আমরা অনেকেই আজকাল এমপি থ্রি প্লেয়ার বা আইপডে হেডফোন বা ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনি। বাজারেও আসছে নিত্যনতুন এমপি থ্রি প্লেয়ার, আইপড। মোবাইল ফোনসেটেও আছে এমপি থ্রি অপশন। এগুলোতে অসংখ্য গান ধারণ করে রাখা যায়। আর যন্ত্রটিতে হেডফোন লাগিয়ে শোনা যায় একটির পর একটি গান দীর্ঘ সময় ধরে। প্রতিদিনই হয়তো কয়েক ঘণ্টা গান শোনা হয় আপনার। যন্ত্রের ভলিউমও থাকে বেশি। শ্রবণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দীর্ঘক্ষণের উচ্চশব্দ আমাদের কানের ভেতরের শ্রবণযন্ত্রের নাজুক কোষ নষ্ট করে দেয়। এমপি থ্রি প্লেয়ার বা আইপডে উচ্চশব্দে দীর্ঘক্ষণ গান শোনার কারণে শ্রবণশক্তির সমূহ-ক্ষতি হতে পারে। এমনকি শ্রবণশক্তি নষ্টও হয়ে যেতে পারে চিরতরে।
শব্দ কত জোরে হচ্ছে, তা মাপা হয় ডেসিবেলের এককে। আমরা সচরাচর যতটুকু জোরে কথাবার্তা বলি, তা প্রায় ৬০ ডেসিবেলের। ভারী যানবাহন বা টেলিফোন বাজার শব্দ ৮০, মোটরসাইকেলের শব্দ ৯০, আর বুলডোজারের শব্দ হতে পারে ১০৫ ডেসিবেলের। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ১২০, বিমান চলার শুরুর শব্দ ১৪০ ডেসিবেলের। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ ডেসিবেলের ওপরের যেকোনো শব্দ দীর্ঘক্ষণ শুনলে শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। বেশির ভাগ এমপি থ্রি প্লেয়ার, আইপড প্রভৃতি ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ তৈরি করতে পারে। ১০০ থেকে ১০৫ ডেসিবেল তো হয়ই সচরাচর।
উচ্চশব্দে দীর্ঘক্ষণ গান শোনার কারণে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় ধীরে ধীরে, অনেক দিন পর। কত জোরে আর কত দিন ধরে শব্দ শোনা হচ্ছে, এর ওপর নির্ভর করে ক্ষতিটা। শ্রবণশক্তি যখন নষ্ট হয়ে যেতে থাকে, তখন কিন্তু বোঝা যায় না। তবে একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা আর ভালো হয় না। হেডফোন বা ইয়ারফোনে ৯০ ডেসিবেলের ওপরের শব্দে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘদিন গান শোনার কারণে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে চিরতরে।
কখন বোঝা যাবে এমপি থ্রি প্লেয়ার বা আইপডের শব্দ বেশি? এগুলোর ভলিউম সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশের বেশি হলে কিংবা এগুলো যিনি হেডফোন বা ইয়ারফোন লাগিয়ে শুনছেন, তিনি আশপাশের লোকজনের কথাবার্তা না শুনতে পেলে অথবা আশপাশের লোকজন হেডফোনের শব্দ শুনতে পেলে বুঝতে হবে যে শব্দ বেশি।
যেহেতু এ ধরনের যন্ত্রের শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা আর ভালো হয় না, তাই শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়াই ভালো নয় কি! তাই গান শুনতে হবে যথেষ্ট কম ভলিউমে। আর বিরতি দিতে হবে মাঝেমধ্যে।
মো· শহীদুল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৫, ২০০৯
Leave a Reply