১ থেকে ৭ আগস্ট পালিত হলো বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ছিলো ‘সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়াতে দশটি শিশুবান্ধব পদক্ষেপ’। পৃথিবীর অন্যান্যদেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি সফলভাবে পালিত হয়।
শিশুর জীবনের শুভ সূচনা মায়ের দুধের মাধ্যমে। মায়ের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার এবং শালদুধ শিশুর প্রথম টিকা। শিশুর জন্য, মায়ের নিজের জন্য, পরিবার ও দেশের জন্য মায়ের দুধের অনেক উপকারিতা। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান মায়ের দুধেই আছে। সব খাবারের উপাদান সঠিকভাবে থাকায় সহজে হজম হয়, মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যেমন—ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগ থেকে মায়ের দুধই শিশুকে মুক্ত রাখে। মায়ের সঙ্গে আত্মার বন্ধনকে করে দৃঢ়।
জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশু তাড়াতাড়ি মায়ের দুধে অভ্যস্ত হয়। মায়ের দুধ বাড়ে এবং তার ফলে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যুর হার হ্রাস পায়। অন্যদিকে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে বুকের দুধ দিলে প্রসবের পর মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয়। ফলে মায়ের রক্তস্বল্পতা কম হয়। পরবর্তীকালে মায়ের স্তন, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে। দেশের সব শিশুকে জন্মের পর থেকেই ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে মায়েদের সহায়তা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী এ বছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছে ‘সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়াতে—১০টি শিশুবান্ধব পদক্ষেপ’। যেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়, সেখানে অবশ্যই এই ১০টি পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। পদক্ষেপগুলো হলো—
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বুকের দুধ খাওয়ানোর একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা নিশ্চিত থাকবে এবং এই নীতিমালা চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীকে জানাতে হবে।
এই নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
বুকের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে এবং কীভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, সব গর্ভবতী মাকে তা জানাতে হবে।
শিশুর জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার জন্য মাকে সব ধরনের সাহায্য করতে হবে।
কীভাবে দুধ খাওয়াতে হবে এবং শিশু আলাদা থাকলে কীভাবে দুধ খাওয়ানো যাবে, সেটা মাকে দেখিয়ে দিতে হবে।
শিশুকে শুধু বুকের দুধ দিতে হবে। ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার বা পানি শিশুকে দেওয়া যাবে না।
মা ও শিশুকে ২৪ ঘণ্টা একসঙ্গে, এক কক্ষে রাখতে হবে।
শিশুর চাহিদামতো বুকের দুধ দিতে মাকে উৎসাহিত করতে হবে।
বুকের দুধ খাওয়া শিশুকে কোনো কৃত্রিম চুষনি দেওয়া যাবে না।
চিকিৎসক, নার্স এবং যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাঁদের সমন্বয়ে একটি সাহায্যকারী দল তৈরি করতে হবে এবং মাকে হাসপাতাল থেকে ছুটির সময় ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলতে হবে, যাতে করে মা তাঁদের কাছ থেকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সাহায্য ও সহযোগিতা পেতে পারেন।
আসুন, আমরা সবাই আমাদের পরিবারের মায়েদের সাহায্য করি, যাতে মায়েরা তাঁর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। আগামী দিনের সুস্থ, সুন্দর নাগরিক হিসেবে আমাদের আজকের শিশুরা বেড়ে ওঠুক, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকুক। ভালো থাকুন, আপনারা সবাই।
তাহমীনা বেগম
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
শিশু বিভাগ, বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১১, ২০১০
Leave a Reply