পূর্ন বয়স্ক ব্যক্তির প্রতি পাঁচ জনের এক জন জীবনের যে কোন সময়ে কাঁধের ব্যথায় ভোগে। অল্প বয়স্কদের ব্যথার মূল কারণ হলো আঘাত এবং ব্যবহার জনিত ক্ষয় ও আঘাতের জন্য বয়স্কদের কাঁধে ব্যথা হয় । গঠনগতভাবে কাঁধ তিনটি হাড় দ্বারা গঠিত তিনটি জোড়ার সম্বন্বয়ে তৈরী এবং ত্রিশটি মাংসপেশী জোড়ায় বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া করায় ।
কাঁধে দুই ধরনের ব্যথা হয় – দূরের ব্যথা বা রেফার্ড পেইন (জবভভবৎবফ চধরহ) ও স্থানীয় ব্যথা বা লোকাল পেইন (খড়পধষধরুবফ চধরহ) ।
(ক) রেফার্ড পেইনের কারণ সমূহ :
১. নেকের হারনিয়াটেড ডিস্ক ও পিনচড নার্ভ (স্নায়ু) ।
২. সারভাইকেল স্পোনডাইলাইসিস ।
৩. ডায়াফ্রাম (বুক ও পেটের মাঝখানের পর্দা) ইরিটেশন ।
৪. পিত্ত থলির পাথর ও অন্যান্য অসুবিধা ।
৫. হ্রদ রোগ ও ফুসফুসের রোগ ।
৬. কার্পাল টানেল সিনড্রোম ।
(খ) কাঁধে লোকাল পেইনের কারণ সমূহ :
১. টেনডন প্রদাহ (টেনডিনাইটিস) ।
২. ক্যালসিফিক (ক্যালসিয়াম ডিপসিশন) টেনডিনাইটিস ।
৩. কাঁধের মাংসপেশী বা টেনডন ছিড়ে যাওয়া ।
৪. বার্সার প্রদাহ (বার্সাটিস) ।
৫. জয়েন্ট ইনফেকশন ।
৫. ফ্রোজেন শোল্ডার বা জমানো কাঁধ ।
৬. জোরার প্রদাহ (আর্থ্রাইটিস) ।
৭. জোরায় নতুন হাড় গজানো ।
৮. জয়েন্টের স্টাবিলিটি নষ্ট হয়ে যাওয়া ।
৯. জয়েন্ট ডিসলোকেশন (ডিসপ্লেসমেন্ট) একবার বা একাধিকবার ।
১০. ক্যাপসুল বা লিগামেন্ট টিয়ার বা ছিড়ে যাওয়া ।
১০.ল্যাবরাল টিয়ার বা ছিড়ে যাওয়া ।
১১. লিগামেন্ট বোনে (ক্যালসিফিকেশন) পরিণত হওয়া ।
১২. জোরার হাড়ের গঠনগত পরিবর্তন ।
রোগের লক্ষন সমূহ বা কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন
১. কাঁধের উপরিভাগে হালকা ব্যথায় হাত উপরে বা পাশে তুলতে ব্যথা বেড়ে যায়
২. জামা পরিধানের জন্য হাত পিছনে নিলে ব্যথা হয় বা হাত পিছনে নেওয়া যায় না
৩. পেন্টের পিছনের পকেটে হাত দেওয়া যায় না
৪. ব্যথা যুক্ত কাঁধে কাত হয়ে ঘুমানো যায় না
৫. বিশ্রাম অবস্থায় কাঁধে ব্যথা হয়
৬. চিড়-নি দিয়ে মাথার চুল আচড়াতে কষ্ট হয়
৭. হাত উপরে বা পাশে তুলতে না পারা
৮. রাতে কাঁধে ব্যথা হয় বা ব্যথার জন্য ঘুম হয় না বা ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে যায়
৯. হাত দিয়ে কোন কিছু তোলা বা বহন করা যায় না
১০. আর্থ্রাইটিসের কারনে জয়েন্ট ফুলে যায়
১০. আঘাতের কারনে জয়েন্ট বিকৃত হলে
১১. আঘাতের কারনে জয়েন্টের স্টাবিলিটি নস্ট হয়ে – জোড়া ছুটে যাবে – এই রকম মনে হলে
চিকিৎসা বা প্রতিকার: কাঁধের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ইহার কারণ সমূহের উপর । অধিকাংশ কাঁধের রোগ সমূহ মেডিকেল বা কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো হয় । তবে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে রোগের লক্ষণ সমূহ, রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা এবং কিছু ল্যাবরেটরী পরীক্ষা প্রয়োজন ।
ল্যাবরেটরী পরীক্ষা : (১) এক্স-রে (২) আলট্রাসনোগ্রাফী (৩) রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা (৪) জয়েন্ট ফ্লুইড পরীক্ষা (৫) এম, আর, আই.
চিকিৎসা (কনজারভেটিভ) : (১) বিশ্রাম (২) গরম ও ঠান্ডা সেক (৩) স্ট্রেসিং বা ব্যায়াম (৪) ফিজিকেল থেরাপি – এস ডব্লিউ ডি (ঝ.ড.উ), ইউ এস টি (৫) ব্যদনা নাশক ওষুধ (৬) স্টেরয়েড ইনজেকশন সার্জারী
রোগ কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো না হলে অপারেশন করাতে হয় এবং কিছু রোগের চিকিৎসার জন্য সার্জারী একান্ত প্রয়োজন । দীর্ঘদিন র্কাঁধ বিনা চিকিৎসায় থাকলে র্কাঁধের পেশী দুর্বল হয়, র্কাঁধ শক্ত হয়ে যায় এবং আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট নস্ট হয় । বর্তমানে আর্থ্রোস্কোপ, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে র্কাঁধে প্রবেশ করিয়ে অনেক রোগের চিকিৎসা করা হয় । আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারীর পর নিয়মিত এবং উপযুক্ত রিহেবিলিটেশনের মাধ্যমে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে ।
ডা: জি,এম, জাহাঙ্গীর হোসেন
কনসালটেন্ট – হাড় , জোড়া, ট্রমা ও
আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারী
ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০১০
Leave a Reply