দাঁতের ডাক্তারদের চেম্বারে অপরিশোধিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেও ঘাতক ব্যাধি এইডস সংক্রমিত হতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও মরণঘাতী রোগ হচ্ছে এইডস। মুখ গহ্বরের সাথে এ রোগের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাই এই রোগটি সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতন থাকা একান্ত প্রয়োজন। এই রোগটির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। শুধু সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারলে এইডস রোগটি থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। বিশেষত শারীরিক মিলন, সমকামিতা, অপরের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ (যা মাদকদ্রব্য সেবনকারীরা সাধারণত গ্রহণ করে) ব্যবহার না করা, বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, বিনা পরীক্ষায় রক্ত গ্রহণ এবং চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকেই এইডস এর জীবাণূ ছড়ায়।
মুখ গহ্বরের লক্ষণসমূহ
মুখ গহ্বর প্রদাহ খুব বেশী লক্ষণীয়। শতকরা ৫৫ জন রোগীর কাপোসিজ সারকোমা বিশেষত: মুখের ভিতর তালুতেই (শতকরা ৭৭ ভাগ) লক্ষণীয়। শতকরা ৩৩ জন রোগীর মধ্যে এই টিউমারের ফলে বহুবিধ মুখ গহ্বর প্রদাহ দেখা যায়। কাপোসিজ সারকোমা সাধারনত: লক্ষ্যহীন অবস্থাতেই থাকে। শ্লেস্মা ঝিলির রঙ পরিবর্তন হয়ে নীলাভ রঙ ধারণ করে। তবে তা অনেক সময় সংবহন্তনালিকার প্রদাহ বা কালশিরার বলে ভুল হয়। মনিলিয়াসিস হচ্ছে মুখের একটি সাধারণ সুযোগ সন্ধানী জীবাণু। এইডস রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের ভিতর আরও যে সব রোগের প্রকাশ ঘটে সেগুলো হচ্ছে শল্কসদৃশ কোষ ক্যান্সার বারকিটর লসিকা (ইৎঁশরঃরং খুসঢ়যড়সধ) ভেনিবেল আঁচিল এছাড়াও পাকন্ত্রিকের ফ্লোরা ও জীবাণুজনিত সংক্রমণ এইডস রোগীর মুখে আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
অণুবীক্ষন যন্ত্রে এই সমস্ত রোগ জীবাণুর সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। ইদানিংকালের জরিপে দেখা যায় প্রতি ৬ মাসে পৃথিবীতে এই রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হচ্ছে। আজ পর্যন্ত এইডস রোগীদের আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষকৃত হয়নি। ফলে মৃত্যু হারও অনেক বেশি। অনাক্রমের ব্যবস্থার কার্যকারিতা একেবারে নির্জীব হয়ে যাওয়া ও দর্দম প্রকোপবান সুযোগ সন্ধানী সংক্রমনের কারণেই এইডস রোগীদের ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটে।
দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় এইডস রোগীর সাবধানতা:
১. দন্ত চিকিৎসক, নার্স ও ডেন্টাল এ্যাসিসটেন্ট সকলেই গ্লোভস, মাস্ক, এপ্রোণ ও চোখ ঢাকার জন্য চশমা ব্যবহার করা প্রয়োজন।
২. স্থানীয়ভাবে অবশ করার সময় অথবা দেহে রক্ত দেবার প্রয়োজনের সময় ইনজেশনের জন্য নতুন সুঁচ বিশেষত: ডিসপোজিবল শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
৩. যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরে ও আগে নির্বীজক যন্ত্রে ১২১০০ সেন্টিগ্রেডে ২০ মিনিট অথবা শুকনো গরমে এ ১৬০০ সেন্টগ্রেডে দুই ঘন্টা অথবা পানিতে ১০০০ সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট রেখে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। বীজবারক হিসেবে ইথাইল এ্যালকোহল ও ক্লোরহেক্সিডিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
সুযোগ সন্ধানী প্রদাহ এবং জীবাণু সংক্রান্ত প্রদাহ:
দন্তাবরক প্রদাহ এইচ.আই.ভি প্রদাহে আক্রান্তদের মধ্যে এই রোগটি সাধারণত: লক্ষণীয়। এই সময়ে দ্রুত মাড়ির প্রদাহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের সংক্রমণ শুরু হয়। একটি ওরাল এইডস সেন্টারে (আইসিএসএফ) লক্ষ্য করা গেছে সমকামী এবং শিরাতে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী মহিলাদের মধ্যেই এই প্রদাহ বেশি লক্ষণীয়। এইডস আক্রান্তদের সাধারণত: মাড়ির রোগ থেকে শুরু করে তীব্র কোষ বিনষ্টকারী মাড়ির প্রদাহ হতে পারে। এইডস রোগীদের মাড়িতে একটি পাতলা লাল বর্ণের রেখা লক্ষ্য করা যেতে পারে যা মাড়ির পারিপার্শ্বিক অবস্থানে প্লাক না থাকলেও কিংবা নিয়মিত মুখের যত্ন নিলেও হতে পারে।
প্রতিরোধ:
মরণঘাতি রোগ এইডস্তএর আক্রামণ থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধ এর একমাত্র উপায় তিনটি পরিবারের সদস্যকে এর সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করা এবং দন্ত চিকিৎসার সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেমন্তডিসপোজিবল সুঁচ এবং জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন এবং সেই সাথে দৈনন্দিন জীবনে সাবধানতা অবলম্বন করা যেমন প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্মের বিধিনিষেধ মেনে চলা। ধূমপানজনিত কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার বন্ধ করলে এবং হেপাটাইটিস্তবি ভাইরাসজনিত কারণে লিভার ক্যান্সার, হেপাটাইটিস্তবি প্রতিষেধক টিকা নিলে যেমন প্রতিরোধ সম্ভব তেমনি এইডস রোগ প্রতিরোধে রক্ত গ্রহণ বা শল্য চিকিৎসাকালে জীবাণুমুক্ত সুঁচ ব্যবহার অথবা শারীরিক মিলনকালে সতর্কতা অবলম্বন অত্যাবশ্যক বিশেষত: মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীরা (যারা পেথিডিন ইনজেশন নেয়) অন্য কারো ব্যবহৃত সুঁচ গ্রহণ না করাই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। মুখগহ্বরে কোন ক্ষত বা ঘা দীর্ঘদিন মাড়ির প্রদাহ ইনফেকশন অবস্থান করলে বা না শুকালে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তবে মনে রাখা প্রয়োজন প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়।
লেখক :বিভাগীয় প্রধান
ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টিষ্ট্রি, বারডেম
চেম্বার : ১৫/এ, গ্রীন স্কয়ার, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২০৫।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ১৬, ২০১০
Leave a Reply