‘বাচ্চা মোটেও খেতে চায় না। খাবার নিয়ে সারাক্ষণই পিছু লেগে থাকতে হয়’, এমন অভিযোগ অধিকাংশ মায়েরই। অনেক সময় খাওয়ার ব্যাপারে বাচ্চাদের বেশ অরুচি থাকে। খেতে চায়ই না। পাঁচ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের এ সমস্যা বেশ সচরাচরই হয়ে থাকে। তবে অস্বাভাবিক কিছু নয়, শিশুর বৃদ্ধিকালীন একটা স্বাভাবিক অংশই এটা। শিশুর জন্য যতটুকু খাবার আমরা প্রয়োজন মনে করছি, তার হয়তো এর চেয়ে বেশ কমই দরকার। দুশ্চিন্তার তেমন কিছু নেই। যদি এ রকম চলতেই থাকে বা শিশুর ওজন কমে যেতে থাকে, তাহলে তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উপযুক্ত চিকিত্সার জন্য চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতেই হবে। বাচ্চা খেতে চায় না বা খুবই কম খাচ্ছে—এসব ক্ষেত্রে তাকে খাওয়ানোর ব্যাপারে আপনার করণীয় কী? নিচের টিপসগুলো কাজে লাগাতে পারেন:
বাচ্চাকে নিয়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ডাইনিং টেবিলে খাবার খান। প্রয়োজনে একটা উঁচু চেয়ারে বসান বাচ্চাকে, যেন টেবিলে রাখা প্লেট থেকে খাবার খেতে তার কোনো অসুবিধা না হয়।
নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ চাই শিশুকে খাওয়ানোর সময়। টিভিটা বন্ধ করে দিন। খাবার রেখে টিভির দিকে মন চলে যেতে পারে ওর।
শিশুর প্লেট, চামচ, পানির গ্লাস হোক রঙিন। তাহলে খাওয়ার ব্যাপারে তার উত্সাহ বাড়বে।
নিজ হাতে তুলে খাওয়ার ব্যাপারে শিশুকে উত্সাহিত করুন। খাবার ফেলে প্লেটের চারদিক করুক না বিচ্ছিরি!
শিশু যদি প্লেটে দেওয়া খাবারের অধিকাংশই রেখে দেয়, তাহলে কোনো মন্তব্য বা বকাঝকা করবেন না। আস্তে করে প্লেটটা সরিয়ে নিন। আপনার ভেতরকার কোনো রাগ-গোস্সা যেন আপনার শিশু বুঝতে না পারে।
শিশু যখন আপনার সামনে খাচ্ছে, তখন এ ব্যাপারে যে আপনি তার ওপর বেশ সন্তুষ্ট, তা তাকে বুঝতে দিন। একটু মুচকি হাসুন, কথা বলুন বাচ্চার সঙ্গে বা তার প্রশংসা করুন—বাহ্, কী চমত্কার খাচ্ছে সোনামণি!
একবারে খুব বেশি নয়, প্লেটে খাবার দিন অল্প পরিমাণে। শেষ হয়ে গেলে আবার দিতে পারেন বাচ্চাকে ধন্যবাদ দিয়ে।
শিশুর খাওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। খাক না সে ধীরে ধীরে। আধঘণ্টা পর্যন্ত সময় দিতে পারেন তাকে। এর বেশি নয় অবশ্যই।
শিশুকে সারা দিনই এটা-সেটা খেতে দেবেন না। এতে পেট সামান্য ভরা থাকলে বড় খাবারে অরুচি হয়ে যেতে পারে। সকাল, দুপুর আর রাতের খাবার—এ তিনটি বড় খাবারের মধ্যে দুটি নাশতাই যথেষ্ট।
শিশু যদি তার সামনে থেকে খাবারের প্লেট সরিয়ে দেয় বা মুখের ভেতর খাবার ধরে রাখে, তাহলে বুঝতে হবে তার খাওয়া হয়ে গেছে। এবার খাওয়ানো বন্ধ করতে পারেন।
ভয় দেখিয়ে বা জোর করে খাওয়াবেন না কখনো। ফল উল্টে যেতে পারে। প্রশংসাই করুন খাওয়ার ব্যাপারে।
মো. শহীদুল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজ্ড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
Leave a Reply