পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফুসফুস ক্যানসার পুরুষের এক নম্বর ক্যানসার। ক্যানসারজনিত মৃত্যুর তালিকার শীর্ষেও ফুসফুস ক্যানসার। সাধারণত ৪৫ বছরের পর থেকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের হারও বাড়তে থাকে। ইদানীং নারীদের মধ্যেও ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধূমপান, নেশাজাতীয় দ্রব্য, তামাক পাতা সেবন, দূষিত (বায়ু) পরিবেশে জীবনযাপন এবং অন্যান্য কারণে শ্বাসপ্রণালি ও ফুসফুসের কোষে ক্ষত দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, রোগজীবাণু আক্রমণ করে। ফুসফুসের নালি-প্রণালিতে প্রদাহ হয়। ফুসফুসের কোষে ক্ষত হতে হতে কোনো একসময় ক্যানসারের সূচনা করে।
ফুসফুস ক্যানসার কী?
ফুসফুসের কোনো কোষ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে ক্যানসার কোষে রূপ নেয়। এ কোষ স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা। যেমন আকার-আকৃতিতে, তেমনই কার্যকারিতায়। একসময় এই কোষই জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ক্যানসার কোষটি দ্রুত বিভাজন হয়ে কোষসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। কোষসংখ্যার এ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণহীন ও অস্বাভাবিক। এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান প্লেটে এর ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
ফুসফুস ক্যানসারের কারণ কী?
ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ। ১৯৫০ সাল থেকে অসংখ্য গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। ফুসফুস ক্যানসারের ৯০ শতাংশ কারণ প্রত্যক্ষ ধূমপান।
সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রায় ৪০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান। যে ব্যক্তি দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খান, তাঁর ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অধূমপায়ীর চেয়ে ২৫-৩০ গুণ বেশি। যে মুহূর্ত থেকে ধূমপান বন্ধ করা হয়, ঠিক তখন থেকেই তাঁর ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে শুরু হয়।
অন্যান্য কারণ
পরোক্ষ ধূমপান। ব্যক্তি নিজে ধূমপান করেন না; তবে দীর্ঘদিন পাশে থেকে অন্যের ধূমপানের ধোঁয়া গ্রহণ করেন। পরোক্ষ ধূমপায়ীও এ রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ুদূষণ; গাড়ি, কলকারখানা, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত কাঠ, কয়লা ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পোড়ানো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুকে দূষিত করে। কলকারখানায় ব্যবহূত হয় এসবেস্টোস। এসবেস্টোস এক ধরনের আঁশজাতীয় পদার্থ, যা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এসবেস্টোস ফুসফুসের ক্ষত সৃষ্টি করে এবং ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি নয় গুণ বাড়িয়ে দেয়।
ফুসফুস ক্যানসারের সংকেত কী কী?
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে প্রায় সব ধরনের ক্যানসারই নিরাময় করা সম্ভব। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যানসারের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোকে ফুসফুস ক্যানসারের সংকেত হিসেবে গণ্য করা হয়।
দীর্ঘদিন স্থায়ী কাশি। কাশির জন্য চিকিৎসা করা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাশি সারছে না। কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া। এমনিতে তেমন কোনো শ্বাসকষ্ট নেই। তবে কাজকর্ম করতে গেলে বা সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট বোধ হওয়া।
বুকে, পিঠে, বাহুতে ব্যথা অনুভব করা বা অস্বস্তিবোধ হওয়া। কাশি বা শ্বাসকষ্ট হওয়ার আগেও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, প্রায়ই ফুসফুসে প্রদাহ (ব্রঙ্কাইটিস) হওয়া। ওজন কমে যাওয়া, দুর্বলতা।
ক্যানসার শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে গেলে আরও অনেক উপসর্গ ও চিহ্ন দেখা দিতে পারে।
ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় কী?
কিছু কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমে আসে। কখনো ধূমপান না করা। পরিবারের অন্যরাও যাতে ধূমপান করতে না পারে, সে রকম পরিবেশ গড়ে তোলা। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার না হওয়া। যেসব জায়গায় সব সময় ধূমপান চলে, সেসব জায়গায় অবস্থান না করা।
কর্মক্ষেত্রের কার্সিনোজেন এড়িয়ে চলা। কর্মক্ষেত্রে যদি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে, তাহলে চাকরির বিধিতে শারীরিক সুরক্ষার জন্য যেসব সতর্ক নিয়মকানুন আছে, তা ঠিকভাবে মেনে চলা। রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত কাঠ, পাতা, কয়লা, পাটখড়ি, ময়লা কাগজ ইত্যাদি পোড়ানোর ধোঁয়া ঘরের ভেতরে গিয়ে পরিবেশদূষণ ঘটায়। ঘরের ভেতরের বাতাস যাতে বাইরে চলাচল করতে পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা। এমনকি সপ্তাহে দুই দিন হালকা ধরনের ব্যায়ামও ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি খাওয়া। বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজিতে যে পরিমাণ ভিটামিন থাকে, তা প্রক্রিয়াজাত ওষুধে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ইন-অরগানিক ফসফেটযুক্ত খাবার ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ইন-অরগানিক ফসফেটযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন—মাংস, ফাস্টফুড, বেকারি খাবার, পনির ও বিভিন্ন কার্বোনেটেড কোলা ড্রিংক ইত্যাদি। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবারও ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। গ্রিন-টি খাওয়ার অভ্যাস করা। নিয়মিত গ্রিন-টি পান করলে ধূমপানে সৃষ্ট কোষের ক্ষতি কিছুটা কম হয়। এর ফলে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে।
পারভীন শাহিদা আখতার
অধ্যাপক, মেডিকেল অনকোলজি, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৩, ২০১১
Robin
সালাম নিবেন।আমার আব্বা ক্যান্সারে আক্রান্ত।অনেক পরিক্ষা করিয়েছি।গত দুইমাস আগে ধরা পরেছে ।রেডিওথেরাপি করেছে কিছু দিন।পুরাটা করে নাই উনি নাকি সহ্য করতে পারেন্না।এখন উনার অবস্থা খুব খারাপ।হাটতে পারেন্না।আর প্রচন্ড ব্যাথা পায়ে কোমড়ে।ব্যাথার সময় অনেক চিতকার করেন।পুরো পরিবার উনার জন্যে অস্তির এখন।ব্যাথা একটু হলে ও কমবে এই জাতিয় কোন ঔষদ কি নাই । দয়া করে আমাকে একটা পরামর্শ দিবেন।আপনার পরামর্শের অপেক্ষায় রইলাম।
Bangla Health
ব্যথার ঔষধ অবশ্যই আছে তবে সেটা যিনি চিকিৎসা করছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আর ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা না করিয়ে ঔষধ খাওয়া ঠিক নয় বলে আমরা সাধারণত এখানে ঔষধ দেই না।