শাকসবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করার জন্য রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। কীটনাশক মানবদেহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। কীটনাশক প্রয়োগের ২১ দিনের মধ্যে গাছ থেকে শাকসবজি সংগ্রহ করলে দেহে প্রত্যক্ষভাবে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে এবং ২১ দিন পর সংগৃহীত শাকসবজি পরোক্ষভাবে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। বাজারে যত শাকসবজি ওঠে, এর প্রায় সবই কীটনাশক প্রয়োগ করা। কীটনাশক প্রয়োগ করা শাকসবজি খেলে বিভিন্ন রকম রোগ যেমন-ক্যান্সার, অন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুসজনিত রোগ, প্রজনন হ্রাস, বমি, মাথাঘোরাসহ জটিল রোগ হয়। তবে রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়াও অরাসায়নিক পদ্ধতিতে পোকামাকড় রোগবালাই দমন করা যায়, যা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত।
সব শাকসবজির জন্য
চারা অবস্থায় সব শাকসবজির চারার গোড়া ফিল্ড ক্রিকেট ও কাটুই পোকারা কেটে দেয়। এই পোকা দমন করার জন্য হালকা সেচ দিলে পোকা মাটির ভেতর থেকে ওপরে উঠে এলে কাস্তে, লাঠি, হাত বা পা দ্বারা মেরে ফেলা যায়। সেচ দেওয়া সম্ভব না হলে মাটির গর্তে পানি ঢাললে পোকা এমনিতে মাটির ওপর উঠে আসে। তখন চারার গোড়া কাটার সময় মারতে হবে। মাটির গর্তে কেরোসিন ঢেলেও পোকা মারা যায়।
২. গোড়াপচা রোগে চারার গোড়া পচে গাছ মারা যায়।
দমন-পদ্ধতিঃ অতিরিক্ত সেচ দেওয়া যাবে না। সেচ দেওয়ার পর মাটির স্তর ভেঙে মাটি শুকাতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ জমি থেকে তুলে অন্যত্র ফেলে দিতে হবে।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, শালগম, গাজর ও ব্রকলিতে পোকা, প্রজাপতি এসব সবজির পাতা ও ডগা খায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফুলকপি ও বাঁধাকপির মাথা ছোট হয় বা বাঁধে না।
বনগাজর, সরিষা, শালগম-এসব উদ্ভিদ এই সবজিক্ষেতে রাখা যাবে না। হাত জাল দ্বারা ধরা যাবে । আঠা লাগিয়ে আটকানো যায়।
লাউ, মিষ্টিকুমড়া, রেড পাম্পকিনে বিটল পোকা ফুল, ফল, পাতা, কচিডগা গর্ত করে খায়।
ছাই ছিটিয়ে সাময়িক দমন করা যায়। হাত দিয়ে ধরে মারা যায়। মাছি ও পোকারা কচি সবজি ছিদ্র করে ডিম পাড়ে।
হাতজাল ও ফাঁদের সাহায্যে এই পোকা আটকানো যায়।
ফলছেদক পোকা-বেগুন ও টমেটো কচি অবস্থায় ছিদ্র করে রস খায়। ফলে টমেটো নষ্ট হয় বা পচে যায়। এর লার্ভা কচি ডগাও খায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আক্রান্ত ডগা ও ফল ছিঁড়ে কিড়া মারতে হবে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ছাই ছিটিয়ে, আলোর ফাঁদ দিয়ে ও হাত জল দিয়ে মাছি আটকানো যায়। কাজলা ও ঝুমকা জাতের বেগুনে এ পোকা আক্রমণ করে না বলে এগুলো চাষ করা উচিত।
শিম, বরবটি, ফরাসি শিম, মটরশুঁটিঃ জাবপোকা এসব সবজির ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। এতে ফলন খুব কম হয়। ঝাঁক ধরে গাছের কচি ডগায় বসে রস খায়।
লেডিবার্ড বিটল, টাইগার বিটল নামক শিকারি পোকা গাছে রাখা। এরা জাবপোকা। এরা লার্ভা খায়। ছাই ছিটিয়ে, পানি স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
ফলছেদক পোকারা শিমের কুঁড়ি, ফুল ও ফল খেয়ে ছিদ্র করে ভেতরে ঢোকে। ভেতরে ঢুকেও ফল খায় এবং মল ত্যাগ করে।
আক্রান্ত শিম তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা। শুককীট পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়।
রেড মাইট গাছের পাতা ও ফুলের কুঁড়ি থেকে রস চুষে খায়।
গাছ তুলে পুড়ে ফেলা। সঠিক দূরত্বে গাছ রোপণ করা।
ফরহাদ আহাম্মেদ
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৬, ২০০৮
Leave a Reply