পায়ের ওপর দিয়ে সবচেয়ে বেশি ধকল যায় বর্ষাকালে। কারণ একটাই-বৃষ্টির পানি, কাদা ও নোংরা পানির ধকলটা সামলাতে পা দুটোর নাকানি-চুবানি খাওয়া। এ জন্যই বর্ষায় নিতে হবে পায়ের একটু বেশি যত্ন।
পায়ের ক্ষতি
নোংরা পানি তো আছেই। অনেকক্ষণ ভিজে থাকার কারণেও পায়ের ক্ষতি হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাশেদ মো· খান জানালেন কিছু সমস্যার কথা। ছত্রাক সংক্রমণ কম-বেশি সবারই হতে পারে এ বর্ষায়। আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ছত্রাক জমে যেতে পারে। চামড়া লাল হয়ে চুলকাতে পারে। চুলকানো জায়গা থেকে পানি ও পুঁজ বের হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। অনেক সময় চামড়া কুঁচকে উঠে যেতে পারে। ভেঙে যেতে পারে নখ। পাশাপাশি সংক্রমণের কারণে কালো ও হলুদ রং হয়ে যায় নখে। ত্বকে সৃষ্টি হতে পারে ফোঁড়া।
টুকটাক যত্ন
পা দুটোর প্রতি যেন আমাদের বেশি অবহেলা। কিন্তু বর্ষায় বরং পায়ের যত্নই বেশি নেওয়া উচিত। পায়ের স্মিগ্ধতার পরশ বজায় রাখতেই কিছু দিকনির্দেশনা দিলেন কিউবেলা হেয়ার অ্যান্ড বিউটির কর্ণধার ফারজানা আরমান।
বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ। বাসায় ফিরে ঝটপট পরিষ্কার হওয়ার পালা। কাপড় পাল্টানোর সময় খেয়াল করুন পায়ের পাতায়। পানির শেষ কণাটুকু মুছে নিন আলতো করে। আঙ্গুলের ফাঁকে যেন না জমে থাকে পানি। কারণ ভিজে পা থেকেই তো যন্ত্রণার শুরু। এরপর লাগিয়ে নিন কোনো ভারী ময়েশ্চারাইজার। এতে পায়ের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
এ ছাড়া এই বর্ষায় নিয়মিত পা পরিষ্কার রাখতে হবে। গরমের কারণে পায়ের পাতার নিচে হিলের দিকে মরা চামড়া হয়ে থাকে। ফলে এ জায়গাটা খসখসে হয়ে যায়। পা ঘষার পাথর দিয়ে ভালোভাবে এ জায়গাটা গোসলের আগেই ঘষে নিন। একদিন পরপর করার ফলে পায়ে মরা চামড়ার আনাগোনা শেষ হয়ে যাবে।
ব্যবহার করা উচিত স্ক্রাবও। ১৫ দিনে একবার না হোক মাসে অন্তত একবার পেডিকিউর সাহায্য করে পায়ের সৌন্দর্য বজায় রাখতে। পারলারে হয়তো সব সময় যাওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে অনায়াসেই করে নেওয়া যায় ঘরোয়া পেডিকিউর।
ফুটন্ত গরম পানিতে কিছু গ্রিন টি ভিজিয়ে নেওয়া হোক প্রথমে। যোগ করা যায় কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল। ১০ মিনিটের জন্য পা দুটো ডুবিয়ে দিন। চোখ বন্ধ করে আরাম করুন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। সারা দিনের ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি পরিষ্কার হবে পা দুটোও। এরপর স্ক্রাব দিয়ে আরেকটু কোমলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন। পা ধুয়ে সবশেষে ভালো একটি ক্রিম ঘষে লাগিয়ে নিন। এখন পায়ের জন্যই বিশেষ লোশন বা ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। বেছে নিন আপনার পছন্দমতো একটি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন হয় ভারী ময়েশ্চারাইজার। এ পদ্ধতি ব্যবহারে পায়ের দুর্গন্ধ অনেকাংশেই দূর হবে। সহজ পদ্ধতি আছে আরও একটি। এ ক্ষেত্রে বেবি শ্যাম্পু অথবা সোডা আছে, এমন একটি শ্যাম্পু প্রয়োজন। গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন। এরপর তাতে পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর একটু ঘষে নিন। ব্যস, আপনার পা পরিষ্কার।
নখের সাতকাহন
