ইলিশের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে। তার ওপর চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার তাজা রুপালি ইলিশ হলে তো কথাই নেই। আর সেই স্বাদের ইলিশ যদি বিভিন্নভাবে রান্না হয়ে খাবার টেবিলে ওঠে, তাহলে ইলিশপ্রিয়দের মধ্যে সাড়া পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। ইলিশ রান্না প্রতিযোগিতায় প্রায় এমনটাই হয়েছে।
চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে চাঁদপুরের চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় ৯ থেকে ১১ জুলাই তিন দিনব্যাপী ইলিশ উৎসবের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন চাঁদপুরের ২২ জন নারী এককভাবে ইলিশ রান্না প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় ২৩ প্রকারের ইলিশ রান্না করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন চাঁদপুরের সুইটি পোদ্দার নামে এক গৃহবধূ। এ প্রতিযোগিতায় ২২ জনের মধ্যে একমাত্র সুইটি পোদ্দার ২৩ প্রকারের ইলিশ রান্না প্রদর্শন করলে বিচারকেরা তাঁকে শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি নির্বাচিত করেন । বাকি ২১ জনকেও সেরা রাঁধুনি হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
সুইটি জানান, এই প্রথম তিনি এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এ প্রতিযোগিতায় ২৩ প্রকার ইলিশ প্রদর্শন করতে গিয়ে তাঁকে প্রায় আট হাজার টাকার ইলিশ কিনতে হয়। আর তা রান্না করতে আরও দুই হাজার টাকা ব্যয় করেন। এতে তাঁর শাশুড়ি শিখা রানী পোদ্দার, স্বামী বিদ্যুৎ ও তাঁর সহকারী মাধুরী তাঁকে সহায়তা করেন। আগের দিন ইলিশ মাছগুলো কিনে কেটে রাখলেও পরদিন সকালে দুই ঘণ্টা ব্যয় করে প্রতিযোগিতার জন্য ২৩ প্রকার ইলিশ রান্না করেন।
এসব রান্নার মধ্যে রয়েছে টমেটো ইলিশ, কুমড়ো ইলিশ, ইলিশ ভাপা, আনারস ইলিশ, কমলা ইলিশ, লতিকা ইলিশ, কচুমুখি ইলিশ, কাঁচকলা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ইলিশের দোপেঁয়াজি, ইলিশ ঝুরি, কচুর ঝোলে ইলিশ, ইলিশ পটলের দোলমা, তেল ইলিশ, কলমিশাক ইলিশ, চিঁড়া ইলিশ, আতপ চালের ইলিশ, মুগ ইলিশ, মসলা ইলিশ, ঠান্ডা ইলিশ (শসা), কাসুন্দি ইলিশ, বিনা তেলে ইলিশ, ইলিশ মাছের ভর্তা, ইলিশ মাছের চাটনি, ইলিশ পুর, ইলিশ খিচুড়ি, নোনা ইলিশের বড়া, কাঁটা গলানো ইলিশ ও ইলিশ পোলাও।
সুইটি বলেন, তিনি আগে ইলিশ রান্না জানতেন না। ২০০১ সালে এসএসসি পাস করার পর তাঁর বিয়ে হয় চাঁদপুর শহরের ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ পোদ্দারের সঙ্গে। সুইটি জানান, বিয়ের পর শা শুড়ির কাছ থেকে তিনি ইলিশের ৪০ রকমের রান্না শিখেছেন। কিন্তু প্রতিযোগিতার জন্য নয়, রান্নার জন্যই তিনি এ রান্না শেখেন। তবে সেটা এক দিনে নয়, কয়েক বছর লেগেছে।
আলম পলাশ, চাঁদপুর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২১, ২০০৯
Leave a Reply