পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ খুশকির যন্ত্রণায় জর্জরিত। বাজারের বা বিজ্ঞাপনের খুশকিনাশক সব ধরনের শ্যাম্পু বা দাওয়াই ব্যবহার করেও ফল হয় না। বাইরে গেলে বিব্রত হতে হয়, বিশেষ করে অফিসে-মিটিংয়ে-পার্টিতে সাজপোশাকের বারোটা বাজিয়ে দেয় মাথায় ভাসতে থাকা সাদা সাদা খুশকি।
খুশকি বা ড্যানড্রাফ আসলে আমাদের মাথার ত্বকের মৃত কোষ। আমাদের দেহের সব জায়গার ত্বকে প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরোনো মৃত কোষ নির্দিষ্ট সময় পর ঝরে পড়ে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারও কারও এই নতুন কোষ তৈরি হওয়া এবং মৃত কোষ ঝরে পড়ার হারটা বেশি। এই মৃত কোষগুলো সাদা গুঁড়োর মতো চুলে লেগে থাকে। অনেক সময় এর কারণে মাথা চুলকায়, মাথার ত্বক লাল হয়ে যায়।
খুশকি যদিও একটি স্বাভাবিক ঘটনা বা প্রক্রিয়া, কিন্তু নানা কারণে এটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত শুষ্ক ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত—দুই ধরনের ত্বকেই খুশকি বেশি হয়। নিয়মিত শ্যাম্পু না করার কারণে মাথার ত্বকে ময়লা জমাও একটি কারণ। সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত হেয়ার জেল, তেল, সেপ্র ইত্যাদির ব্যবহার খুশকির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। যাঁরা খুব ঘামেন, তাঁদেরও এটি বেশি হয়। স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তাও খুশকি বাড়ায়।
খুশকি ঠেকাতে যা করবেন
—নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখলে এবং প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে তৈলাক্ততা অনেক কমে আসে ও কোষ মৃত্যুর হারও কমে যায়। খুশকি কমাতে দুশ্চিন্তা কমান, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, জিংক ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার এই প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। চুলে অতিরিক্ত স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদি ব্যবহার করা ভালো নয়।
—সাধারণ যত্নে কাজ না হলে খুশকিনাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। বিভিন্ন ধরনের খুশকিনাশক শ্যাম্পু আছে, কোনটা আপনার ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে, তা খুঁজে পেতে হযতো আপনার সময় লাগবে। জিংক পাইরিথিয়ন, টার-সমৃদ্ধ, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, সেলেনিয়াম সালফাইড, কিটোকোনাজল—এর যেকোনো একটি ব্যবহারে খুশকি কমবে। প্রথমে প্রতিদিন বা এক দিন পর পর এ ধরনের মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, নিয়ন্ত্রণে চলে এলে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন। পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে এলে আবার সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
ডা. এম মনিরুজ্জামান খান
চর্ম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।
Leave a Reply