেকোনো মৌসুমি ফল ও সবজি রাখা উচিত। এ ধরনের খাবার যেকোনো বয়সের মানুষই খেতে পারবেন। বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েরা সব ধরনের খাবার খেতে চায় না। তারা পাউরুটি-মাখনের সঙ্গে এক গ্লাস দুধ খেতে পারে। কেননা দুধে সব ধরনের খাদ্য গুণাগুণ আছে। সাধারণত সকালের নাশতায় যে ধরনের খাবার খাই, তাই সেহ্রিতে খাওয়া ভালো। এতে করে খাদ্যাভ্যাসে তেমন একটা পরিবর্তন আসে না। ফলে শরীর ভালো থাকে। রোজায় দীর্ঘসময় পানি খাওয়া খেতে বিরত থাকতে হয়। ফলে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। পানির এই ঘাটতি পূরণের জন্য সেহ্রিতে ঝোল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। মাছ-মাংসের ঝোল, পানি ও দুধের তৈরি খাবার এই পানিস্বল্পতা পূরণে সাহায্য করে। গ্যাস্ট্রিক বা আলসারে আক্রান্ত রোগীরা অবশ্যই তেলেভাজা খাবার এড়িয়ে যাবেন। কম মসলাযুক্ত খাবার খাবেন। কেউ চাইলে খাওয়ার পর আইসক্রিম খেতে পারেন। অনেকের চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে। সেহ্রি খেয়ে এক কাপ চা খেলেও শরীরটা ঝরঝরে লাগবে। ইফতারের পর সেহ্রির খাবার রান্না করা উচিত। বাসি খাবার বা দীর্ঘদিন ফ্রিজে থাকা খাবার খাওয়া উচিত নয়। বেশি গরম না থাকলে খাবার ভালোভাবে ঢেকে বাইরে রেখে দিতে পারেন। চাইলে ফ্রিজেও রাখতে পারেন। খাবারটি অবশ্যই ভালোভাবে গরম করে খেতে ভুলবেন না। ইফতার, রাতের খাবার ও সেহ্রি সময়মতো পরিমিত পরিমাণ খাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে একদমই অনিয়ম করবেন না। যে ধরনের খাবারই খান না কেন, পেট ভরে খাবেন না। পরিমিত পরিমাপে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া উচিত। এমনকি পানিও পরিমিত পরিমাণ পান করা উচিত। এতে শরীর-মন-দুই-ই ঝরঝরে থাকবে। ক্লান্তি ভর করবে না।’ কথাগুলো বলছিলেন সিদ্দিকা কবীর।
জেনে তো গেলেন কী খাবেন এবারের সেহ্রিতে। সুতরাং সেভাবে চলার চেষ্টা করুন। তাহলেই সুস্থ শরীরে নির্মলভাবে কাটবে পুরো রমজান মাস।
দুধ-সাগুতে ভেজানো বাকরখানি
উপকরণঃ দুধ ১ লিটার, সাগু ২ টেবিল চামচ, চিনি ১ কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ, গোলাপ পানি ১ চা চামচ, বাকরখানি ৬-৭টি।
প্রণালীঃ দুধ একবার ফুটিয়ে সাগুদানা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নাড়তে হবে। চুলার আঁচ মাঝারি রেখে একটু পরপর তা নাড়তে হবে। সাগুদানা সম্পূর্ণ চকচকে দেখালে এতে চিনি দিতে হবে। তবে চিনি একবারে না দিয়ে দু-তিনবারে দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর গোলাপ পানি দিয়ে নামিয়ে নিন। পরিবেশন পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিন। পরে বাকরখানিগুলো ওর মধ্যে ভিজিয়ে দিন। এর সঙ্গে কিসমিস বা আম-কলা কুচি করে কেটে পরিবেশন করতে পারেন।
মুরগির মাংস ও ফুলকপির ঝোল
উপকরণঃ মুরগি দেড় কেজির ১টি, ফুলকপির মাঝারি আকারের টুকরা ১০-১২টি, সয়াবিন তেল ১ কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা সিকি কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ, দারচিনি ২ টুকরা, এলাচ ২টি, গোলমরিচ ১০-১২টি, তেজপাতা ছোট ১টি।
প্রণালীঃ তেল গরম করে এতে পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। সামান্য ভেজে নিতে হবে। সব ধরনের মসলা বাটা ও গুঁড়া মসলা এক কাপ পানিতে মিশিয়ে কড়াইয়ে ঢেলে দিন। এরপর এটি ভালোভাবে কষিয়ে নিন। মসলা ভুনা হয়ে তেলের ওপর উঠে এলে এতে মাংস ঢেলে দিন। এরপর ভালোভাবে নাড়াচাড়া করুন। তিন-চার মিনিট কষানোর পর ফুলকপি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভাজতে হবে। স্বাদমতো লবণ দিয়ে নেড়েচেড়ে সেদ্ধ হওয়ার জন্য পরিমাণমতো পানি দিন। এরপর চুলায় ঢেকে মাঝারি আঁচে রাখুন। ফুলকপি ও মাংস সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৮, ২০০৯
Leave a Reply