এসট্রোজেন হরমোন কন্ট্রাসেপটিভ পিলে থাকে। এই হরমোন একটি বিশেষ মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। এই মাত্রা যদি না থাকে তাহলে পিল খেলেও কাজ হবে না। সাধারণত যেসব ওষুধ খিঁচুনি বন্ধের জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমন ফেনোবারবিটন, কারবামাজিপাইন, ফেনাইটোইন ও টোপিরামেট-এ ওষুধগুলো এই এসট্রোজন হরমোন নষ্ট করে দেয়। ফলে পিল নিয়মিত খাওয়ার পরও গর্ভবতী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ ওষুধগুলো যদি খেতেই হয় তাহলে যেসব কন্ট্রাসেপটিভ পিলে এই এসট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেশি মাত্রায় থাকে, সেসব পিল খাওয়া উচিত। খিঁচুনির ওষুধ এসট্রোজেন নষ্ট করা সত্ত্বেও পিলের মধ্যে হরমোন বেশি মাত্রায় থাকায় কিছু পরিমাণ নষ্ট হলেও বাকিটা কাজ করতে পারে। অথবা যেসব খিঁচুনির ওষুধ এসট্রোজন নষ্ট করে না, সেগুলো খাওয়া যেতে পারে। যেমন-ভেলপোরিক, ল্যামোট্রিজন বা গাবাপেনটিন।
তবে ভেলপোরিক ওষুধটা ডিম্বাশয়ে সিস্ট বা রসভর্তি ছোট ছোট থলে তৈরি করে থাকে। অনেক সিস্ট তৈরি হলে এটাকে পলিসিসটিক ওভারি বলে। এটা হলে মাসিকের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তারপর একসময় বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য এই ভেলপোরিক ওষুধ প্রজননসক্ষম বয়সে খাওয়া উচিত নয়। যদি খিঁচুনি বা মৃগীরোগ থাকার পরও এর ওষুধ না খাওয়া হয়, অন্যদিকে তিনি যদি গর্ভবতী হন, তাহলে খিঁচুনি হলে তাঁর গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার খিঁচুনির ওষুধগুলো ভ্রূণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ প্রভাব ঠোঁট বা তালুকাটা, হার্টের রোগ বা মেরুদণ্ডের সমস্যা করতে পারে।
এসব প্রভাব কিছু ওষুধ অল্প মাত্রায় ফেলে আর কোনোটি বেশি মাত্রায় ফেলে। এগুলো যাতে না হয় সে জন্য গর্ভবতী হওয়ার তিন মাস আগে থেকেই ওই ওষুধগুলো বাদ দিয়ে অন্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে এবং এই খিঁচুনি ওষুধের সঙ্গে অবশ্যই ফলিক এসিড বেশি মাত্রায় খেতে হবে। ফলিক এসিড খেলে খিঁচুনির ওষুধের যে নেতিবাচক প্রভাব ভ্রূণের ওপর হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেটা হতে দেয় না। সে জন্য অবশ্যই ফলিক এসিড অন্তত পাঁচ মিলিগ্রাম প্রতিদিন খেতে হবে।
এ ছাড়া গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে শেষের তিন মাসের দিকে খিঁচুনি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এ সময় শরীরে পানির পরিমাণটা বেড়ে যায়। ফলে খিঁচুনি ওষুধের ব্লাড লেভেলটা নিচে নেমে যায়। এ জন্য খিঁচুনির ওষুধ খাওয়ার পরও খিঁচুনি হতে থাকে। তাই এ সময়টাতে খিঁচুনির ওষুধের পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে হবে। আর প্রসবের পরপরই ওষুধের ডোজ আগের মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। শুধু শেষের তিন মাস বেশি মাত্রায় ওষুধ খেতে হবে।
খিঁচুনির ওষুধ ব্যবহার করার জন্য মায়ের শরীরে ভিটামিন-কের পরিমাণ কমে যায়। আর ভিটামিন-কে রক্ত জমাট বাঁধতে প্রয়োজন হয়। তাই প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
অন্যদিকে নবজাতকেরও নাভি থেকে অথবা মাথার ভেতরসহ অন্য স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব যাতে না হয় সে জন্য গর্ভাবস্থায় শেষ মাসে প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন-কে খাওয়া উচিত এবং নবজাতকের জ্নের সঙ্গে সঙ্গে এক মিলিগ্রাম ভিটামিন-কে ইনজেকশন দিতে হবে। তাহলে মা ও নবজাতক উভয়েরই রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
পরামর্শঃ কন্ট্রাসেপটিভ পিল খাওয়ার আগে দেখে নিন তার মধ্যে বেশি পরিমাণে এসট্রোজেন হরমোন আছে কি না। বিশেষ করে রোগী যদি ফেনোবারবিটন, কারবামাজিপাইন, ফেনাইটোইন বা টোপিরামেট ব্যবহার করেন। এসট্রোজেনের পরিমাণ বেশি মাত্রায় থাকা পিলগুলো খেলে যদি অসুবিধা হয়, তবে ওই খিঁচুনির ওষুধ বাদ দিয়ে লেমোট্রিজিন বা গাবাপেনট্রিন খেতে হবে। এ দুটোর মধ্যে গাবাপেনটিনের কার্যক্ষমতা কম। প্রজননসক্ষম বয়সে ভেলপ্রোরিক এসিড ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। গর্ভধারণ করতে চাইলে, দু-তিন মাস আগে থেকে পাঁচ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড নিয়মিত খেতে হবে এবং প্রসব পর্যন্ত এভাবে চালিয়ে যেতে হবে। গর্ভধারণ করতে চাইলে যে খিঁচুনির ওষুধগুলো শরীরে প্রবেশ করে শিশুর শারীরিক গঠনে ক্ষতি করে, তা বাদ দিয়ে অন্যগুলো ব্যবহার করতে হবে। একটি খিঁচুনির ওষুধ ব্যবহার করলে ঝুঁকির পরিমাণ শতকরা সাত ভাগ। আর যদি দুটি খিঁচুনির ওষুধ ব্যবহার করা হয় তাহলে ঝুঁকি শতকরা ১৫ ভাগ। তাই একটা ওষুধ ব্যবহার করে খিঁচুনি কমাতে পারলে অবশ্যই ভালো।
গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে খিঁচুনির ওষুধের পরিমাণটা বাড়িয়ে নিতে হবে। প্রসবের পরপরই আবার আগের মাত্রায় ওষুধ খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় শেষ মাসটাতে ২০ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন-কে খেতে হবে। নবজাতকের জ্নের পরপরই তাকে এক মিলিগ্রাম ভিটামিন-কে ইনজেকশন দিতে হবে।
ডা· সেলিনা ডেইজী
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply