খুব ছোটবেলায় বাচ্চাদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিলে পরবর্তী জীবনে টাইপ ১ ডায়েবেটিসের ঝুঁকি কমানো যায়। এ নিয়ে অনেকগুলো গবেষণা বিশেস্নষণ করে ব্রিটিশ গবেষকরা তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ পেলেন যে, এই ভিটামিনের সাপ্লিমেন্টের সঙ্গে ডায়েবেটিসের ঝুঁকি হ্রাসের রয়েছে যোগাযোগ।
‘আর্কাইভস অব ডিজিজ ইন চাইল্ডহুড’ জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ডাঃ ক্রিস্টোস জিপিটিস নামে শিশু বিশেষজ্ঞ ও মুখ্য গবেষক দেখিয়েছেন জন্ম থেকে শুরু করে যেসব শিশুকে কিছুকাল ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট দেয়া হলো এবং যাদেরকে ১৫-৩০ বছর পর্যন্ত অনুসরণ করা হলো, এদের মধ্যে ডায়েবেটিসের ঝুঁকি কমেছে ২৯%। সাপ্লিমেন্টের পরিমাণ ১০ মাইক্রোগ্রাম বা ৪০০ আইইউ। শিশুদের মাল্টিভিটামিনে তেমন পরিমাণ ভিটামিন-ডি-ই থাকে।
৬,৪৫৫ জন শিশু নিয়ে পরিচালিত তিনটি কেস্কন্ট্রোল স্টাডির উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তার এ রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যেসব শিশু সাপ্লিমেন্ট দেয়া হয়েছে, আর যাদের দেয়া হয়নি, এদের তুলনা করলে, যাদের ভিটামিন দেয়া হয়েছিল এদের টাইপ ১ ডায়েবেটিসের ঝুঁকি কমেছিলো ২৯%। ডাঃ জিপিটিস সর্বমোট পাঁচটি গবেষণা বিশেস্নষণ করে দেখেছেন, ভিটামিন-ডি’র মাত্রা বাড়ালে ও নিয়মিত গ্রহণে এর সুরক্ষা গুণ বাড়ে। ডাঃ জিপিটিস তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, শৈশবে ভিটামিন-ডি গ্রহণে পরবর্তী জীবনে টাইপ ১ ডায়েবেটিস থেকে হয় সুরক্ষা। এই নতুন গবেষণায় সম্পর্কটি আরো জোরালো প্রমাণ পেলো।
তবে প্রাপ্ত উপাত্তের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এই নতুন গবেষণা প্রবন্ধে দেখানো হয়নি সাপ্লিমেন্ট ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে কি পরিমাণ ভিটামিন-ডি শিশুরা পেয়েছিলো, শুরু করার সময়ই তাদের মধ্যে কাদের এই ভিটামিন-ডি ঘাটতি ছিলো? জিপিটির বলেন, ভিটামিন-ডি’র চরম ঘাটতিতে যাদের রিকেটস রোগ হয় তাদের টাইপ ১ ডায়েবেটিসের উচ্চঝুঁকি থাকে। তিনগুণ বেশি ঝুঁকি থাকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর তুলনায়। বোঝা গেলো, শরীরে ভিটামিন-ডি যত বেশি, টাইপ ১ ডায়েবেটিসের সম্ভাবনা তত কম।
অতীতের গবেষণাও এরকম ফলাফলের দিকেই ইঙ্গিত করেছে। রৌদ্রের কিরণ থেকে যেসব দেশ অনেকটা বঞ্চিত, সেসব দেশের তুলনায় যেসব দেশে রৌদ্রালোক অফুরন্ত, আর শরীরে এজন্য ভিটামিন-ডি উৎপাদন হয় পর্যাপ্ত, সেসব দেশের লোকদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়েবেটিস অনেক কম। গবেষণায় দেখা গেছে ইউরোপে, বিলেতে ভিটামিন ডি ঘাটতি নতুনভাবে দেখা দিয়েছে, শিশুদের মধ্যে রিকেটস-এর পুনঃআবির্ভাব ঘটেছে। রৌদ্রালোক থেকে রক্ষার জন্য সানবস্নক ব্যবহার, রৌদ্রালোক কোনো কোনো ঋতুতে কম পড়া এসব উপাদান তো রয়েছেই।
রক্তে ভিটামিন ডি মান কম থাকলে কেবল যে রিকেটস ও টাইপ ১ ডায়েবেটিস হতে পারে তাই নয়, ঝুঁকি থাকতে পারে অটোইম্যুন রোগ যেমন- রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস ও মালটিপল স্ক্লেরোসিসের মত রোগের। এছাড়া কিছু বিরল তবে গুরুতর রোগ কার্ডিও মায়োপ্যাথি গবেষণা থেকে দেখা গেছে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের রয়েছে যথেষ্ট হিতকরী ফলাফল। হাড় তো মজবুত হয়ই, এতে কমে অনেক ধরনের ক্যান্সারেরও ঝুঁকি। ১৭৯ জন রজঃনিবৃত্তি-উত্তর মহিলাদের ওপর গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে ২০০৭ সালে। দেখা গেছেঃ যেসব মহিলার দিনে ক্যালসিয়াম ও ১১০০ আইইউ ভিটামিন-ডি গ্রহণ করেছেন এদের অন্য মহিলাদের তুলনা ৮০% কম ক্যান্সার হয়েছে।
আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিস ছোট্ট শিশুদের জন্য প্রতিদিন ২০০ আইইউ ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেনঃ দুই মাস বয়স থেকে।
————————
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
ডাইরেক্টর, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply