ঘড়ির কাঁটা সবে নয়ের ঘর ছুঁয়েছে। অভিভাবকের হাত ধরে শিশুরা প্রবেশ করতে থাকে গেটের ভেতর। প্রথমেই শুরু হয় ছোটদের ছবি তোলার কাজ। ছবি তোলার পালা শেষ হতে না হতেই যেন ঢুকে পড়া আনন্দরাজ্যে। আর এভাবেই তাদের হাসি, আনন্দের পদধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রাঙ্গণ।
২৯ মে পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য পরামর্শক সংস্থা রেসস্কেচ আয়োজন করে ‘ডানো কিডজ ডে ক্যাম্প’। শহরের এই যান্ত্রিক জীবনে শিশুদের বিনোদনের অবকাশ খুব কমই মেলে। তাই এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত করা হলে তা শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করেন এ আনন্দ আয়োজনে আসা অভিভাবকেরা।
দুটি পর্বে বিভক্ত এ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব চলে সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্ব চলে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। চাঁদের বুড়ি, ভাগ্য গণনা, বানর নাচ, গল্প বলার আসর, মার্বেল খেলা, সাপলুডু খেলা, বায়োস্কোপ, নিউটনের সূত্র, বায়ু চাপের পরীক্ষা, পুতুল নাচসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয় এ ক্যাম্পে। সাধারণত শহরে বেড়ে ওঠা শিশুরা লোকজ সংস্কৃতির আমেজ থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের কাছে এ বিষয়গুলো পরিচিত করে তুলতেই রেসস্কেচের এ আয়োজন। প্রতিটি পর্বেই শিশুদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। কেমন লাগছে এখানে এসে জিজ্ঞেস করতেই ছোট্ট সেতু বলল, ‘খুবই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আজকে ঈদ।’ শুধু শিশুরাই নয়, অভিভাবকেরাও যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁদের শৈশবে। শিশুদের সঙ্গে মিশে করছিলেন আনন্দ-ফুর্তি। ‘ছোটবেলায় টিয়া পাখি দিয়ে ভাগ্য গণনার জন্য মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যেতাম গুলিস্তান। এ গল্প অনেকবার করেছি ছেলের কাছে। এখানে এসে ছেলেকে দেখালাম টিয়া পাখি দিয়ে কীভাবে ভাগ্য গণনা করা হয়।’ বললেন অভিভাবক কাজী জামির। আর ছেলে আমের বলল, ‘সবকিছুই আজকে প্রথম দেখছি। তাই সবই ভালো লাগছে। তবে জায়গাটা খোলা মাঠ হলে বেশি ভালো লাগত।’ রেসস্কেচের প্রধান নির্বাহী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘শহরের ছেলেমেয়েরা সব সময়ই প্রতিযোগিতার চাপে ব্যতিব্যস্ত থাকে। কোনো নির্মল বিনোদনের সুযোগ তারা পায় না। দেশীয় লোকজ সংস্কৃতিও তাদের কাছে অপরিচিত। তাই দেশীয় লোকজ সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রতিযোগিতাহীন একটি হাসি-খুশি আনন্দময় দিন তাদের উপহার দেওয়ার জন্যই আমাদের এ আনন্দ আয়োজন। আমরা ধারাবাহিকভাবে এখন থেকে প্রতি মাসে একবার এ উৎসবের আয়োজন করব।’ ভবিষ্যতে খুব বড় পরিসরে এ আনন্দ উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা আছে বলে তিনি জানান। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল পুতুল নাচ ও সিংহ নৃত্য। এ ছাড়া শিশুরা চাঁদের বুড়ির সঙ্গে চরকা কেটে, গালে আলপনা এঁকে, বানরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, ডানো টেডি বিয়ারের সঙ্গে ছবি তুলে কাটাল একটি আনন্দঘন দিন। এসবের পাশাপাশি ছিল ছোটদের জন্য বইমেলা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এ উৎসবে শিশুদের ঘুড়ি বানানো, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি শেখায় বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন। আর অণুসন্ধিৎসু চক্র দেখায় বিজ্ঞানের নানান মজার প্রকল্প। ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির সহযোগী ছিল মেকার, পৃষ্ঠপোষক আর্লা এবং রেডিও সঙ্গী এবিসি।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০২, ২০০৯
Leave a Reply