প্যারাফাইমোসিস হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া লিঙ্গমুণ্ডুর পেছনে আটকে থাকে এবং লিঙ্গের স্বাভাবিক নরম অবস্থায়ও তা পূর্ববস্থায় ফিরে আসে না, অর্থাৎ লিঙ্গের মাথায় আসে না। এটা কেবল খৎনাবিহীন পুরুষের অথবা আংশিক খৎনা করা হয়েছে এমন পুরুষের হয়। যদি অবস্থা কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে অথবা রক্ত সরবরাহ ঘাটতির কোনো চিহ্ন থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে, নইলে ওখানে গ্যাংগ্রিন বা পচন অথবা অন্য মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
প্যারাফাইমোসিস সচরাচর হাত দিয়ে ঠিক করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লিঙ্গে পিচ্ছিলকারী পদার্থ মেখে লিঙ্গমুণ্ডু চেপে ধরে লিঙ্গের অগ্রভাবের চামড়া টেনে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া কাটার অথবা খৎনা করার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় উৎষনপপ পদ্ধতিতে প্যারাফাইমোসিসে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম সূচ দিয়ে ফুলে থাকা লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়ারয় অনেকগুলো ছিদ্র করা হয়, তারপর চাপ দিয়ে পানি বের করে ফেলা হয়।
পুনরায় যাতে প্যারাফাইমোসিস না হয় সে জন্য কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে খৎনা করানো অথবা প্রিপিউশিও প্লাস্টি করানো।
ফাইমোসিস থেকে প্যারাফাইমোসিসের পার্থক্য হলো প্যারাফাইমোসিস একটি জরুরি অবস্থা এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু ফাইমোসিস কোনো জরুরি অবস্থা নয়।
প্যারাফাইমোসিসের কারণ
প্যারাফাইমোসিসের বেশিরভাগ কারণই খোঁচাখুঁচি। এ অবস্থাটি সচরাচর ঘটে লিঙ্গ পরীক্ষা, মূত্রনালীপথে ক্যাথেটার প্রয়োগ অথবা সিস্টোস্কপির পর। ক্যাথেটার স্থাপনের পর প্যারাফাইমোসিস হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। এ সময়ে মূত্রথলিপথে ক্যাথেটার প্রয়োগের সময় লিঙ্গের মাথার চামড়া পেছনের দিকে টানা হয় এবং লিঙ্গের মাথার দিকে আবার টেনে আনা হয়। ক্যাথেটার প্রয়োগের পর প্রয়োগকারী লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারেন না।
প্যারাফাইমোসিসের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে লিঙ্গে নিজে নিজে আঘাত। অনেক সময় লিঙ্গ উত্তেজিত হবার কারণেও প্যারাফাইমোসিস হতে পারে।
কী ঘটে?
যদি লিঙ্গের মাথার চামড়া লিঙ্গের করোনোর পেছনে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে, তাহলে তা টাইট, সঙ্কীর্ণ বন্ধন তৈরি করে। টিসুর এই বৃত্তাকার রিংটি লিঙ্গ মুণ্ডু ও লিঙ্গ মুণ্ডুর চামড়ায় রক্ত ও লসিকাপ্রবাহকে বাধা দিতে পারে। ফলস্বরূপ লিঙ্গে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। লিঙ্গমুণ্ডু ও সেখানকার চামড়া ব্যাপকভাবে ফুলে যায়। যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে লিঙ্গে গ্যাংগ্রিন হয় এবং কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লিঙ্গ আপনা আপনি ঝরে পড়ে যায়।
উপসর্গ
প্যারাফাইমোসিসের রোগীর সচরাচর লিঙ্গে ব্যথা থাকে। তবে সব সময় ব্যথা নাও থাকতে পারে। লিঙ্গমুণ্ডু বড় দেখায় ও রক্ত জমে। করোনাল সালকাসের চারপাশের লিঙ্গাগ্রের চামড়া ফুলে যায়। লিঙ্গের মাথার পেছনে টিসুর টাইট, সঙ্কীর্ণ বন্ধন দ্রুত দেখা দেয়। লিঙ্গের অবশিষ্ট অংশ ঢিলা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্যারাফাইমোসিস হলে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে। তীব্র ক্ষেত্রে প্রস্রাব আটকে যায়।
————————-
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা (সোম, মঙ্গল, বুধবার)। যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস, বাড়িঃ ১৬, রোডঃ পুরাতন ২৮, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি, বৃহস্পতি)।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ মার্চ, ২০০৮
Leave a Reply