শরীরের ওজনটা যখন আর কিছুতেই বশে আনা যায় না মূলত তখনই পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা শরণাপন্ন হন ক্র্যাশ ডায়েটের। এর উদ্দেশ্য বেমালুম মুটিয়ে যাওয়া মানুষদের অস্বাভাবিক ওজন এক সপ্তাহ বা এ ধরনের কোনো নির্ধারিত কম সময়ে অনেকটা কমিয়ে আনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওজনভেদে বিভিন্ন মানুষের জন্য বিভিন্ন রকম ক্র্যাশ ডায়েট দেয়া হলেও গড়পরতা মানুষদের কথা চিন্তা করে কড়চা’র এবারের ডায়েট বিভাগে এক সপ্তাহের একটি ক্র্যাশ ডায়েট চার্ট তুলে ধরা হলো।
ডায়েট চার্টের পয়লা দিন : খাদ্যের প্রসঙ্গে পরে আসি। আগে বলি মনের কথা। এতদিন যে আপনি বেশ মজা করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে রাজ্যের খাবার খেয়েছেন প্রথম দিনে তার সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা হবে মনের সাথে যুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধে যতই ক্লান্ত হয়ে পড়ুন না কেন প্রথম দিনে ফল ছাড়া আর কোনো খাদ্য সামগ্রীর দিকে কিন্তু ভুলেও হাত বাড়ানো যাবে না। তবে মেদভুড়ির বন্ধু বলে ফলের এই তালিকাতে কোনোক্রমেই রাখা চলবে না কলাকে। এছাড়া যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি যেমন তরমুজ, আম, পেপে, কমলা, আনারস প্রভৃতি যতটা সম্ভব বেশি খেতে হবে। অন্যান্য ফল এবং ফলের রসও খাওয়া যাবে। তবে ডাবের পানিতে গলা ভেজানো যাবে না।
দিন নম্বর টু : ভাত-মাছ-মাংসের জন্য প্রাণ কাঁদলেও ওমুখো হওয়া যাবে না। আর সেই অভাব পূরণ করতে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে সবজি। ভাত ছাড়া সবজি খেতে বলায় আমাদের পাগল ঠাওড়াতে পারেন। কিন্তু কি করবেন বলুন। ডায়েট কাউন্সিলর আর ডায়েট বিষয়ক বই-পুঁথিও যে একই কথা বলছে। লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ডাঁটা, বরবটি, করোলা, কাঁচা পেপে, টমেটো, শসা থেকে শুরু করে যত ধরনের সবজি বাজারে পাওয়া যায় তার সব পদই চেখে দেখতে পারেন এদিন। সেই সাথে পানি খান প্রচুর পরিমাণে।
তৃতীয় দিনের কথা : প্রথম দিন ফল খেয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন খেয়েছিলেন সবজি। আর আজ খাবেন ফল ও সবজি দু’টোই। কি একটু হলেও নিশ্চয়ই মন ভাল লাগছে। তবে এ আনন্দে যত ধরনের ফল আর সবজি-ই উদরস্থ করুন না কেন ভুলেও হাত বাড়াবেন না কলা কিংবা আলুর দিকে। পানির সাথে বন্ধুত্বটা তৃতীয় দিনে আরো বাড়ান। সেই সাথে স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে চেখে দেখতে পারেন ভেজিটেবল স্যুপ। স্যুপে সামান্য তেল দেয়া যেতে পারে, কিন্তু মসলা নয় মোটেও।
