ফিষ্টুলা (ভগন্দর বা নালী ঘা) মলদ্বারের একটি বিশেষ রোগ। এ রোগ পায়ুপথের ভিতরে গ্রন্থির সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। প্রথমত: সংক্রমণের কারণে মলদ্বারের পার্শ্বে ফোড়া হয়। বেশ কয়েকদিন ব্যথা থাকে এবং ফুলে যায়। এরপর এটি ফেটে গিয়ে মলদ্বারের পাশের কোন একটি জায়গা দিয়ে পুঁজ বেরিয়ে যায়। অতপর ব্যথা এবং ফুলা কমে যায়। রোগী বেশ কিছুদিন আরাম বোধ করেন। কিছু দিন ভাল থাকার পর হঠাৎ আবার মলদ্বার ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। দু’চারদিন পর পুরনো সেই মুখ দিয়ে আবার কিছু পুঁজ বের হয় এবং রোগী আরামবোধ করেন। চিকিৎসা না করা হলে এই প্রক্রিয়া বৎসরের পর বৎসর চলতে থাকে। পুঁজ পড়ার বিষয়টির তারতম্য ঘটে। সামান্য পুঁজ হলে রোগীরা এটিকে পুঁজ হিসাবে গণ্য করেন না। তখন তারা বলেন যে একটু আঠাল রস বের হয় বা মলদ্বারে একটু ভিজে যায় ইত্যাদি। পুঁজের সাথে সাধারণত: রক্ত যায় না। কিন্তু কখনো কখনো অল্প রক্ত যেতে পারে। মলদ্বারের চতুর্দিকে এক বা একাধিক মুখ দেখা দিতে পারে। তিন থেকে ছয়টি মুখ পর্যন্ত দেখেছি। রোগীরা প্রশ্ন করেন যে, এটি বিনা চিকিৎসায় বেশীদিন থাকলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে কিনা? ফিষ্টুলা দীর্ঘদিন থাকলেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে খুব কম ক্ষেত্রে হলেও হতে পারে। আর একটি বিষয় হচ্ছে পায়ুপথে ক্যান্সার বেশীদিন বিনা চিকিৎসায় থাকলে ফিষ্টুলা দেখা দিতে পারে। এরূপ পায়ুপথের ক্যান্সারের ফলে উদ্ভুত ফিষ্টুলার বেশ কয়েকজন রোগী দেখেছি।
ফিষ্টুলা বা ভগন্দর রোগের চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। অনেক রোগী আছেন ১০-২০ বছর এ রোগে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করছেন কিন্তু অপারেশন করছেন না, কারণ হিসাবে বলেছেন যে, অপারেশন করলে নাকি আবার হয়, তাই অপারেশন করে আর লাভ কি? আবার অনেকে অপারেশনে ভয় পান। ভয় পেয়ে কেউ কেউ তথাকথিত বিনা অপারেশনে চিকিৎসার জন্য হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান। কোন কোন হাতুড়ে ডাক্তার ইনজেকশনের সাহায্যে ভাল করার নামে বিষাক্ত কেমিক্যাল ইনজেকশন দেন। এই ইনজেকশনে রোগী ভীষণ ব্যথা অনুভব করেন এবং মলদ্বারের মাংসের পচন ধরে গায়ে জ্বর আসে। এরপর ঐ হাতুড়ে ডাক্তারকে যদি বলা হয় যে, এত কষ্ট এবং এই পচন ধরবে একথা তো আগে বলেননি। তখন তিনি উত্তর দেন যে, এগুলো বললে আপনি ইনজেকশন নিতেন না। এ প্রক্রিয়ার ফলে মলদ্বারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে যেমন মল আটকে রাখতে না পারা, মলদ্বার নীচে ঝুলে পড়া, মলদ্বার অতি সরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব ভূক্তভোগী রোগীরা লোকলজ্জার এবং সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবার কারণে এসব কথা ডাক্তার ছাড়া কারো কাছে প্রকাশ করেন না। পাইলসের চিকিৎসায় ও ইনজেকশন দেয়া হয় তাতে কারো টের পাবার কথা নয়। ব্যথা পাওয়ার প্রশ্নেই আসে না। আর সপ্তাহে একটি করে মোট সাতটি ইনজেকশন দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আর একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, পাইলস ছাড়া অন্যান্য রোগে ইনজেকশন দেয়ার জন্য বিধান নেই। তাই আপনার আগে জেনে নেয়া উচিত যে আপনার রোগটি আসলেই পাইলস কি না। এবার আসা যাক ফিষ্টুলা অপারেশন করলে আবার হয় কিনা এই প্রশ্নে। এক কথায় এর উত্তর দেয়া কঠিন। যেহেতু ফিষ্টুলার প্রকারভেদ রয়েছে এবং বিভিন্ন সার্জন ভিন্ন ভিন্ন অপারেশন কৌশল অবলম্বন করেন তাই এর সাফল্য তুলনা করা দুষ্কর। এছাড়া কি কারণে ফিষ্টুলা হয়েছিল তার উপরও ফলাফল নির্ভর করে। তবে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে খুব সংক্ষেপে বলতে হলে আমি বিগত নয় বছরের এ জাতীয় বহু অপারেশনের অভিজ্ঞতা থেকে বলব যে, জটিলই হোক বা বারে বারে হওয়া ফিষ্টুলাই হোক অপারেশনের পর আবার হওয়ার ধারণাটি অতিরঞ্জিত এবং কালেভদ্রে ঘটে। অপারেশনের পর আবার হওয়ার কারণগুলো পর্যালোচনা করা দরকার।
