উপবাসী রক্তে গ্লুকোজ মান পরীক্ষা হলো ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য একটি সহজ পরীক্ষা। সহজ, খরচ কম, এই পরীক্ষা বেশ জনপ্রিয়ও বটে। হরমোন ইনসুলিনের কাজকর্মে গলতি হলে বেশ ধরা পড়ে এই পরীক্ষায়।
দীর্ঘ উপবাসে শরীরে নিঃসৃত হয় গ্লুকাগন নামে একটি হরমোন, অগ্ন্যাশয় থেকে। এর প্রভাবে যকৃৎ থেকে গ্লুকোজ উৎসারিত হয়, গ্লুকোজ আসে রক্তস্রোতে। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের শরীর সাড়া দেয় ইনসুলিন নিঃসৃত করার মাধ্যমে, এতে রক্তে উচ্চমান গ্লুকোজ হওয়া রোধ হয়। যা হোক, কারও শরীর থেকে যদি পর্যাপ্ত ইনসুলিন নিঃসরণ না হয় অথবা শরীর যদি ইনসুলিনে সাড়া না দেয়, তখন উপবাসী রক্তে গ্লুকোজ মান উঁচুতে থেকে যায়।
টেস্ট করা সোজা। ১২-১৪ ঘণ্টা উপবাস থাকার পর ল্যাবরেটরিতে এসে রক্তের নমুনা দেওয়া। সকালে রক্তের নমুনা দেওয়াই নিয়ম।
উপবাসী রক্তে গ্লুকোজ মানের ব্যাখ্যাও সহজ।
রক্তের গ্লুকোজ মান দেখে ডাক্তাররা টেস্ট রেজাল্ট ব্যাখ্যা করেন। পরিমাপ হলোঃ প্রতি ডেসিলিটার রক্তে মিলিগ্রাম পরিমাণ গ্লুকোজ।
- উপবাসী রক্ত গ্লুকোজ টেস্ট করে ৭০ মিলিগ্রাম/ডিএল-৯৯ মিলিগ্রাম/ডিএল হলো স্বাভাবিক মান। এই মানকে ১৮ দিয়ে ভাগ করলে মিলিমোল/লিটারে পাওয়া যায়।
- ১০০ মিলিগ্রাম/ডিএল থেকে ১২৬ মিলিগ্রাম/ডিএল মান হলো প্রাক-ডায়াবেটিসের সূচক।
- ১২৬ মিলিগ্রাম/ডিএলের ওপরে হলে এই সীমা হলো ডায়াবেটিস নির্ণয়ের সূচনা-মান।
- রক্তের গ্লুকোজ মান ৭০ মিলিগ্রাম/ডিএলের নিচে হলে রক্তে গ্লুকোজ মান নিচু (হাইপোগ্লাই সিমিয়া), এই মানও বিপজ্জনক।
ফলাফলগুলো সীমা ছুঁই ছুঁই হলে অন্যান্য পরীক্ষা করতে হতে পারে। যেমন মুখপথে গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ওজিটিটি), করতে হতে পারে আহারের পর রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা (পিপিপিজি পরীক্ষা)।
ফলাফলগুলো স্বাভাবিক মানে থাকলেও বাড়তি টেস্ট করতে হয় অনেক সময়, ডায়াবেটিসের অন্যান্য ঝুঁকি রয়েছে কি না, যেমন উচ্চ বিএমআই অথবা ডায়াবেটিসের অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে কি না।
টেস্ট রেজাল্টেও প্রভাব পড়তে পারে কোনো কোনো সময়ঃ
- এক ল্যাবরেটরি থেকে অন্য ল্যাবরেটরিতেও ফলাফলে তারতম্য ঘটতে পারে। একই ল্যাবে বিভিন্ন দিনে ফলাফলের হেরফের হতে পারে। সে জন্য দুটি ভিন্ন দিনে করা দুটি অস্বাভাবিক ফলাফলের গড় নেওয়াটা ঠিক হবে।
- রক্তের নমুনা সকালে না টেনে সন্ধ্যায় টানলে ফলাফল কম হতে পারে। আর রক্তের নমুনা টানার পর ল্যাবে রক্ত পরীক্ষার মধ্যবর্তী সময় অতিরিক্ত অতিবাহিত হলে ‘ভ্রান্ত নিচু মান’ পাওয়া যেতে পারে। অন্য কোনো রোগ থাকলে, ব্যক্তিগত অভ্যাস, যেমন ধূমপান ও ব্যায়াম-এসবও প্রভাব ফেলতে পারে ফলাফলের ওপর।
- টেস্টের ফলাফল অস্বাভাবিক হলে ডায়াবেটিসের সূচক হতে পারে।
- টেস্ট করার সময় এবং ফলাফল ব্যাখ্যার সময় একজন স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মকর্তার রোগীর রোগের পুরো ইতিহাস বিবেচনা করা উচিত।
ফলাফল পাওয়ার পর
ফলাফল যা-ই হোক, রোগী পরামর্শ করবেন পুরো স্বাস্থ্য পরিচর্যা টিমের সঙ্গে-একজন ডাক্তার, পুষ্টিবিদ, সবার সঙ্গে। মনে রাখতে হবে, রক্তের এই পরীক্ষা করা হলো কেবল ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্যই নয়, একে প্রতিরোধের জন্যও বটে। উঁচু মান হলে কেবল ইনসুলিন কাজকর্মই নয়, জীবনযাপনের পদ্ধতি, খাওয়া-দাওয়া-এসব বিষয়ও বিবেচনায় আসে।
একজন ব্যক্তির টাইপ ১ বা টাইপ ২, যে রকমের ডায়াবেটিসই থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা ইনসুলিনের কাজকর্মকে আরও সাবলীল ও সুগম করে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ব্যাপারে এ কথা সত্য।
এ ক্ষেত্রে উপবাসী রক্তে গ্লুকোজ টেস্ট হলো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংকেত, হতাশার কারণ নয়।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর
Leave a Reply