চার নম্বর দিন : সবকিছু ঠিক থাকলে তৃতীয় দিনের শুরুতেই শরীরের অতিরিক্ত মেদে ভাঙ্গন ধরবার কথা। কিন্তু শরীর যেন হঠাৎ করেই ভেঙ্গে না পড়ে তাই চতূর্থ দিনে মেদের কথা ভুলে কিছুটা পুষ্টির কথাও ভাবতে হবে। আর এটা ভাবতে গিয়েই কলা খেতে হবে। হ্যাঁ, এতদিন ধরে যেই ডায়েট চার্টের সাথে কলার সাপে-নেউলে সম্পর্ক চলছিল সেই কলাই আজ আপনাকে খেতে বলছেন ডায়েট কাউন্সিলররা। তবে খুব বেশি ইচ্ছে হলে বড়জোর ২ হালি কলা খেতে পারেন। সেই সাথে খেতে হবে দুধ; কমপক্ষে তিন গ্লাস।
পঞ্চম দিনের খাদ্য : আজ আপনি গরুর মাংস খেতে পারবেন। চাই কি চেখে দেখা যাবে মুরগীর মাংস ও। ভাবছেন রসিকতা করছি। উহুঁ মোটেও নয়। সত্যি সত্যিই খানিকটা গরু কিংবা মুরগীর মাংস খেতে পারবেন ডায়েট চার্টের পঞ্চম দিনে। তবে শুধু শুধু মাংস না খেয়ে সাথে টমেটো কিংবা লাউ, কুমড়া দিয়ে রেঁধে খাবেন। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে তেল-মসলা অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া মাংস খাবার সময় পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ষষ্ঠ দিবসের ভাবনা : বেশ, বেশ, বেশ। আগের পাঁচদিন যদি সুবোধ বালক কিংবা বালিকার মতো সব পরামর্শ মেনে থাকেন তবে ষষ্ঠ দিনে পুরস্কার হিসেবে আপনি খেতে পারবেন সবজি এবং মাংস। তাও মেপে টেপে নয়, একেবারে উদরপূর্তি করে। অর্থাৎ এ দিন আপনার যত খুশি মাংস ও সবজি খেতে পারবেন। তবে এই আনন্দে রুটিন মাফিক পানি খাবার কথা ভুলবেন না।
আজ শেষ দিন : আজ মনের আনন্দে খেতে পারবেন ফ্রুট জুস, সবজি ও ভাত। আহ! সবজি দিয়ে ভাত মেখে খাবার পর যদি দেখেন শরীরের ওজনটাও খানিকটা কমেছে তবে আনন্দের মাত্রাটা ষোলআনা হতে বাধ্য। সাধারণ হিসেবে সাতদিনের ডায়েট চার্টে আপনার ওজন কমবার কথা প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি। কিন্তু তাই বলে আবার ডায়েট চার্ট শেষ করবার আনন্দে তৎক্ষণাৎ গপাগপ বহুকিছু খেয়ে ফেলবেন না যেন। বরং ধীরে চলো নীতিতে পরিমাণমতো খাবার পথেই চলতে থাকুন। আর বাই-বাই বলুন মেদকে।
মনে রাখুন
০ সাতদিনে মনে করে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে আট থেকে দশ গ্লাসতো বটেই।
০ ভুলেও অ্যালকোহলের ত্রি-সীমায় ঘেরা যাবে না।
০ চা-কফি খেলেও তা খেতে হবে দুধ এবং চিনি ছাড়া।
০ সপ্তম দিনের আগে কোনোভাবেই কোনো ফ্রুট জুস খাওয়া যাবে না।
০ ডায়েট চার্ট ফলো করবার পাশাপাশি হালকা পরিশ্রমের কাজও চালিয়ে যান।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ২৩, ২০০৯
Mow
7 din a chart follow korar por ki khabo
Bangla Health
যদি শারীরিক ভাবে খুব দূর্বল না হয়ে পড়েন, তাহলে ওজন বশে না আসা পর্যন্ত এভাবে চালাতে পারেন আরো কিছুদিন। দূর্বল হয়ে গেলে খাওয়া একটু বাড়িয়ে দেবেন। শরীর ঠিক হলে আবার এমন করতে পারেন।
ony
ei diet chart ki ek tana onek din follow kora jabe.