পরীক্ষার দিন সকালে উঠে দু-দুবার বমি। তার পর শুরু হলো বুক ধড়ফড়ানি আর জিব শুকিয়ে আসা। কয়েকবার পানি খেয়েও লাভ হলো না। পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে যখন পৌঁছালেন, তখন রীতিমতো পা কাঁপছে। যা কিছু জানেন, এ অবস্থায় তাও ভুলে যাচ্ছেন। এভাবে কী পরীক্ষা দেওয়া যায়?
উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনে নির্দিষ্ট মাত্রার উদ্বেগ প্রয়োজনীয়ও বটে। দুশ্চিন্তা একেবারে না থাকলে কাজে উদ্যম থাকে না, লক্ষ্যপূরণের প্রস্তুতিও যথাযথ হয় না। পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বা চিন্তাই যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার চালিকাশক্তি। পরীক্ষা নিয়ে যার কোনো ভাবনাই নেই, সে তো প্রস্তুতিই নেবে না ঠিকভাবে। কিন্তু পরীক্ষার এই ভাবনা যখন স্বাভাবিকতার সীমা অতিক্রম করে চরম দুর্ভাবনা আর অতিরিক্ত উদ্বেগে রূপ নেয়, মানসিক চাপ বিপর্যস্ত করে তোলে পরীক্ষার্থীকে, সেটা তখন নেতিবাচক। কোনো বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা যখন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে, তখন তা রোগের পর্যায়ে পড়ে।
উদ্বেগজনিত রোগ বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির নানা শারীরিক-মানসিক উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন: মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, জিব শুকিয়ে যাওয়া, গিলতে কষ্ট হওয়া, ঘাড়ে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, পেট ফাঁপা, বারবার প্রস্রাব হওয়া, বেশি ঘাম, নেতিবাচক চিন্তা, ভুলে যাওয়া, অমনোযোগিতা, একই ভাবনার পুনরাবৃত্তি প্রভৃতি। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উদ্বেগের কারণগুলোকে হয়তো পুরোপুরি উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়, কিন্তু এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। স্বাস্থ্যকর আহার করুন, প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন। নিজের জন্য আলাদা কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন। প্রিয় বা ভালো লাগা কোনো কাজে (যেমন: গান শোনা, বই পড়া, বাগান পরিচর্যায়) সময় দিন। সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনের লক্ষ্য স্থির করুন। অবাস্তব লক্ষ্যের পেছনে ছুটবেন না। সব সময় অন্যের সঙ্গে নিজেকে বা সন্তান ও প্রিয়জনকে তুলনা করবেন না। দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক করুন। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখুন। ধূমপান ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকুন। দুশ্চিন্তার সময়ে রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়ন করতে পারেন। প্রচণ্ড কাজ বা চাপের মধ্যেও অবসর সময় বের করে উপভোগ করুন। কাছের মানুষের সঙ্গ নিন।
ডা. মুনতাসীর মারুফ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২১, ২০১৩
Leave a Reply