ওষুধ নিয়ে কথা
ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ট্যাবলেট হোক, ক্যাপসুল কিংবা সিরাপ-যেটাই হোক না কেন। কেননা তাপ, আলো, জলীয় বাষ্প ওষুধের স্থায়িত্বের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ তৈরির সময় নানা তাপমাত্রায় স্ট্যাবিলিটি টেস্ট করে ওষুধের মেয়াদকাল নির্ধারণ করে থাকে। ওষুধের সেলফ লাইফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ওষুধের উৎপাদনের তারিখ থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পর্যন্ত বলা হয় ওষুধের সেলফ লাইফ। কোনো কোনো ওষুধের সেলফ লাইভ দুই বছর হয়, আবার পাঁচ বছরও হতে পারে। সাধারণত ট্যাবলেটের বেশি হয়, আবার ইনজেকশনের সেলফ লাইফ কম হয়। আবার ওষুধ কীভাবে রাখা হচ্ছে অর্থাৎ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, সেটার ওপরও সেলফ লাইফ নির্ভর করে। ওষুধ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, তা ওষুধের মোড়কের গায়ে লেখা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে লেখা থাকে ওষুধটি যেন সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখা হয় এবং শুষ্ক জায়গায় থাকে। কোন ওষুধ কত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, কোনো কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, কিডনি রোগের জন্য ইনজেকশন ইপোয়াটিন আলফা। এই ইনজেকশন সব সময় চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার ভেতরে সংরক্ষণ করতে হবে; এর ব্যত্যয় হলে ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই যে কম তাপমাত্রায় ধারাবাহিক সংরক্ষণ, এটাকে বলা হয় কোল্ড চেইন। আরেকটু ভালো করে বলা যায়, ওষুধের উৎপাদনের সময় থেকে রোগীর শরীরে প্রবেশের মুহূর্ত পর্যন্ত যে একই রকম কম তাপমাত্রার সংরক্ষণ, এটাকে বলা হয় কোল্ড চেইন। ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এমন ওষুধের কার্যকারিতা বেশি দিন পর্যন্ত থাকে। ওষুধের দোকানে ওষুধ কীভাবে রাখা হয়, সেটার ওপরও এর কার্যকারিতা অনেকটা নির্ভর করে। যে ওষুধ সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখার কথা, তা যদি সেভাবে রাখা না হয় তাহলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ওষুধ ফ্রিজে রাখার কথা, সেটা না রেখে যদি বাইরে রাখা হয়, তাহলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত ওষুধের কার্যকারিতার মেয়াদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। কোনো ট্যাবলেটের কার্যকারিতার মেয়াদ দুই বছর দিয়ে দিলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগে কয়েকবার ওষুধের দোকানে রাখা ওষুধ নিয়ে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে। এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে কোনো কোনো ওষুধের মেয়াদকাল বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে ওষুধ প্রথমে দুই বছর দেওয়া হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে।
ওষুধ কেনার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই ওষুধের মোড়কের গায়ের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নেওয়া উচিত। তা ছাড়া ওষুধটি কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তা দেখে নেওয়া দরকার। ট্যাবলেটের স্ট্রিপে কোনো ছিদ্র হয়েছে কি না কিংবা ওষুধের রঙে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা দেখে নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশে আইন আছে, প্রত্যেক ওষুধের দোকানে একজন সি গ্রেডের ফার্মাসিস্ট থাকবেন, সেটা প্রায় ক্ষেত্রেই মানা হয় না বলে ওষুধ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয় না।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ সুভাষ সিংহ রায়
Leave a Reply