শিশুর মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই কয়েকটি বিষয় আলোকপাত করা প্রয়োজন। তাহলো-
১. শিশুর দাঁত উঠা: ২টি পর্যায়ে দাঁত ওঠে, অস্থায়ী দাঁত ২০টি ডমস -২.৫ বছর। স্থায়ী দাঁত ২৮টি ৬ বছর থেকে ১৩ বছর। আক্কেলদাঁত ৪টি, ১৭ থেকে ২১ বছরে। মাতৃগর্ভে থেকে দাঁত নিয়ে জন্মগ্রহণ-সামাজিক কৌতহল সৃষ্টি করে।
২. দাঁত ওঠার প্রাক্কালে শিশুর সমস্যা-
০ পেট খারাপ হওয়া ০ ভূলধারণা/কাকতালীয় ঘটনা ০ পিতা-মাতার কর্তব্য শিশুর পরিষ্কার পরিচ্ছনতার প্রতি নজর দেয়া ০ মুখ গহ্বরে ছত্রাকের ও হাপেস ভাইরাস ইনফেকশান।
৩. শিশুর দাঁত উঠতে দেরী হলে, কারণ কি? (দুধ দাঁত): ০ মাড়ি কিংবা চোয়ালের হাড়ের গঠনগত ক্রটি ০ হরমোন জনিত রোগ
০ ভিটামিন ডি এর অভাব-রিকেট ০ ব্রেইনের না সমস্যা ০ চোয়ালের হাড়ে টিউমার ০ জন্মগত ক্রটি। ০ স্থানীয় কারণ (স্থায়ী দাঁত)
০ যথা সময়ের পূর্বে দুধ দাঁত ফেলে দিলে ০ স্থায়ী দাঁতের বীজানুর অনুপসি-তি ০ দাঁত সংখ্যায় বেশি থাকলে ০ দাঁত কে ঘিরে কোন সিক্ট বা টিউমার থাকলে ০ দুধদাঁতের গোড়ায় দীর্ঘ মেয়াদী ইনফেকশানও স্থায়ী দাঁতের ক্ষতিসাধণ করতে পারে।
করণীয় কি:
০ শিশুর মা-বাবার উচিত এ অবস্থায় ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. দাঁত গঠনে খাদ্য ও ভিটামিনের ভূমিকা: শিশুর দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় খাদ্য যেমন-দুধ, ডিম, ছোট মাছ যে গুলো কাটা সহ খাওয়া যায়, যেমন কাচকি মাছ, মলা মাছ প্রয়োজন। এছাড়া ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ভিটামিন-এ, রঙ্গীন ফল, পাকা কলা, পেঁপে, গাজর। ভিটামিন-সি- সবুজ ফল, পেয়ারা, আমলকি, কাঁচা মরিচ। ভিটামিন ডি-সূর্যের আলো থেকে ও আয়োডিন, খাদ্য থেকে যেমন সামুদ্রিক মাছ, ও মাছের তেল।
৫. শিশুর মুখ ও দাঁতের সাধারণ রোগ:
০ নাসিং ক্যারিজ, ফিডার/বুকের দুধ মুখের ডেন্টাল ক্যারিজ বা ক্ষয় রোগ ০ খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গত কারণে হয়।
কারণ: চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার যেমন, চকলেট, জুস, টপি, আইসক্রিম বেশি পরিমাণে খেয়ে দাঁত পরিষ্কার না করলে। ০ প্রতিরোধ: মিষ্টি চকলেট, আইসক্রিম, মিমি কম দেয়া, এবং নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা। বোতলে বা ফিডারে দুধ না খাওয়ানো। বুকের দুধ ঘুমের মধ্যে বন্ধ রাখা। কারণ এ থেকে নাসিং ক্যারিজ, মধ্যকালে ইনফেকশন। শিশুর দাঁতে কোন কালো দাগ বা গর্তহলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা করে নেয়া।
৬. স্কুলে ছেলে মেয়েদের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য পরিচর্যা । কারণ, স্কুলে ওরাল হেলথ কেয়ার প্রোগ্রাম (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) না করা। বিদ্যালয়ে ফাস্টফুড, মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি না খাওয়া। স্কুলে দীর্ঘ সময় থাকে।
করনীয় কি?
০ প্রতি দু’মাস অন-র ছাত্র-ছাত্রীদের মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করানো ০ স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্লাশে ১০ মিনিটের দাঁত ব্রাশিং শেসন হাতে কলমে শিখা। ০ স্কুলে ফ্লোরাইড যুক্ত পানি পানের ব্যবস্থা করা। ০ ক্লাস রুটিনে ও সিলেবাসে মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা অন-র্ভূক্ত করা।
শিশুর মুখ ও দাঁতের সমস্যায় করনীয়:
০ প্রি-নেটাল কাউন্সিলিং-বিশ্বের বহু দেশে প্রচলিত
০ গর্ভকালীন সময়ে অন-ত ২ বার মায়ের দাঁত পরীক্ষা
০ দাঁত উঠতে দেরি হলে, দাঁতের ব্যথা হলে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ গ্রহণ।
০ নিয়মিত রাতে ঘুমের পূর্বে ও সকালে নাস-ার পর দাঁত ব্রাস করা।
০ দাঁতে কোন গর্ত হলে তা অবহেলা না করে দ্রুত ফিলিং করানো।
০ প্রতি ৬ মাস অন-র মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করানো্
০ চকলেট, আইসক্রিম, ফাস্টফুড কম খাওয়ানো।
ডা: মো: মুজিবুর রহমান হাওলাদার
সহযোগী অধ্যাপক, ডেন্টাল ফ্যাকাল্টি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ০৬, ২০১০
Leave a Reply