ভায়াগ্রার নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে অনেক বছর পূর্বে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি হার্টের এক ধরনের অসুখের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এজন্য এটি একটি এন্টিএ্যাংজাইনাল মেডিকেশন হিসেবে আগে প্রয়োগ করা হতো। হার্টের পেশি কুঞ্চনজনিত কারণে বা রক্ত সংবহনজনিত জটিলতার জন্য বুকে যে ব্যথা হয় তাকে আমরা এ্যাংজাইনা পেইন বা এ্যাংজাইনা ব্যথা বলে থাকি। পরবর্তীতে দেখা যায় যে , হার্ট মেডিটেশন বা হার্টের ওষুধ হিসেবে ভায়াগ্রা ততটা কার্যকারিতা প্রদর্শন করতে পারেনি। বর্তমানে এটি হার্ট মেডিটেশন হিসেবে আদৌ প্রয়োগ করা হয় না।
ভায়াগ্রার একটি মূল ক্ষমতা হলো এটি শরীরের নানা ধরনের কোষের ওপর কাজ করে নাইট্রিক অক্সাইড নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করতে পারে এবং রক্ত প্রবাহ বা রক্তসঞ্চালন বাড়াতে পারে। লন্ডনের কতক গবেষক এক ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে হঠাৎ করে দেখতে পান যে, এটি পুরুষের পেনিস এবং তৎপার্শ্ববর্তী এলাকায়ও আকস্মিকভাবে বাড়ন্ত মাত্রায় রক্তের প্রবাহ ও সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। যারা পুরুত্বহীন তাদের মূল সমস্যা থাকে লিঙ্গ উত্থানে। লিঙ্গ উত্থানে ব্যাপারটি ওতপ্রোতভাবে রক্ত সঞ্চালনের সাথে জড়িত এবং রক্ত কতক্ষণ সেই বিশেষ অঙ্গে বিদ্যমান থাকবে তার ওপর নির্ভর করবে লিঙ্গ কতক্ষণ উত্থিত থাকবে। এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে হঠাৎ করেই বেরিয়ে আসে যে, ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানের ক্ষেত্রে এটি বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে এবং নানা ধরনের শারীরিক মিলন ক্রিয়ার মান উন্ন্য়নে বা শারীরিক মিলনুয়াল পারফরমেন্সকে এটি উন্নীত করে থাকে। এর পর এর নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য আরো ৫ বছর ক্লিনিক্যাল ট্রায়লস বিভিন্ন ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবী এবং শারীরিক মিলন অক্ষম রোগীর ওপর পরিচালিত হয়েছে। অবশেষে যেসকল পুরুষ নানাবিধ শারীরিরক অসুখ যেমন ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র, রক্ত সংবহনতন্ত সম্পর্কীয় অসুখ বা ভাসকুলার ডিজিজ, স্পাইনাল কর্ড বা সুস্মাকার্ডের ইনজুরি বা আঘাত, পুরুষদের পুরুষগ্রন্থি বা প্রস্টেট সার্জারির সময় সার্জারিজনিত কোনো জটিলতার জন্য যে ধরনের ধ্বজভঙ্গ বা পুরুষের লিঙ্গ উত্থানে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয় সেসকল ক্ষেত্রে ভায়াগ্রা একটি স্বীকৃত ওষুধ হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।
অর্গানিক বা শারিরিক জটিলতা ছাড়া মনোজগত কারণে যদি কারো ইম্পোটেন্স বা পুরুষত্বহীনতা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ও শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভায়াগ্রা প্রয়োগে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ইতিবাচক ফল লাভ হয়েছে । এতে করে নারী-পুরুষে মাঝে বিদ্যমান পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক যেমন, ব্যক্তিত্বের ওপরে শারীরিক মিলন আচরণ বা শারীরিক মিলনের প্রভাব অপরিসীম। স্বাভাবিকই্ এবং সঙ্গত কারণেই যে লোক শারীরিক মিলনভাবে অক্ষম সে নানা ধরণের হীনম্ম্যতা, গ্লানিবোধ এবং অপরাধবোধে ভুগে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ভায়াগ্রা প্রয়োগের ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন এবং আত্মসম্মান-আত্মমর্যাদাবোধ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যাদের মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শারীরিক জটিলতার কারণে ইম্পোটেন্স বা ধ্বজভঙ্গ হয় তাদের ক্ষেত্রে ও ভায়াগ্রা কার্যকরী। শারীরিক মিলন আচরণের সময় নানা ধরনের শারীরিক মিলনক্রীড়া এবং শারীরিক মিলন আরাম বা শারীরিক মিলন আনন্দকে শারীরিক মিলন বাড়াতে এটির ভূমিকা অপরিসীম। তবে উল্লেখ থাকে যে, কেবল মাত্র শারীরিক মিলন অক্ষম পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। শখ করে নিজে নিজে এটি সেবন করা -কেবলমাত্র শারীরিক মিলনানন্দ ভোগের জন্য- স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কতক পুরুষের দেখা যায় নারীর সঙ্গে মিলিত হবে এর সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের শারীরিক মিলন আচরণ বা শারীরিক মিলনক্রীড়া শুরু করে দেয়। