দৈনন্দিন জীবনে অনেক ঝুঁকি এড়ানো যায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জীবনের কিছু অভ্যাস ও চর্চা অনেক সময় ক্যানসারের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এসব ঝুঁকি সহজেই এড়ানো সম্ভব।
খাবারে চর্বি কম, খুবই কম গ্রহণ করুন
চর্বিবহুল খাবার খেলে স্তন, মলান্দ্র ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেজায় বাড়ে। চর্বি থেকে ক্যালরি আহরণ, বাড়বে শরীরের ওজন, আর ব্যায়াম যদি না করেন, তাহলে আরও। দুধজাত দ্রব্য থেকে চর্বি কেটে ফেলুন, খাবারে কচি মেদহীন মাংস, মাছ থাকবে। ছাল ছাড়িয়ে তবে খাবেন চিকেন। চিনি ভরপুর মিষ্টি, মিঠাই, প্যাস্ট্রি বাদ দিন খাবারের তালিকা থেকে।
আচার কম খাবেন, বারবিকিউ করা নোনা খাবার বর্জন করা উচিত
এসব খাবার বেশি খেলে গলনালি ও পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। যেসব দেশে বেশি বেশি আচার, বারবিকিউ করা খাবার ও নোনা খাবার খাওয়া হয়, সেসব দেশে এসব ক্যানসার জনগণের মধ্যে বেশি। তাই আচার, নোনা খাবার যেমন নোনা ইলিশ, শুঁটকি, মাংস—এসব কম খেলেই মঙ্গল।
ধূমপান বর্জন করা উচিত
ক্যানসারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো ধূমপান। ফুসফুসের ও মূত্রথলির ক্যানসারের বড় কারণ। আর ঘরের ভেতর ধূমপান আরও বড় সর্বনাশের কারণ, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে ঘরের সবারই শ্বাসযন্ত্রের অসুখ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে অনেকটাই। গর্ভবতী নারী ধূমপান করলে গর্ভের সন্তানের অনেক অনেক ক্ষতি হয়।
পান, জর্দা, গুল, তামাক চিবানো বর্জন করা উচিত
জর্দা, গুল, তামাক এমনকি পানমসলা চিবানো অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে কেবল দাঁত ও মাড়িই যে ক্ষয়ে যায় তা-ই নয়, মুখগহ্বর, গলদেশ, অন্ননালি, ফুসফুস, পাকস্থলীর ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
মদ্যপানও বর্জন করা উচিত
অনেকে মদ্যপান কম করার প্রতিজ্ঞা করলেও অনেকেই এতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং আকণ্ঠ মধ্যপানে অভ্যস্ত হন নিয়মিত। বেড়ে যায় যকৃতের ক্যানসার ও সিরোসিসের মতো ভয়ংকর রোগের ঝুঁকি। ধূমপান ও মদ্যপান একত্রে চললে মুখগহ্বরের, গলদেশের স্বরযন্ত্রের ও গলনালির ক্যানসারের ঝুঁকি খুব বেশি বেড়ে যায়। মদ্যপান বর্জন করাই মঙ্গল।
পূর্বাহ্নে আবিষ্কার, আগাম নিদান
সূচনালগ্নে চিহ্নিত হলে ক্যানসার নিরাময়যোগ্য। তাই বছরে অন্তত একবার নিয়মিত চেকআপ হওয়া উচিত। এসব পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত। পারিবারিক চিকিৎসকের সাহায্য নিন। দর্শন করতে পারেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞকেও।
এ দেশে ক্যানসার বাড়ছে। ক্যানসার হতে পারে যেকোনো বয়সে। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সম্ভাবনা বেশি।
সাতটি সতর্কসংকেত খেয়াল করুন
মলের অভ্যাসে বা প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন
একটি ক্ষত শরীরে হয়েছে যা সারছে না
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা স্রাব
স্তনে বা অন্যত্র কোনো গুটি বা স্ফীতি বেড়ে যাওয়া
বদহজম বা গিলতে অসুবিধা
আঁচিল বা তিলে সুস্পষ্ট পরিবর্তন
অবিরাম কাশি বা গলা খুসখুস বা স্বরবদল
এসব উপসর্গ হলে সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ চাই।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ০৯, ২০১৩
Leave a Reply