৪০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমরে ব্যথা বা ব্যাকপেইনে ভুগে থাকেন। মেরুদণ্ডের হাড়, সংযোগকারী তরুণাস্থি, লিগামেন্ট, মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের ভেতর স্নায়ুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড—এসবের যেকোনো সমস্যায় ব্যথার উৎপত্তি ঘটে। মেয়েদের ডিম্বাশয় ও জরায়ু এবং পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যায় এবং যে কারও কিডনির জটিলতায় কোমর ব্যথা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। হাড় ক্ষয়, হাড়ে সংক্রমণ বিশেষ করে যক্ষ্মা বা ক্যানসারও হতে পারে কোমর ব্যথার উৎস।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোমরের মেরুদণ্ডের আশপাশের লিগামেন্ট বা মাংসপেশিতে টান পড়ার কারণে আকস্মিক কোমর ব্যথা দেখা দেয়। ভারী কাজ করতে গিয়ে বা ওজন বহন করতে গিয়ে কিংবা অজান্তে বেকায়দায় কিছু করতে গিয়ে এই সমস্যার উদ্ভব হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক দিনের পূর্ণ বিশ্রাম ও কিছু ব্যথানাশক বা পেশি শিথিল করে এমন ওষুধই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য যথেষ্ট।
তবে ব্যথা কোমর ছাড়িয়ে নিচে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়লে তা কোমরের হাড় সরে যাওয়া বা স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করাকে নির্দেশ করে। নানা ধরনের আথ্রাইটিস, স্পনডাইলাইটিস কোমর ব্যথার সাধারণ কারণ। শোয়া-বসার বা কাজ করার সময় অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গি, ওজনাধিক্য, গর্ভাবস্থা, মানসিক চাপসহ আরও নানাবিধ কারণ থাকতে পারে কোমর ব্যথার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন নেই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও।
কিন্তু লাল পতাকা উপসর্গ থেকে থাকলে কোমর ব্যথাকে অবশ্যই আমলে নিন ও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যথার উৎস খুঁজে বের করুন।
– বয়স ২০ বছরের কম বা ৫৫ বছরের বেশি
– বয়স্ক ব্যক্তিদের
– আকস্মিক প্রচণ্ড ব্যথা
– ব্যথা সার্বক্ষণিক ও ধীরে ধীরে বাড়ছে
– রাতে বা বিশ্রামের সময়ও কমছে না
– সঙ্গে জ্বর, ওজন হ্রাস বা রাতের বেলা ঘাম হওয়া
– ক্যানসারের ইতিহাস
– পেটে কোনো চাকা অনুভূত হওয়া
– সকালে কোমরে জড়তা
– প্রস্রাব বা মলত্যাগে সমস্যা
– পায়ে দুর্বলতা
– স্টেরয়েড ওষুধ সেবনকারী, দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ইতিহাস বা এইচআইভি পজিটিভ রোগী।
ডা. মৌসুমী মরিয়ম সুলতানা
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৬, ২০১৩
Leave a Reply