মৃগীরোগ মস্তিষ্কের জটিলতাজনিত স্নায়বিক একটি রোগ। মস্তিষ্কের অতি সংবেদনশীলতা এর জন্য দায়ী। কারও মধ্যে বারবার খিঁচুনির উপসর্গ দেখা দিলে তার মৃগীরোগ হয়েছে বলা যায়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের টিউমার, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত ও রক্তপাত, রক্তশিরায় সমস্যা, সংক্রমণ, মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, মানসিক প্রতিবন্ধিতা, অ্যালঝেইমার, নেশাজাতীয় ওষুধ সেবন; শরীরের লবণ, ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ হ্রাস পাওয়া এবং ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের শর্করার অতি আধিক্য বা স্বল্পতা থেকেও খিঁচুনি হতে পারে।
একজন মৃগীরোগী হঠাত্ করে মারাত্মক উপসর্গে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন: শরীর শক্ত বা টান টান হয়ে হঠাত্ অজ্ঞান হয়ে পড়া, শিথিল হয়ে ঢলে পড়া, শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া, হঠাত্ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত, পা ও মুখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া ইত্যাদি। সাধারণত খিঁচুনি থামার পর রোগী দীর্ঘ সময়ের জন্য অচেতন থাকে। খিঁচুনির সময় দাঁতে জিব কাটা বা প্রস্রাব বা মলত্যাগের মতো ঘটনাও হতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়া উচিত। একইভাবে মৃগীরোগীর স্বজন বা বন্ধুদেরও জানা উচিত আক্রান্ত হলে কী করতে হবে।
১. শান্ত থাকুন, অস্থির বা আতঙ্কিত হবেন না। অধিকাংশ খিঁচুনি অল্প সময় পরই থেমে যায়। তাই অপেক্ষা করুন।
২. রোগীর শরীর থেকে বেল্ট, টাই, চশমা ইত্যাদি খুলে দিন, পোশাক ঢিলে করে দিন।
৩. রোগী যাতে শক্ত মেঝেতে পড়ে গিয়ে আঘাত না পায়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। মাথার নিচে কুশন বা বালিশ দিন। কিছু না পাওয়া গেলে ভাঁজ করা কাপড়চোপড় বা সাহায্যকারীর হাত ব্যবহার করা যায়।
৪. রোগীকে আগুন, পানি, যন্ত্র, তীক্ষ্ম ধারালো বা শক্ত বস্তু থেকে দূরে রাখুন।
৫. খিঁচুনি বন্ধ হওয়ার পর রোগীকে কাত করে দিন, মুখের ফেনা পরিষ্কার করে দিন।
৬. রোগীর মুখে চামচ বা অন্য কিছু দেওয়া যাবে না। নাকে চামড়ার জিনিস, জুতা ইত্যাদি ধরলে তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফেরে—এটা ভুল ধারণা। রোগীর মাথায় বা চোখে-মুখে পানি দেওয়া বা হাত-পা চেপে ধরারও দরকার নেই। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত পানি বা অন্য কিছু জোর করে খাওয়াতে যাবেন না।
মনে রাখবেন, মৃগীরোগের সফল ও সুচিকিত্সা আছে। চিকিত্সা করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। তাই বিজ্ঞানসম্মত চিকিত্সা নিন।
ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস
Leave a Reply