আপনার কি শ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়?
আপনি কি সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলে বা সামান্য বাতাসে হাঁটলে আপনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়? আপনি কি বেগুন, পাকা কলা বা হাঁসের ডিম খেলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়?
আপনার এলার্জি ও শ্বাসকষ্ট হলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কারণ, বর্তমানে এর প্রতিকার ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা-পদ্ধতি রয়েছে।
হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় শ্বাসনালিতে নিম্নোক্ত পরিবর্তনগুলো দেখা যায়:
শ্বাসনালি লাল ও ফুলে যাওয়ার ফলে সরু হয়।
শ্বাসনালির চারপাশের মাংসপেশিসমূহ সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালিকে আরও সরু করে দেয়।
শ্বাসনালিতে অধিক পরিমাণ শ্লেষ্মা তৈরি হয়ে শ্বাসনালিতে বায়ুপ্রবাহ আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়।
চিকিৎসা
হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেসব উত্তেজকের (ট্রিগার) কারণে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যায়, রোগীকে সেগুলো শনাক্ত এবং পরিহার করতে হবে।
এ ছাড়া সব হাঁপানি রোগীকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে:
ধূমপান এবং তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে।
ঠান্ডা বাতাস হাঁপানির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। এ সময় ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে।
ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়। ব্যায়াম শরীর ভালো রাখে এবং উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য জটিল রোগবালাই থেকে শরীরকে রক্ষা করে। সঠিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যায়ামের সময় বা পরে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পরিহার করা সম্ভব।
বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বাড়িতে অবাধ বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ওষুধ: দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন:
হাঁপানি প্রতিরোধক
হাঁপানি উপশমকারক
হাঁপানি প্রতিরোধক
যেসব ওষুধের ব্যবহার হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করে, সেগুলোকে হাঁপানি প্রতিরোধক বলা হয়।
দুই ধরনের ওষুধ হাঁপানি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে:
এন্টি ইনফ্লামেটরি ওষুধসমূহ: এসব ওষুধ শ্বাসনালির প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হাঁপানি প্রতিরোধ করে। এই শ্রেণীর বহুল ব্যবহূত বুসোনাইড, ক্লোমিথাসেন, ফ্লুটিকাসোন ইত্যাদি।
ব্রঙ্কোডাইলেটর বা শ্বাসনালি প্রসারক: এসব ওষুধ দ্রুত শ্বাসনালিকে প্রসারিত করে হাঁপানির তীব্রতা প্রতিরোধ করে।
হাঁপানি উপশমকারক
ব্রঙ্কোডাইলেটরসমূহ উপশমকারক হিসেবে কাজ করে। ব্রঙ্কোডাইলেটরসমূহ শ্বাসনালিকে দ্রুত প্রসারিত করে। ফলে ফুসফুসে সহজে বায়ু চলাচল করতে পারে এবং এর মাধ্যমে হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গসমূহ দ্রুত উপশম হয়।
দুই ধরনের ব্রঙ্কোডাইলেটর বা শ্বাসনালি প্রসারক আছে, যেমন:
ক্ষণস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর—যেমন: সালবিউটামল। এসব ওষুধ দিনে তিন-চারবার ব্যবহার করতে হয়।
দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর—যেমন: ব্যামবিউটামল। এসব ওষুধ দিনে একবার ব্যবহার করতে হয়।
মৃদু বা মাঝারি হাঁপানিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষণস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর (যেমন: সালবিউটামল) ব্যবহার করলে কোনো ধরনের ক্লিনিক্যাল সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর (যেমন: ব্যামবিউটামল) ব্যবহার করতে হবে।
রাত্রিকালীন হাঁপানিতে মোডিফাইড রিলিজড থিওফাইলিনের বিকল্প হিসেবে ব্যামবিউটামল ব্যবহার করে ভালো সুফল পাওয়া যায়।
হাঁপানির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেক রোগীই হাঁপানি চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলে, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি আরও ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ না করলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং অকেজো হবে।
শিশুদের হাঁপানির ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মায়েদের বেলায় গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
হাঁপানি চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
করটিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার ওরাল ক্যানডিয়াসিস সৃষ্টি করতে পারে। যেসব রোগী ইনহেলারের মাধ্যমে করটিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করে, তাদের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট (যেমন: অসটোক্যাল/ অসটোক্যাল জেধার) গ্রহণ করা উচিত।
থিওফাইলিন এবং এ-জাতীয় ওষুধসমূহ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং রোগীকে অবসন্ন করে দেয় বলে থিয়োফাইলিনের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি ব্রঙ্কোডাইলেটর— যেমন: ব্যামবিউটামল (ডাইলেটর) ব্যবহার করা উচিত।
এ কে এম মোস্তফা হোসেন
পরিচালক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১১
Leave a Reply