বড় নখ অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু এই বর্ষায় পায়ে নখগুলো রাখা যেন কষ্টকর হয়ে পড়ে। নরম হয়ে ভেঙে পড়া বা উঠে যাওয়া স্বাভাবিক একটি ঘটনায় পরিণত হয়। শুধু বর্ষার পানি নয়, খাদ্যাভ্যাসও একটি বড় ভূমিকা পালন করে এখানে। ক্যালসিয়াম আছে এমন খাবারগুলো এ সময় দরকার।
নখের ওপর হয়ে যাওয়া হলদেটে ভাব সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে বাফার দিয়ে ঘষে নখের অনেকের পায়ের নখে কাদা ঢুকে যায়। কোনো কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে কাদা বের করা যাবে না। টুথব্রাশ বা পায়ের ব্রাশ দিয়ে আলতোভাবে ঘষলেই কিন্তু ময়লাটা বের হয়ে আসবে। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি, এ বর্ষায় নখটা না হয় একটু ছোটই থাকুক।
বিরত থাকা উচিত
পায়ের যেকোনো সমস্যায় নিজে ডাক্তারি না করাই ভালো। চিকিৎসক রাশেদ মো· খান জানান, খুব বেশি চুলকালে প্রাথমিকভাবে জলপাই তেল ব্যবহারে আরাম পাওয়া যাবে। পরে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোনো ফোঁড়া হলে না খোঁচানোই ভালো।
চুলকানি হলে যতটা সম্ভব কম চুলকানো উচিত। চুলকানোর ফলে নখের সাহায্যে শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও ছড়াতে পারে সংক্রামকটি।
অনেকের পায়ের চামড়া উঠে যায়। এটা অযথা খোঁচানো ঠিক নয়, নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই উঠে যাবে।
নিজে নিজে কোনো প্রকার ওষুধ খাবেন না, লাগাবেন তো না-ই। হিত তো হবেই না, বিপরীতই হবে।
পেডিকিউরের জন্য অনেক জিনিসই বাজারে পাওয়া যায়। সঠিক ব্যবহার না জেনে ব্যবহার করবেন না।
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে
এই বর্ষায় নোংরা পানি, কাদা, আবর্জনার সঙ্গে চলতে গেলে পা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসবেই। এর থেকে রক্ষা পেতে মাঝেমধ্যেই নিতে পারেন রাশেদ মো· খানের দেখানো দিকনির্দেশনাটি।
এক গামলা গরম পানিতে দু-তিনটা পটাশের দানা ফেলুন। হালকা বেগুনি রং ধারণ করবে। ১০ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। এটি সাহায্য করবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রুখতে।
যাত্রায় সঠিক জুতা
বর্ষাকালে জুতার একটি বড় ভূমিকা আছে। পা বন্ধ জুতাগুলো এ বর্ষায় তুলে রাখুন। বাতাস চলাচল করতে পারবে, এমন খোলামেলা স্যান্ডেল বা জুতাই গ্রহণযোগ্য এখন। কিন্তু অফিসগামী ব্যক্তিদের এ বুদ্ধিটি কোনো কাজে লাগবে না। কারণ তাদের তো ফর্মাল ড্রেস কোডে যেতেই হবে। সে ক্ষেত্রে সুতির মোজা পরুন। বাজারে গন্ধ ছাড়া ট্যালকম পাউডার পাওয়া যায়। মোজা পরার আগে লাগিয়ে নিতে পারেন। দুর্গন্ধ কমে যাবে অনেকাংশে।
জুতা ভিজে গেলে অফিসে যাওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য হলেও খুলে রাখুন। পা ও জুতা দুটোই শুকিয়ে নিন।
চামড়ার জুতা বা স্যান্ডেল পরতে অভ্যস্ত অনেকেই। এ বর্ষায় চামড়া ভালোভাবে ট্যান করা হয়েছে, এমন জুতা আবশ্যক।
তবে চামড়ায় ব্যবহৃত আঠা থেকেও অনেক সময় চর্মরোগ হয়। সে রকম কোনো কিছু দেখা গেলে জুতা পরিবর্তন করুন। রাবারের স্যান্ডেল থেকেও অনেকের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবধানতা ও সচেতনতা দুটোই কাম্য। পিছলা রাস্তাঘাটের জন্য মানানসই জুতা কেনা দরকার।
রয়া মুনতাসীর
কৃতজ্ঞতাঃ হারমনি স্পা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৪, ২০০৯
Leave a Reply