শীতকাল। যারা সুস্থ সবল মানুষ তাদের জন্য এই শীত আনন্দের। আর যারা বক্ষব্যাধিতে তথা শ্বাসকষ্টে আক্রান- তাদের জন্য এই শীত অনেক সময় নিরানন্দের। বায়ুমন্ডলের দূষণ আমাদের দেশের অনেক সহরেই ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয় এই শীতের মৌসুমে। কোন কোন শহরে আবার সালফার-ডাই-অক্সাইড (একটি মারাত্মক দূষণীয় গ্যাস) এই সময়ে বাতাসে বেশী থাকে। সেটি ফুসফুসে ঢুকে ভয়ানক প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে হাঁপানীর টান বেশ বেড়ে যায়। সূক্ষ্ম ভাসমান পদার্থের কণা এই শীতের সময়ের ভাড়ী আবহাওয়াতে অনেক পরিমাণ থাকে। আর তাই আমাদের এই শহরগুলিতে শীতের সময়ে হাঁপানী এবং ফুসফুসের ব্যাধি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। আমার পরামর্শ হল এ সময়টা যদি সম্ভব হয় তবে কিছুদিনের জন্য গ্রামের মুক্ত সুন্দর আবহাওয়ায় বেড়িয়ে আসতে পারেন। ঋতু পরিবর্তন বিশেষ করে শীতের সময় বা শীতের শুরুতে হাঁপানীর লক্ষণগুলো বিশেষভাবে চোখে পড়ে। যাদের রোগটি নতুন করে শুরু হয় তাদের এই আক্রমণটি দিনের যে কোন সময় হঠাৎ হতে পারে তবে সাধারণত ভোরের দিইে শুরু হয়। প্রথম শ্বাসকষ্ট হালকা ধরনের এবং খুব ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। এই ধরনের হাঁপানীকে এক্সট্রিনসিক বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কতগুলো লক্ষণ আগেই দেখা যায়। যেমন ক্রমাগত হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ নাক বা মুখ চুলকানো। আবার অনেকের গলা খুসখুস করে, ব্যথা ও জ্বর হয় এবং বেশি হতে থাকে বা ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়। হাঁপানী যদি পুরোন হতে থাকে এর লক্ষণ উপসর্গগুলোও কিন্তু কিছু কিছু পরিবর্তিত হতে থাকে। আগে যেমন হাঁচি এবং নাক দিয়ে অবিরাম পানি পড়তে থাকতো সেটা কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। হাঁপানীর কষ্টটাও অনুপাতে বাড়ে। নাকে বিছানা ঝাঁড়ার ধূলো গেলে আগে হাঁচির যে দমকটা আসতো তা না হয়ে সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমরা সুচিকিৎসার মাধ্যমে হাঁপানী যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি তবে কিন্তু রোগী তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। কারো কারো হাঁপানীর আক্রমণ আবার অন্য রকমের উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়। তাদের এগুলো হল ইনট্রিনসিক ধরনের। তাদের এই শ্বাসকষ্ট বহু সময় ধরে আসে- আসে- ক্রমাগতই চলতে থাকে। মাঝে মাঝে একটু বাড়ে আবার মাঝে মাঝে কখনও একটু কমে। তাদের হাঁচি কাশি নাক চুলকানো বা পানি পড়া নাও থাকতে পারে। এদের বুক থেকে সাঁ সাঁ শব্দ খুব বেশি হয়তো শোনা যায় না কিন্তু শ্বাসকষ্টটাই হয়ে দাঁড়ায় খুব ভয়ংকর। শীত আসছে তাই শীতের জামা কাপড় পরার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে মনে রাখবেন শীতের জামা-কাপড় নতুন করে ধূয়ে ব্যবহার করতে হবে। বাক্স থেকে বের করে সরাসরি পরবেন না। লেপ প্রথমে ৪/৫ দিন ক্রমাগত রোদে দিন এবং ঝাঁড়-ন। পরে ব্যবহার করুন। কম্বল ব্যবহার করা লেপের চাইতে ভাল। তাই সম্ভব হলে কম্বল কভার ব্যবহার করুন। যাদের হাঁপানী আছে তারা এই সময় ঠান্ডা পানি এবং পানীয় খাবেন না। অল্প গরম পানি পান করুন। প্রচন্ড শীতে ঘর থেকে বের হলে মাফলার ব্যবহার করা ভাল। হাঁপানী রোগী নিজে ঘর ঝাঁড় দিবেন না। ঝাঁড় দেবার সময় অন্য ঘরে থাকুন। প্রায় আধঘন্টা পর্যন- ঐ ঘরে যাওয়া পরিহার করুন। শীত কাল-তাই বাজারে উঠছে সুস্বাদু খাবার দাবার। কিন্তু আপনাকে কিছু খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন-ইলিশ, চিংড়ি, শুটকি, পুঁটি, বোয়াল, গজার মাছ, গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, পাকা কলা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, পুঁই শাক, কচুর শাক, টমেটো, নারিকেল প্রভৃতি খাবারের ব্যাপারে। শীতের সময় ঘরের বাতাসে “মাইট” জীবাণুর পরিমাণ বেশী থাকে। এছাড়া এই সময় শীতের জামা-কাপড়, সুটকেস বা ট্রাংক থেকে বের করা হয়। এ সবকিছুই ঘরে “মাইট”-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যে কোন জামা-কাপড়, লেপ কাঁথা সারা বছর ব্যবহার না করার ফলে “মাইট” নামক জীবাণুর জন্ম হয়। তাই ওগুলো ব্যবহারের সাথে সাথে হাঁপানীর টান উঠতে পারে। এই সুন্দর শীতকালটিকে যাতে আনন্দময় করা যায় এ ব্যাপারে একজন হাঁপানী রোগীর সতর্কতা গ্রহণ করা অপরিহার্য। অধ্যাপক ডা: ইকবাল হাসান মাহমুদব্যক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞইকবাল চেষ্ট সেন্টার ৮৫, মগবাজার, ওয়ারলেছ মোড়, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ২৩, ২০১০
Leave a Reply