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে শারীরিক মিলন আচরণের এবং শারীরিক মিলন শারীরিক মিলনের মাঝামাঝি সময়টুকুতে পেনিসের ইরেকশন বা লিঙ্গের উত্থান বিলম্বিত হয়। ভায়াগ্রা সেবনে পেনিসের ইরেকশন বিশেষ সময়কালীন বেশ ত্বরান্বিত হয়।
ভায়াগ্রা-সিলডেনাফিল সাইট্রেট- বাজারজাতকরণের পরেই দুই মাসের ভেতরে এক মিলিয়নেরও বেশি প্রেসক্রিপশন ইস্যু করা হয়েছিল। এতেই বোঝা যায় ড্রাগটির জনপ্রিয়তা কেমন। ইদানীংকালে ভায়াগ্রা নামক ওষুধটি নারীদের মাঝেও এক ধরনের রেপুটেশন বা সুখকর অনুভূতি ডেকে আনছে। ধারণা করা হয় যে এটি নারীদের ক্ষেত্রে ও শারীরিক মিলনে কতক পরিমাণ পুলক বা শিহরণ জাগাতে সক্ষম হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিক মিলন শারীরিক মিলনের জন্য পেনিস যেরকম অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ হিসেবে কাজ করে নারীদের বেলায় ঠিক সেরকমই একটি অঙ্গ হচ্ছে ভগাষ্কুর বা ক্লাইটোরিস বা ভগাষ্কুরের উত্থান ঘটে এবং নারী তখন কতক ওয়েবের মত সংকোচন প্রসারণক্ষম শারীরিক মিলন তৃপ্তি লাভ করে থাকে। এটি নিয়ে এখনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফাইজার নামক কোম্পানি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা এটি নারীদের বেলায়ও শারীরিক মিলনুয়াল সেনশন বা শারীরিক মিলন অনুভূতি এবং চরমপুলকজনিত অনুভূতি অনেক বাড়িয়ে দেবে।
আমাদের ব্লাডপ্রেসার বা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় রকমের আর্টারি বা ধমনি যেরকম রয়েছে ঠিক সে রকম হয়েছে ছোট ধরনের আর্টারি এগুলোকে আমরা আর্টেরিওর। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বেলায় এসব আর্টারি এবং আর্টারিওরকে ঘিরে রয়েছে কতক ভাসকুলার স্মুথ মাসল বা এক ধরনের অনৈচ্ছিক ও মসৃণ পেশিকলা। উল্লেখ্য যে, পেনিসের উত্থান রক্ত সরবরাহ ও রক্ত সঞ্চালনের সাথে যেহেতু জড়িত এবং রক্ত সঞ্চালনের সঙ্গে এই সম্পৃক্ত পেশিকলাগুলোর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী ভূমিকা রয়েছে তাই পুরুষের শারীরিক মিলন অঙ্গের ওপর এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এবার আসুন আমরা দেখি ভায়াগ্রা ওষুধটি কিভাবে কাজ করে।
স্বাভাবিক অবস্থায় বা সাধারণত শারীরিক মিলন উদ্দীপনার সময় পেনিসে যেসকল ছোট ছোট রক্ত গহ্বর রয়েছে সেগুলোতে শরীরের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে রক্ত এসে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই রক্তের গহ্বরগুলোকে বলা হয় করপাসকেবারনোসাম। পেনিস যখন উত্থিত অবস্থায় থাকে তখন করপাসকেবারনোসাম রক্ত দিয়ে পূর্ণ থাকে। আর এই করপাসকেবারনোসাম অংশটি পেনিসের উত্থানকালীন সময়ে দন্ডাকৃতি অংশ বরাবর অবস্থান করে। যেহেতু এখানে প্রচুর পরিমাণে রক্ত এসে জমা হয় এবং পেনিসের কোষকলাগুলো সংকোচন প্রসারণক্ষম-স্পঞ্জিকলা- তাই এটি লম্বায় পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়, পাশেও বাড়ে এবং একই সাথে এটি এক ধরনের দৃঢ়তা লাভ করে।
ভায়াগ্রা মূলত যে কাজটি করে থাকে তা হলো এটি নাইট্রিক অক্সাইড নামক এক ধরনেন নিউরোট্রান্সমিটার বা রাসায়নিক অণুর নিঃসরণ ঘটায়। এই রসায়নিক অণু রক্তনালিকে প্রসারিত করে ফলে রক্ত গহ্বরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত এসে জসা হয়। এর আরেকটি কাজ হলো দৃঢ়তা বজায় রাখা এবং রক্ত গহ্বরে যে পরিমাণে রক্ত আসে তা দীর্ঘক্ষণ সেখানে রাখা। ফলে স্বাভাবতই পেনিস ইরেকশনের সময় অনেক দীর্ঘয়িত হয়।
রসায়নিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নাইট্রিক অক্সাইড মূলত এক ধরনের এ্যামাইনো এসিড যাকে আরজিনিন বলা হয়। সেটি জারণ ক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লেষিত হয়ে থাকে। এখানে আবার এক ধরনের প্রাণ রসায়নজনিত সিগন্যালিন এনজাইম বা উৎচেক কাজ করে এটিকে বলা হয় সাইক্লিক গুয়ানোসিন মনোফসফেট। সংক্ষেপে একে বলে সিজিএমপি। সাধারণ অবস্থায় এই সিজিএমপি একটু আগে অনৈচ্ছিক ও মসৃণ কোষকলার কথা বলা হলো সেগুলো অনেকটা শিথিল করে দেয় ফলে পেনিসের রক্ত সরবরাহকারী আর্টারি আর্টেরিগুলো আগের চেয়ে অনেক প্রসারিত হয়। এই প্রসারণজনিত কারণে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে রক্ত আর্টারিতে থাকে তাই পেনিস থেক রক্ত যাতে আবার দেহের অন্যান্য অংশে দ্রুত চলে যেতেনা পারে সেজন্য শিরার ওপরে চাপ পড়ে। ফলে রক্তের চাপে শিরাগুলো সংকুচিতরূপ লাভ করে। পুরুষের ইজাকুলেশন বা বীর্যস্খলন হয়ে যাওয়ার পর আবার এই শিরাপথে যে রক্ত এসেছিল তা দেহের অন্যান্য অংশ পরিবাহিত হয়ে থাকে। প্রাণ রসায়গত নানা গবেষণায় এটিও বেরিয়ে এসেছে যে, নাইট্রিক অক্সাইড নিঃসরণের খুব কম সময়ের ভেতরে সাইক্লিক জিএমপি সংশ্লেষিত যেমন হয়ে থাকে তেমনি সিজিএমপি ফসফোডাইএস্টারেজ নামক আরো একটি এনজাইম বা উৎসেচক এতে সক্রিয়তা লাভ করে। এই এনজাইমটিকে সংক্ষেপে বলা হয় পিডিই-৫। পিডিই-৫ উৎসেচকটির মূল কাজ হলো যে পরিমাণ সাইক্লিক জিএমপি তৈরী হয়েছিল সেটিকে তাড়াতাড়ি নিঃশেষিত করে দেয়া। এই সাইক্লিক জিএমপি যখন পিডিই-৫ এর মাধ্যমে ভেঙ্গে যায় তখনই অনৈচ্ছিক মসৃণ পেশিকলাগুলোর শিথিলতা কমে আসে এবং পেনিসের রক্তপ্রবাহ কমে যায়। ফলে পেনিস আবার আগের স্বাভাবিক দশায় ফিরে যায়। তবে এটা ঠিক যে, দীর্ঘক্ষণ ব্যথাপূর্ণ ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান শারীরিক মিলন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ভায়াগ্রা এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে পরে আমরা আলাদাভাবে লিখছি। এখন আসি ভায়াগ্রা মূলত কিভাবে কাজ করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের বয়স যত বাড়ে সাইক্লিক জিএমপি- এর কোশীয় ঘনত্ব ধীরে ধীরে ততো কমে। ভায়াগ্রা মূলত যেভাবে কাজ করে তা হলো।
১. এটি নাইট্রিক অক্সাইড নামক নিউরোট্রান্সসিটার নিঃসরণের মাধ্যমে পেনিসের উত্থানে সহায়তা করে এবং উত্থানজনিত অবস্থা বেশখানিক সময় ধরে বিরাজমান রাখতে সহায়তা করে।
২. এটি সাইক্লিক জিএমপি কোশীয় ঘনত্বকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। মূলত এ দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে ভায়াগ্রা যারা পুরুষত্বহীন তাদের পেনিসের ওপরে কাজ করে থাকে। এর আরেকটি কাজ হলো পিডিই- ৫ নামে যে এনজাইমের কথা একটু আগে উল্লেখ করা হলো সেটির যে কার্যক্ষমতা সেই কর্মক্ষমতাকে সিজিএমপি ইনহিভিট বা প্রাতিন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। যেহেতু এই এনজাইম সিস্টেমটি ব্লক বা বন্ধ হয়ে যায় সেহেতু নতুন করে কোনো সিজিএমপি ভাঙ্গন প্রক্রিয়া পেনিসের কোষকলায় চলে না। ফলপ্র“তিতে যা ঘটে তা হলো পেনিসে করপাস কেবারনোসাম যেসব রক্ত গহ্বর রয়েছে সেগুলোতে সাইক্লিক জিএমপির লেভেল স্বাভাবিক কোশীয় লেভেল থেকে অনেক বেড়ে যায়। এর পরবর্তীতে যা ঘটে তা হলো করপাস কেবানোসামে অবস্থিত মসৃণ এবং অনৈচ্ছিক কোষকলাগুলো রিলাক্সেশন বা শিথিলতা প্রতিরোধ হয়ে যায়। ফলশ্রতিতে জেনেটাল বা লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় এবং বেশ দৃঢ় ও শক্ত ধরনের ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান ঘটে থাকে। একই সাথে শারীরিক মিলন অনুভূতি বা শারীরিক মিলনপুলক আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় অনুভূতি হয়।
Source: blogspot.com
Wednesday, January 11, 2006
Leave a Reply