১। ফিষ্টুলার প্রকার ভেদ রয়েছে। যেমন সাধারণ ফিষ্টুলা ও জটিল ফিষ্টুলা। সাধারণ ফিষ্টুলা অপারেশন সহজসাধ্য। কিন্তু জটিল ফিষ্টুলা যেহেতু মলদ্বারের গভীরে মাংসপেশীর ভিতর প্রবেশ করে তাই এর চিকিৎসাও জটিল। এধরনের ফিষ্টুলা অপারেশন করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি থাকলে ভাল হয়। যেহেতু মলদ্বারের গভীরে প্রবেশ করে এবং এক ধাপে এই অপারেশন করলে রোগীর পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে তাই কয়েক ধাপে সিটন প্রয়োগের মাধ্যমে করলে অধিকতর সফলতা পাওয়া যায়।
২। ফিষ্টুলার নালীটি বিভিন্ন দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তুত করতে পারে। সেগুলো ধৈর্য্য সহকারে খুঁজে দেখতে হবে।
৩। ফিষ্টুলার ভিতরের মুখটি কোথায় তা সনাক্ত করতে হবে। অনেক সময় ভিতরের মুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।
৪। জটিল ফিষ্টুলা অপারেশনে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে ধৈর্য সহকারে সার্জনের কর্মসম্পাদন করা উচিত। যিনি প্রথম অপারেশন করেন তার হাতেই ভাল হওয়ার সর্বোত্তম সুযোগটি থাকে। বারবার অপারেশনে সাফল্যের সুযোগ কমতে থাকে।
৫। অভিজ্ঞ সার্জনগণের মতে, ফিষ্টুলা অপারেশনের পর সার্জনদের যত বদনাম হয়েছে অন্য কোন অপারেশনে এতটা হয়নি।
৬। অপারেশনের পর মাংস পরীক্ষা করা উচিত কারণ যদি এটি যক্ষ্মার কারণে হয়ে থাকে তাহলে যক্ষ্মার ওষুধ না খাওয়ানো পর্যন্ত এটি বার বার হতে থাকবে। আবার যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে বড় ধরনের অপারেশন করতে হবে।
৭। পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যেমন ক্রন’স ডিজিজ যদি সন্দেহ করা হয় তাহলে মলদ্বারের ভিতর কোলনস্কপি পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। এতে যদি এই রোগ ধরা পড়ে তাহলে বিশেষ সতর্কতার সাথে ফিষ্টুলা অপারেশন করতে হবে।
৮। পায়ুপথে ক্যান্সারের কারণে ফিষ্টুলা হলে ক্যান্সারের অপারেশন করতে হবে।
৯। সাফল্য ও বর্থ্যতার মাপকাঠি হচ্ছে তিনটি: (ক) পুনরায় ফিষ্টুলা হওয়া (খ) ক্ষত শুকাতে অতিরিক্ত দেরী হওয়া (গ) মল ও বায়ু ধরে রাখার অক্ষমতা।
বিভিন্ন গবেষণা পত্রে দেখা যায় জটিল ফিষ্টুলা আবার হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণত ৭-১৫% এবং সাধারণ ফিষ্টুলা আবার হওয়ার সম্ভাবনা ৪-৯%। ক্ষত শুকাতে দেরী হয় ৭% ক্ষেত্রে। বায়ু ও মল নিয়ন্ত্রণের সামান্য অক্ষমতা ৭-১২%।
অধ্যাপক (ডা:) এ কে এম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারী বিশেষজ্ঞ
জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল
৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মে ০৮, ২০১০
asad
amar 6 month dhore glutial regione a abses hoi.er pasapasi hand and poplitial fossa teo hoese.ami khub voye asi ami medicle a drain kore nileo kisu din por por abar hoi ami ki korte pari.
Bangla Health
আপনার বাংলিশ ঠিক বুঝতে পারছি না আমরা। দয়া করে বাংলায় লিখতে পারবেন?
Abdul Haque
প্রিয় এডমিন, আপনার সাহায্য চাইছি। আমি কি এই প্রবন্ধের লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি? আমার এই অসুখটি হয়েছে, গত দু’ সপ্তাহ আগে হঠাৎ একদিন টের পেলাম। আমি একজন সন্যাসী ধরণের মানুষ, এই সমস্যাটি নিয়ে আমি খুব বিরক্ত এবং বিব্রত। সিলেটে এ বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঠিকানা আমি জানি না। কাজেই জনাব ফজলুল হক সাহেবের পরামর্শ আশা করছি। আপনি কি আমার এ বার্তাটা তাঁর কাছে পৌঁছে দিতে পারেন? অনুরোধ!
Bangla Health
প্রবন্ধের নিচে ঠিকানা আছে, সেখানে যোগাযোগ করতে হবে।