দীপা প্রতি পরীক্ষার আগে চোখব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গে আক্রান্ত হয়। ওর ব্যথার তীব্রতা এতটা বেড়ে যায় যে কিছুতেই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। পড়া শুরু করায় তেমন কোনো অসুবিধা থাকে না কিন্তু সামান্যক্ষণ পরই তার ব্যথা শুরু হয়। মা-বাবা তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করেন। বদলিয়ে দেন চশমার পাওয়ার। চশমা বদলের পর কয়েক দিন ভালো থাকে, তারপর আবার একই সমস্যা। মাথাব্যথা, চোখব্যথা। দীপা পড়াশোনায় ভালো। ক্লাসে প্রথম দশজনের ভেতর তার অবস্থান। তবে দিন দিন চোখের পাওয়ার বৃদ্ধি ও চোখের সমস্যায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দীপার মা-বাবা।
ওপরে দীপাকে নিয়ে যে চিত্রটা তুলে ধরলাম, আমরা প্রতিদিন কমবেশি আমাদের সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের সমস্যায় ভুগি। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি সন্তানের চোখের সমস্যা নিয়ে। কেবল চোখ নয়, বড় ধরনের রোগের আশঙ্কা মাথায় আসে।
চিকিৎসক হিসেবে এ ধরনের রোগী আমরা পাই। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা-বাবাদের আশ্বস্ত করছি যে আপনার সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের গল্পের দীপাকে নিয়েই আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আতঙ্কিত মা-বাবা এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে ছোটেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায় না। কেবল পরিবর্তন ঘটতে থাকে চোখের চশমার। দীপা তার এক উদাহরণ।
দীপার চোখে পাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। তবে তা খুব বেশি মাত্রায় নয়। ওর কিছু অভ্যাস এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। আবার দীপার মা-বাবার টেনশন থেকে বারবার চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। দীপা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সচেতন। বই চোখের খুব কাছে নিয়ে অধ্যয়নের অভ্যাস তার। পড়ার টেবিল নয়, বিছানায় শুয়েই সে পড়াশোনা করে। এভাবে পড়াশোনা করায় নিজের অজান্তে তার চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ে।
আমরা যখন পড়াশোনা করি, তখন আমাদের চোখের বেশ কয়েকটি পেশি একত্রে কাজ করে। বিশেষ করে কাছের দৃষ্টিকর্মের জন্য পেশিগুলো অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকে। দেখার সামগ্রী যথা বইপত্র যত কাছে নিয়ে পড়ার অভ্যাস করা হয়, তত বেশি চোখের পেশির ওপর চাপ পড়ে। এতে একপর্যায়ে পেশিগুলো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, মাথাব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। কখনো কখনো পেশির খিঁচুনি হয় এবং এ ক্ষেত্রেও উল্লিখিত উপসর্গের উৎপত্তি ঘটে। পেশিগুলো অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকাকালে চোখের অভ্যন্তরের লেন্সের আকৃতির ওপর প্রভাব পড়ে। এতে চোখের অন্তর্নিহিত পাওয়ারের পরিবর্তন ঘটে। চোখের পাওয়ার বিশেষত মাইনাস পাওয়ার এ সময় বেড়ে যায়।
রোগীর দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। ইদানীং মা-বাবা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে অধিকমাত্রায় সচেতন। তা ছাড়া মা-বাবা ছেলেমেয়েদের স্কুলের লেখাপড়ার বাইরেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে থাকেন। স্কুলের পর একাধিক কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হন না, বাড়িতেও টিউটর রাখেন। ছেলেমেয়েদের এভাবে পড়াশোনার চাপ দেওয়ায় তাদের চোখ বিশ্রামের সুযোগ পায় না। এর ফলে চোখের পেশিগুলোও বিশ্রাম পায় না। পরীক্ষার্থীরা মা-বাবার কাছে দূরের ঝাপসা দৃষ্টির উপসর্গের কথা বলে। মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে ছোটেন চোখের চিকিৎসকের কাছে। চোখের বিশ্রাম না থাকায় ‘অস্বাভাবিক’ চোখের অস্বাভাবিক পাওয়ার পরিবর্তন করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চোখের পূর্ণমাত্রার বিশ্রামের পর যে পাওয়ার থাকে, বিশ্রামহীন চোখের পাওয়ার তা থেকে ভিন্ন হয়। হয়তো যে চোখে কোনো পাওয়ার লাগারই কথা নয়, সেই চোখ বিশ্রামে না থাকায় চোখের ভেতরের পেশির সংকুচিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাওয়ার ঘাটতির শিকার হয়।
দীপার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মা-বাবার কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন:
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দিন। একটানা বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা ঠিক নয়। ২০ মিনিট পড়াশোনার পর অন্তত পাঁচ মিনিট চোখের বিশ্রাম নেওয়া ভালো।
সন্তানকে চোখের চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার আগে চোখের বিশ্রাম দিন। যেমন বিকেলে যদি চিকিৎসকের চেম্বারে নেওয়ার প্রোগ্রাম থাকে, সে ক্ষেত্রে দুপুরের আহারের পর বিশ্রামে থাকতে সাহায্য করুন।
চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত রাখুন।
কোচিং সেন্টারের শিডিউল ওই দিনের জন্য পরিবর্তন করে নিন। কোচিং সেন্টার থেকে সরাসরি চোখের চিকিৎসকের কাছে যাবেন না। কেননা এ ক্ষেত্রে সন্তানের চোখের পরিমিত বিশ্রাম হয় না।
আপনার সন্তানকে পর্যাপ্ত আলোয় আরামদায়ক পরিবেশে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে দিন। লেখাপড়া টেবিলে করা উচিত, বিছানায় শুয়ে নয়। বিশেষ করে যারা চশমা ব্যবহার করে, তাদের জন্য বিছানায় শুয়ে পড়াশোনা করা মোটেও উচিত নয়।
মোটকথা, সন্তানের চোখের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব মা-বাবার। সন্তানকে চোখের পরিচর্যায় যত্নশীল করে তোলায় মা-বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার প্রতিস্থাপন
এই প্রথম বাংলাদেশে ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সৈয়দ মো. কায়সারের শরীরে পেনড্রাইভ আকৃতির ইসিজি রেকর্ডার চামড়ার নিচে মাত্র ১৫ মিনিটের স্বল্পকালীন আউট সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে মনিটরটি স্থাপন করেন স্কয়ার হাসপাতালের বিশিষ্ট হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল জামিল। এই ইসিজি রেকর্ডারটি তিন বছর পর্যন্ত রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ইসিজি রেকর্ড করতে থাকবে। যেসব রোগীর অনিয়মিত হূৎস্পন্দন বা ব্যাখ্যাতীত ঘন ঘন মূর্ছা যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপনযোগ্য ইসিজি রেকর্ডারটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই রেকর্ডারটির ইসিজি রেকর্ড দেখার জন্য বাইরে থেকে একটি বিশেষায়িত যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। সেই যন্ত্রের সাহায্যে ইসিজি যেকোনো সময় দেখা এবং প্রিন্ট নেওয়া যাবে। যন্ত্রটির নাম REVEAL এবং বিখ্যাত আমেরিকান কোম্পানি VITATRON এবং MEDTRONIC যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশি হূদেরাগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই যন্ত্রটি বাংলাদেশে হূদেরাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এর আগে এ ধরনের যন্ত্র লাগানোর জন্য রোগীদের উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমাতে হতো। যন্ত্রটি লাগানো থাকা অবস্থায় এমআরআই করার জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে উদ্ভাবক কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান।
মো. শফিকুল ইসলাম
অধ্যাপক, চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২০, ২০১১
monir.ksa
amar chok a -0.25/
+0.25 power ar somossa kentu amar glass pora valolaga na.ajonno ke ami lajar ar maddoma amar somossa somadan korta pare.
Bangla Health
হ্যাঁ, সম্ভব। তবে এটা একটু ব্যয়বহুল।
uttam
Sir, ami onek somoy dhore mobile,computer use kori ate ami ki chosma use korte pari, abong ta koto power er.
Bangla Health
মোবাইল, কম্পিউটারের জন্য আলাদা চশমা লাগবে না। আর পাওয়ারের তো প্রশ্নই আসে না। চোখে যদি দেখতে সমস্যা হয়, তবেই ডাক্তার দেখিয়ে চোখ পরীক্ষা করে নেবেন।
এমনিতে অন্ধকারে মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার করবেন না। এতে চোখের উপর চাপ পড়ে বেশি। এছাড়া এক নাগাড়েও স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। মাঝে মাঝে বাইরে দূরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন।
নিলাভ
আমার বয়স ১৮। ১৪-০১-২০১১তারিখে আমার চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ায় আমি ডাঃ এর কাছে যাই। আমার সমস্যাটি হচ্ছে আমি দুরের কোন লেখা বা কোন মানুষকে সঠিক ভাবে চিনতে পারিনা। তবে কাছের কোনো সমস্যা ছিলনা। ডাৰ এর কাছে গেলে তিনি আমাকে -১২৫ এর একটি চশমা ব্যবহারের জন্য দেন। তিনি এই চশমাটি নিয়মিত ব্যবহারের নির্দেশো দেন। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করার পর আমি আর চশমা ব্যবহার করিনি। সম্প্রতি একটি কম্পিউটারের দোকানে জয়েন্ট করার পর থেকে চোখের সমস্যাটি বেশি মনে হওয়ায় আবারো ০১-০৪-২০১২ ডাঃ এর কাছে যাই। এবার তিনি -১৫০এর একটি চশমা দিয়ে বলেন ”একমাত্র গোসল এবঙ ঘুম ছাড়া অন্য কোন সময় চশমা খোলা যাবে না, খুললে এতে চোখের সমস্যাটি আরো বেড়ে যেতে পারে।” এখন আমার প্রশ্ন কিভাবে চশমার ব্যবহার ছাড়া যাবে। আমি সবে মাত্র এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। দয়া করে সমাধান জানাবেন।
Bangla Health
আপাতত চশমা ব্যবহার করে যাওয়াই ভালো সমাধান। অল্প বয়সীদের এরকম সমস্যা বেশি হয়। তবে বয়স বাড়লে এ সমস্যাটা ধীরে ধীরে কমে আসে। একটা পর্যায়ে হয়তো ব্যাপারটা আবার উলটো হয়ে যেতে পারে। যেমন বয়স বাড়লে তখন প্লাস পাওয়ার চশমা লাগতে পারে। অর্থাৎ তখন দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয় না, কিন্তু কাছের জিনিস, যেমন বই পড়তে সমস্যা হয়।
ইব্রাহীম
আমার বয়স যখন ৬ বছর তখন ক্লাস ওয়ান পড়ি । ব্লাকবোর্ডে শিক্ষক অংক করছে । আমার পেছনের সারিতে বসা ওরা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু আমি অস্পষ্ট দেখছি সেই থেকে শুরু । ডাঃ এর কাছে গেলাম চশমা দিল Right-125, left-250. ছয় মাস পর আবার গেলাম দু সাইটেই ৫০ করে বেরে গেল । সেই আজ পর্যন্ত বাড়তে বাড়তে -950 তে এসেছে । এইভাবে আর কত দিন চলবে ? আমার বয়স এখন ২৩ বছর ।(একটা বদঅব্যাশ আছে মাঝে মাঝে হস্থমৈথুন করা, অত্যাধীক মোবাইল ব্যবহার করা) চশমা ব্যবহার করতে একটুও ভাল লাগেনা । আমার চোখ কি ভাল হবেনা ?
Bangla Health
আপনার আপাতত সবসময় চশমা বা কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার করে যাওয়া উচিত। নিয়মিত চেকআপ করা উচিত। চশমা ব্যবহার করতে না চাইলে ICL (Implantable Contact Lens Surgery)-এর কথা বিবেচনা করে দেখতে পারেন। যখন জেগে থাকবেন, তখন আশেপাশে পর্যাপ্ত ও সহনশীল পরিমান আলোর ব্যবস্থা থাকা উচিত। অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করবেন না। তাতে চোখের উপর বেশি চাপ পড়বে। টানা মনিটরের দিকে না তাকিয়ে মাঝে মাঝে ব্রেক নিবেন, এবং কিছুসময় চোখ বন্ধ করে রাখবেন।
সাধারণত বয়স বাড়লে এই নেগেটিভ পাওয়ার পজেটিভের দিকে যেতে থাকে।
টগর
আমার বয়স ১৮ আমি ৪ বছর আগে চশমা নেই power ছিল -৫০ আর নিয়মিত তা use করি. তার ১ বছর পর আমি আমার ভাইয়ের চশমা use করতে থাকি আর ৩ বছর পর দেখি ভাইয়ের চশমার power ছিল -১.১৫ আর আমার চোখের power -১.১৫ হয়ে গেছে আমাকে ১ চশমার দোকানদার বলল ৬মাস পর পর চশমার power -০.১৫ কম করে পরতে ত্র টা কি সত্য আমি আমার চোখের power ঠিক করতে কি করব?
Bangla Health
এভাবে চশমা ব্যবহার করা ঠিক নয়। আপনি আলাদা চোখের ডাক্তার দেখিয়ে তবেই ঠিক করবেন কোন পাওয়ার আপনার জন্য প্রযোজ্য। বছরে একবার চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করাবেন।