সমস্যা: আমার বয়স ১৫ বছর আট মাস। ওজন ৫৪ কেজি। উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট। আমি ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চা করি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার গানের শিক্ষক আমাকে বলেন, আমার কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসছে। বয়ঃসন্ধিকালের এই সময়ে ছয়-সাত মাস তিনি আমাকে গান না গাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা এ সময় গান গাইলে গলার স্বরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তাঁর কথামতো আমি এক বছর গান গাওয়া বন্ধ রাখি। কিন্তু আগে আমি যে স্কেলে গান গাইতাম, বর্তমানে আমার গানের স্কেল তার চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। সম্প্রতি আমাকে আরেকজন শিক্ষক বলেছেন, বয়ঃসন্ধিকালে গান গাইলে গলায় কোনো প্রভাব পড়ে না। উল্লেখ্য, আমার কণ্ঠস্বর এখনো পরিণত হয়নি, অর্থাত্ গলায় এখনো পুরুষালি ভাব আসেনি। বয়ঃসন্ধিকালে গান গাইলে গলায় কি কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে? গলার স্বর সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হতে কত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে? গলার স্বর পরিবর্তিত হওয়ার কোনো শনাক্তকরণ চিহ্ন আছে কি? আমার গানের স্কেল নিচে নেমে যাওয়ায় আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
আসিফ, মাইজদী, নোয়াখালী
পরামর্শ: বয়ঃসন্ধিকালে স্বরের পরিবর্তন হওয়া শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের স্বরযন্ত্রের গঠন ভিন্ন হয়। ছেলেদের স্বরযন্ত্র লম্বা হয় ও ভোকাল কর্ড একটু মোটা হয়, স্বরযন্ত্রের পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া ১৮ মাস থেকে তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়। সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে এই পরিবর্তন সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। তোমার বয়স যেহেতু ১৫ বছরের ওপরে, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে বয়ঃসন্ধিগত স্বরের পরিবর্তন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই সময়ে অন্যান্য পুরুষালি বৈশিষ্ট্য (গোঁফ, দাড়ি ওঠা) দৃশ্যমান হয়। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে তোমার হরমোন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালে সাধারণভাবে সংগীতচর্চাতে মানা নেই। তবে এ সময়ে গান গাইতে গেলে স্বর ভেঙে যাওয়া ও স্কেল ধরে রাখতে না পারার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সময়ে শুধু স্বাভাবিক স্তর বা স্কেলে গান করতে হবে।
কণ্ঠনালিতে (ভোকাল কর্ড) সামান্য চাপ পড়লে কিছু ব্যায়াম যেমন, শ্বাসের ব্যায়াম, গানের জন্য প্রস্তুতি ব্যায়াম ও কণ্ঠস্বরের ব্যায়াম করে এ সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পিচ থেরাপি লাগবে। এর পরও যাদের গান করতে অসুবিধা হয়, অথবা যাদের প্রথম থেকেই স্বরের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়, তাদের ক্ষেত্রে স্বরের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ বা জোর করে গান গাওয়া কোনোটিরই প্রয়োজন নেই।
এ রকম অবস্থায় কয়েক মাস সংগীতচর্চা না করাই উচিত। যারা অতিরিক্ত চাপ দিয়ে সংগীতচর্চা চালিয়ে যাবেন, তাঁদের ভোকাল ডিসঅর্ডার বা কণ্ঠনালিতে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। গলার স্বর পরিবর্তন হওয়ার কোনো শনাক্তকরণ চিহ্ন নেই, তবে এ সময় গলার স্বর মোটা হয়ে যায় এবং স্বরযন্ত্রের পুরুষালি গঠনের ফলে গলার সামনে অ্যাডামস অ্যাপল উঁচু হয়ে যায়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের কণ্ঠস্বর এক অকটেভ নিচে নেমে যায়। তাই তোমার কণ্ঠস্বরের স্কেল নেমে যাওয়ায় মোটেই দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। তুমি স্বাভাবিক সংগীতচর্চা চালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয়। চিকিত্সাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ পরামর্শ দেওয়া হলো। তবে সংগীতচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য তুমি প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সংগীতশিক্ষকের পরামর্শ নিতে পার।
পরামর্শ দিয়েছেন
আবুল হাসনাত জোয়ারদার
অধ্যাপক, নাক, কান ও গলা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৩, ২০১০
Pabetro kumar
আচ্ছা স্যার, অনেক গান আছে যে গুলো উুঁচু স্কেলের গান কিন্তু সেগুলো আমি এখন আর গাইতে পারি না, কিন্তু ৪-৫ বছর আগে গাইতে পারতাম এর মানে হল আমার কন্ঠস্বর এখন আর উুঁচু স্কেলে ওঠে না, বয়স ২০ বছর। এখন আমি কি আবার আগের মত উুঁচু স্কেলে গান গাইতে পারবো?
Bangla Health
চর্চার অভাব। গানের মাস্টার ভালো বলতে পারবেন।