বর্ষা শেষ, কিন্তু শেষ হয়নি ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। যত দিন বৃষ্টি-বাদলা থাকবে, মানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত রয়ে যাবে ডেঙ্গু। এই ডেঙ্গু জ্বর ও এর চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি অনেক চিকিৎসকের মনেও রয়েছে নানা বিভ্রান্তি ও ভীতি। ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর দশটা সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের মতোই এই জ্বর নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর প্রায় কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়। খুব অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে এ থেকে কিছু জটিলতা হতে পারে, যা একটু সচেতন থাকলেই এড়ানো সম্ভব।
ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেট?
প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা হলো রক্তের এক ধরনের ক্ষুদ্র কণিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে আমাদের সাহায্য করে। স্বাভাবিক মানুষের রক্তে অণুচক্রিকার হার প্রতি ডেসিলিটারে দেড় লাখ থেকে চার লাখ। ডেঙ্গু জ্বর হলে এই অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যেতে পারে। কিন্তু এটি কমে গেলেই যে তা মারাত্মক ব্যাপার বা রক্ত বা প্লাটিলেট দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
দেখা গেছে, প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজার পর্যন্ত নামলেও রোগীর মারাত্মক কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এর নিচে বা এর সঙ্গে নাক, দাঁত বা অন্য কোনো স্থান থেকে রক্তপাত হলে বা রোগী ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে চলে গেলে খুবই সীমিত কিছু ক্ষেত্রে প্লাটিলেট দেওয়ার প্রশ্ন আসে। মনে রাখবেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসা হচ্ছে প্রচুর পানি ও তরল গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং লক্ষণ বুঝে তা নিরাময়ের চেষ্টা। যেমন: জ্বর বা ব্যথা হলে প্যারাসিটামল এবং বমি হলে বমির ওষুধ ইত্যাদি। প্লাটিলেট বা রক্ত দেওয়া কখনোই ডেঙ্গুর মূল চিকিৎসা নয়।
কখন প্লাটিলেট গণনা?
এই সময়ে জ্বর হলে বা জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা বা র্যাশ থাকলেই রোগীরা রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে ছোটেন। কোনো কোনো রোগী আবার একই দিনে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা করে দেখেন। তারপর প্লাটিলেটের সংখ্যা কম হলে আতঙ্কিত হয়ে প্রতিদিন বা কেউ কেউ দিনে দুবার করে পরীক্ষা করতে থাকেন। এ সবই ভুল। ডেঙ্গু জ্বরে জ্বর আসার পাঁচ দিনের আগে প্লাটিলেট কমার কথা নয়। পরীক্ষা করতে হলে পঞ্চম দিন বা তার পর করতে হবে। তাড়াতাড়ি এটি কমতে থাকে না, ধীরে কমে। তাই রোজ বা দুই বেলা করে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। একবার দেখার পর কম থাকলেও অন্তত ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর পরীক্ষাটি পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে। আমাদের শরীর প্রয়োজনের সময় দ্রুত প্লাটিলেট বিভাজন করতে সক্ষম। তাই একই দিনে দুটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রে দুই রকম সংখ্যা পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
প্লাটিলেট কমলেই ডেঙ্গু?
রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা কেবল ডেঙ্গু জ্বরেই নয়, আরও নানা ভাইরাস জ্বরেও কমতে পারে। এমনকি বিভিন্ন ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়ও সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে। তবে সাধারণ ভাইরাস জ্বরে প্লাটিলেটের সংখ্যা এত কমে না, বড়জোর ৯০ হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত কমে। আর ডেঙ্গুতে এটি ৫০ হাজারের নিচে প্রায়ই চলে যায়। সেটা অবশ্যই সাময়িক এবং আপনি যদি সুস্থ-সমর্থ ব্যক্তি হন, তবে একে মোকাবিলা করার যথেষ্ট রসদ আপনার দেহেই আছে। জ্বর হওয়ার সাত থেকে আট দিনের মাথায় এই সংখ্যা এমনিতেই বাড়তে থাকে এবং সাধারণত আর কমে না। তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না, প্রচুর তরল পান করুন, বিশ্রাম নিন।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২১, ২০১৩
Leave a Reply