খাদ্যকে বলা হয় দেহের জ্বালানির উৎস। খাদ্য থেকেই দেহের পুষ্টি এবং প্রয়োজনীয় শক্তি। কিন্তু দৈনন্দিন উপযুক্ত খাবারের অভাবে শুধু শারীরিক পুষ্টিরই ব্যাঘাত ঘটে না ক্লান্তি ও অবসাদে ভরে যেতে পারে দেহমন- হারিয়ে যেতে পারে স্বাভাবিক কর্ম-উদ্দীপনা। শরীরকে সতেজ এবং কর্মচঞ্চল রাখতে বিশেষজ্ঞরা বিশেষ বিশেষ খাবারের প্রতি একটু বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
এগুলো হচ্ছেঃ
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারঃ দৈহিক ক্লান্তি এবং অবসন্নতা দূর করতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খুবই জরুরী। মাছ-মাংস ছাড়াও এক্ষেত্রে সীম জাতীয় খাদ্য প্রোটিন সরবরাহের চমৎকার উৎস হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের সীম, বরবটি, ছোলা, ডাল জাতীয় শস্য প্রোটিন সরবরাহের অনন্য উৎস। এসব খাবারে প্রোটিন ছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন। ডাঃ ক্লার্কের মতে, আয়রনের অভাবে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক ড· শেল্ডন বলেন যে আয়রন বা লৌহ উপাদান হচ্ছে শরীরে শক্তি জোগানোর মূল চাবিকাঠি। ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সীম জাতীয় শস্য এবং অন্যান্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা চাই।
সবুজ রং-এর শাক-সবজিঃ সবুজ পাতাবিশিষ্ট শাক (সাইনাক) ম্যাগনেসিয়াম উপাদান সমৃদ্ধ। আমাদের মাংসপেশী শর্করা জাতীয় খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য ম্যাগনেশিয়ামের ওপর নির্ভরশীল। মাংসপেশীকে মজবুত, দৃঢ় এবং কর্মক্ষম রাখতে সবুজ বা ঘন সবুজ রং-এর শাক-সবজি খুবই সহায়ক।
মাছের গুরুত্বঃ অধুনা মাছ একটি নিরাপদ, কোলস্টেরলমুক্ত প্রোটিনের অনন্য উৎস হিসাবে বিবেচিত। বেশি পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য অথচ প্রোটিনের ঘাটতি মস্তিষ্কে অবসাদ এবং ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে মাছকে বলা হয় মস্তিষ্কের খাবার। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছে বিশেষতঃ টুনাতে টাইরোসিন (ঞুৎড়ংরহব) নামের অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। টাইরোসিন নর-ইপিনেফ্রাইন (ঘড়ৎ-বঢ়রহবঢ়যৎরহব) এবং ডোপামিন (উড়ঢ়ধসরহব) নামের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে থাকে। এই ট্রান্সমিটারগুলো মস্তিষ্কের একাগ্রতা, মনসংযোগ ক্ষমতা বা মানসিক দৃঢ়তা সংরক্ষণের জন্য সাহায্য করে। তাছাড়া মাছে হ্নদহিতকর ও মেগা-৩ ফ্যাটি এসিডও রয়েছে। আবার মাছের প্রোটিন মাংসপেশীর কর্মক্ষমতা সংরক্ষণেও জরুরী। বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কম-বেশী কিছু পরিমাণ মাছ থাকা প্রয়োজন।
ওটমিল (Oatmeal): ভাত, গস্নুকোজ বা চিনিসমৃদ্ধ আঁশবিহীন খাবার রক্তে দ্রুত শর্করা বৃদ্ধি করে আবার নিঃশেষিতও হয় ত্বরিত গতিতে। অন্যদিকে গম, যব, ভুট্টা বা ওটমিল ইত্যাদি আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় ধীরগতিতে অথচ অব্যাহতভাবে শক্তির যোগান দিতে থাকে। তাই এসব খাবারে সকালে নাস্তা খেয়ে সারাদিনের কর্মক্ষমতায় প্র‘তি নেয়া যায়।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ মাসিকের শুরুতে বা মাসিক চলাকালীন সময়ে অনেক মহিলা অবসন্নতা এবং অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বিশেষত কম চর্বিযুক্ত ইয়োগাট, স্কিমড মিল্ক অবাঞ্ছিত অনেক উপসর্গ এড়াতে সাহায্য করে।
কলাঃ কলা চমৎকার ‘এনার্জি প্যাক’ হিসাবে কাজ করে। কলাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যা ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে কাজ করে এবং পেশী ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম রক্ষা করে। পটাশিয়ামের অভাবে মাংসপেশীর ব্যথা, অনিয়মিত হ্নদস্পন্দন, মানসিক দ্বিধা, অবসাদগ্রস্ততা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। কলা দেহের ঙাবৎযবধঃরহম বা অতিরিক্ত তাপপ্রবণতাও দূর করে। ক্লান্তি ও অবসাদ রোধে প্রতিদিন একটি কলা খাওয়ার অভ্যাস খুবই ভাল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলার পাশাপাশি নানা জাতীয় ফলমূল গ্রহণও শরীরকে সতেজ রাখে। অধিকাংশ ফলেই ভিটামিন ‘সি’ পর্যাপ্ত থাকে যা লৌহ বা আয়রনকে শোষণে সাহায্য করে। ফল দেহের পুষ্টি বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থেরও যোগানদাতা। ক্লান্তি ও অবসাদ দূরীকরণে ফলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
জটিল কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাঃ আমাদের প্রধান দুই আহারের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে রুটি, নানরুটি, পরোটা ইত্যাদি শক্তির চমৎকার উৎস হতে পারে। পেশী ও লিভারে গস্নাইকোজেন হিসাবে জমা রেখে প্রয়োজন মাফিক এসব খাবার শক্তি দিয়ে থাকে।
—————–
কায়েদ-উয-জামান,
সহকারী অধ্যাপক, জীববিজ্ঞান বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ জামালপুর।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply