খুবই সাধারণ একটা সমস্যা, তবে ভুক্তভোগী সবাই জানেন, এ ধরনের অসুখ শরীর ও মনকে কতটা কষ্ট দেয়, কতটা ভোগায়। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও মূলত গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতের পরিবর্তনই অনুভূত হয় এবং আমরা বুঝতে পারি। খুব গরমে আমরা যেমন কষ্ট পাই, তেমনি তীব্র শীতও আমাদের অনেক ভোগায়। প্রকৃতি তার নিজস্ব খেয়ালে চললেও মানুষের শরীর প্রায়ই এ ধরনের ঋতু পরিবর্তনে বিগড়ে যায়। এতে দেখা দেয় নানা অসুখ। সাধারণ সর্দিজ্বরে ভোগেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেকেরই হয়তো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকায় সমস্যা কম হয়, কিন্তু বৃদ্ধ ও শিশুরা ভুক্তভোগী তুলনামূলক বেশি।
লক্ষণ:
- জ্বর হয়, কখনো বেশ তীব্র, যা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত।
- সর্দি, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরে বা নাক বন্ধ থাকে।
- মাথাব্যথা।
- হাঁচি।
- শরীর ম্যাজম্যাজ করে, অবসাদগ্রস্ত থাকে।
করণীয়: এ ধরনের সমস্যা মূলত ভাইরাসজনিত প্রদাহ থেকে হয়ে থাকে। এ রোগ সাধারণত কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে গলাব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ এবং স্বাভাবিক সব খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি খেতে হবে। মৌসুমি ফলের পাশাপাশি রুচি অনুযায়ী যেকোনো ফল খাওয়া ভালো। সর্দি সমস্যার জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন—সেট্রিজিন, লোরাটিডিন-জাতীয় ওষুধ একক মাত্রায় খেয়ে দেখা যায়, চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া শুরুতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়। এতে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে চিকিত্সার খরচও বেড়ে যায়। তাই দুই দিনের মধ্যে সুস্থ বোধ না করলে নিকটস্থ চিকিত্সক বা হাসপাতালে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা: সাধারণত এ-জাতীয় অসুখে রুটিন কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। এর মধ্যে রক্ত, বুকের এক্স-রে ও প্রস্রাবের পরীক্ষা করা হয়।
চিকিত্সা: প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন, মাঝেমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক মূলত ওপরের শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ অনুমিত হলে দেওয়া হয়। জ্বর কমানোর জন্য সাপোজিটরি বা পায়ুপথে জ্বরের ওষুধ দেওয়া হয়। পানি দিয়ে স্পঞ্জ করতে বলা হয় এবং আলো-বাতাসপূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ-জাতীয় ভাইরাস সংক্রমিত অসুখ বেশ ছোঁয়াচে, তাই হাঁচি-কাশির সময় রোগীকে সতর্ক থাকতে এবং রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করতে বলা হয়, যা অন্যের ছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে। শীতে সবার সামর্থ্য অনুযায়ী আরামদায়ক গরম কাপড় পরিধান করা উচিত। অতিরিক্ত গরম কাপড়ে শিশুদের ঘাম হয়। এ থেকেও সর্দিজ্বর হতে পারে। প্রতিদিন কুসুম গরমপানিতে গোসল করা এবং এই সময়ে ঠান্ডাজাতীয় খাবার একেবারে না খাওয়াই উত্তম।
সুনাম কুমার বড়ুয়া
ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৬, ২০১০
Leave a Reply