কেস স্টাডিঃ শিশুর বয়স ১৫ মাস। হঠাৎ একদিন রাতে চিৎকার শুরু করল। কিছুতেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। মা-বাবা চেষ্টা করেও শান্ত করতে পারছেন না। অস্থির হয়ে কোলে নিয়ে পায়চারি, কোল-বদল-নাহ্, কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। সোনামণির কী হলো? জ্বর নেই, সুস্থ বাচ্চা। দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মধ্যরাতে কী হলো বাবুর? এত রাতে ওষুধ কোথায় পাবেন? নিকটস্থ ক্লিনিকে নিয়ে গেলেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ভালোমতো পরীক্ষা করে দেখলেন, কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবলেন কোথাও ব্যথা হচ্ছে হয়তো। ক্লিনিকে ভর্তি করালেন। ব্যথার ওষুধ, শান্ত করার জন্য ঘুমের ওষুধ দিলেন। পরদিন সকালে দেখা গেল, সোনামণি হাসছে, খেলছে, ব্যথা নেই। কিন্তু কান দুটো পরীক্ষা করতেই দেখা গেল, রক্ত ঝরছে একটা কান দিয়ে।
কানের ব্যথা শিশুদের একটা মারাত্মক সমস্যা। ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে এ অবস্থা থেকে মস্তিষ্কের ইনফেকশনও হতে পারে। বিভিন্ন কারণে কানে ব্যথা হতে পারে; যেমন টনসিলের সংক্রমণ। টনসিলে ইনফেকশন হয়ে যখন ব্যথা হয়, তা স্মায়ুর মাধ্যমে কানে চলে যায় এবং কানে ব্যথা হয়।
ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে কানে ইনফেকশন হয়ে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আবার টনসিল অপারেশনের পর কিছুদিন কানে ব্যথা থাকতে পারে। শিশুদের কানে ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অ্যাকিউট অটাইটিম মিডিয়া।
কী করে বুঝবেন
- কানে প্রচণ্ড ব্যথা, যা শিশুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে।
- উচ্চ তাপমাত্রা শিশুকে দুর্বল করে তুলবে।
- ঠান্ডা কাশি হতে পারে। কয়েক দিন ধরে শ্বাসনালির প্রদাহে ভুগবে।
- কানের পর্দার রং পরিবর্তন হবে, লাল ও ইনফেকটেড দেখা যাবে।
- কানের পর্দা ফুলে যাবে।
- পর্দা বা টেম্পেনিক মেমব্রেন ছিঁড়ে বা ফুটো হয়ে যায়।
- হলুদ পুঁজ বা রক্ত পড়বে।
- কান দিয়ে পুঁজ বা রক্ত পড়ার পর ব্যথা কমে যাবে। শিশুকে দেখলে বোঝা যাবে না যে সে অসুস্থ ছিল।
চিকিৎসাঃ
কানের পানি পরীক্ষা করলে যেসব জীবাণু পাওয়া যায়-
- হেমোলাইটি স্ট্রেপটো কক্কাস।
- স্টাফাইলো কক্কাস পায়োজেনস।
- নিউমোকক্কাস
- হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি।
অ্যান্টিবায়োটিকঃ পেনিসিলিন দিতে হবে। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে নাকের ড্রপ দিতে হবে। কান পরিষ্কার করতে হবে। ওষুধ খেতে না পারলে ইনজেকশন দিতে হবে। প্রয়োজনে অপারেশন করতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তাই অভিভাবকেরা শিশুর কানে এ ধরনের ব্যথা হলে দেরি না করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ ডা· মো· মুজিবুর রহমান
Leave a Reply