ঋতু বদলের এই সময়ে অনেকেরই জ্বর আসে। জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, অরুচি, হালকা সর্দি-কাশি ইত্যদি এসব জ্বরের প্রধান উপসর্গ। কিন্তু জ্বরের সঙ্গে যদি শরীরে র্যাশ বা ত্বকে ছোট লাল দানা দেখা দেয়, তবে তা ভীতির কারণ হতে পারে। জ্বরের ধরন-ইতিহাস, অন্যান্য উপসর্গ-লক্ষণ বিশ্লেষণ, বিশেষ করে র্যাশের প্রকৃতি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। র্যাশ বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন লালচে ছোপ, দানাদার যা আঙুলে অনুভব করা যায়, লালচে ছোপ-দানাদার মিশ্র, পুঁজবিহীন বা পুঁজযুক্ত গুটি বা ফুসকুড়ি। এগুলো আকারে ১-৯ মিলিমিটার এবং বিভিন্ন রঙের হতে পারে। রোগ অনুযায়ী জ্বরের সঙ্গে র্যাশ দেখা দেওয়ার সময় এবং স্থানে ভিন্নতা থাকতে পারে।
ডেঙ্গু: বর্ষা মৌসুমে আমাদের দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এতে মাথা-চোখ-শরীর ব্যথার সঙ্গে জ্বর দেখা দেওয়ার পর পরই সারা দেহে ছোট ছোট লালচে দানা বা ছোপ দেখা দিতে পারে।
হাম: শিশু ছাড়াও যেকোনো বয়সে হাম হয়। কাশি, চোখের লালচে ভাব, সর্দি ইত্যাদি উপসর্গের পাশাপাশি জ্বর শুরুর তিন-চার দিন পর লালচে ছোপ বা লালচে ছোপ-দানাদার মিশ্র র্যাশ দেখা দেয়, যা মাথা ও গলা থেকে শুরু হয়ে শরীর-হাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং চার থেকে ছয় দিন স্থায়ী হতে পারে।
রুবেলা: ভাইরাসজনিত এ সমস্যার লক্ষণগুলো হামের মতো। তবে তীব্রতা মৃদু এবং র্যাশ দুই-তিন দিন স্থায়ী হয়। সাধারণত এতে লসিকা গ্রন্থিও ফুলে যায়।
ওষুধজনিত: বিভিন্ন ওষুধের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় জ্বরসহ দেহে দানা বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
স্কারলেট জ্বর: জ্বর, গলাব্যথা, বমি এবং স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণুজনিত গলার প্রদাহ পরবর্তী টক্সিন-সৃষ্ট একটি রোগ স্কারলেট জ্বর। এতে সারা দেহে উজ্জ্বল লালচে বর্ণের র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণত জ্বর শুরুর দু-তিন দিন পর মুখে ও শরীরে দেখা দেয়। কম বয়সীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়।
ইনফেকশাস মনোনিউক্লিওসিস: কিসিং ডিজিস হিসেবে পরিচিত ভাইরাসজনিত এ রোগ লালা, হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। সব বয়সে দেখা দেয় এবং জ্বরের সঙ্গে বিভিন্ন আকারের লালচে-ছোপ সারা শরীরে পাওয়া যায়।
জলবসন্ত: জ্বর, গলাব্যথা, মাথা-শরীরব্যথা শুরুর দু-তিন দিন পর লালচে আভার ওপর ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে আসে।
হারপেস জসটার: বয়স্কদের বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ভেরিসেলা জসটার নামক ভাইরাস সুপ্তাবস্থা থেকে পুনরায় আক্রমণ করে। শুরুতে স্নায়ুর বিস্তৃতি বরাবর এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বুকে ও মুখের এক পাশে তীব্র জ্বালাপোড়া ও লালচে র্যাশ হয়, পরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া বেশ কিছু জটিল রোগে র্যাশসহ জ্বর হতে পারে, যেমন: মেনিনজাইটিস, টাইফয়েড, ভাসকুলাইটিস, একজিমা, সেলুলাইটিস, এসএলই, আইটিপি, টক্সিক শক সিনড্রোম ইত্যাদি।
বেশির ভাগ র্যাশ জ্বর সেরে যায় সঙ্গে সঙ্গে। এ জন্য আলাদা চিকিৎসার দরকার হয় না। তবে অতিরিক্ত চুলকানি থাকলে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যায়। এই সব দানা কখনোই নখ দিয়ে চুলকানো বা আঁচড়ানো উচিত নয়, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। ত্বক পরিচ্ছন্ন ও আর্দ্র রাখতে হবে।
ডা. নাজমুল কবীর কোরেশী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৩
Leave a Reply