ডায়াবেটিক রোগীরা কাঁধে আঘাত পেলে, সারভাইক্যাল স্পাইলোসিস থাকলে অথবা কোনো কারণ ছাড়াই ডায়াবেটিস রোগের জটিলতা হিসেবে কাঁধে ব্যথা বা ফ্রোজেন সোল্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন। ফ্রোজেন সোল্ডার বেশির ভাগ সময়ই যন্ত্রণাদায়ক ও নিদ্রাসংহারি। বেশির ভাগ রোগী সারা দিন ব্যথা অনুভব না করলেও আক্রান্ত হাত দিয়ে কোনো বস্তু ধরতে গেলে কিংবা রাতে ঘুমোতে গেলে হঠাত্ ব্যথা এবং তীব্র অস্বস্তি অনুভব করে থাকেন। একপর্যায়ে রোগীরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমনকি জামা-কাপড় পরিধান বা খোলা এবং টয়লেট গিয়েও অসুবিধা অনুভব করেন। এ রোগটি রাতের ঘুম কেড়ে নেয় এবং স্বাভাবিক কর্মচঞ্চলতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
কোন ধরনের ডায়াবেটিক রোগীর এ রোগ বেশি হয়: যাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না, আগে ঘাড়ের ব্যথায় ভুগেছেন, হার্টের অসুবিধা আছে এমন ব্যক্তিই ফ্রোজেন সোল্ডারে আক্রান্ত হন বেশি। পুরুষ-মহিলা অনুপাত সমান। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগের হার সবচেয়ে বেশি।
কী চিকিত্সা নেবেন: ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ব্যথার ওষুধ সেবন নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে ভালো সমাধান। ম্যানিপুলেশ ফ্রোজেন সোল্ডারের চিকিত্সায় সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। সাময়িক ব্যথা নিরাময়ে ইলেকট্রো থেরাপির সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। বাড়িতে করার জন্য প্রদর্শিত ব্যায়ামগুলো রোগীকে মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। গোসলের সময় আক্রান্ত কাঁধে গরম পানি ঢাললে আরাম পাবেন। অনিদ্রা দূর করতে ঘুমের ওষুধ সেবন করা যাবে।
কখন চিকিত্সা নেবেন: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগীরা তিন-চার মাস ব্যথায় ভোগার পর ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে আসেন। এর আগে রোগী ওষুধ বা অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এ ক্ষেত্রে কাঁধ একেবারে জমে যায়। ভালোভাবে ম্যানিপুলেশন করা যায় না। চিকিত্সা দীর্ঘমেয়াদি হয়। এতে ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি দুটোই বৃদ্ধি পায়। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা যেকোনো পর্যায়ের কাঁধে ব্যথা অনুভব করলেই ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রিভেনটিভ ফিজিওথেরাপি কাঁধ জ্বলে যাওয়া রোধ করবে।
শেষকথা: চিকিত্সা শুরুর আগে রোগের কারণ নির্ণয় জরুরি। বিভিন্ন প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে, এমআরআই রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে। ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিত্সার প্রধান শর্ত হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। চিকিত্সকের পরামর্শমতো চিকিত্সা নিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কাঁধের ব্যথার চিকিত্সা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
মোহাম্মদ আলী
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯
Leave a Reply