বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যানডেমিক এলার্ট ৬ ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিকভাবে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এই ভাইরাস ঢুকেছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সাধারণ কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে, স্বাস্থ্যবিধান খেয়াল রাখলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
ইনফ্লুয়েঞ্জা পরিবারের ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসের রোগতাত্ত্বিক গুরুত্ব বেশি। এদের দুটো অ্যান্টিজেনিক অংশ রয়েছে। দুই ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন। হিমএগ্লুটিনিন (এইচ) ও নিউর্যামিনাইডেজ (এন)।
এই গ্লাইকোপ্রোটিনগুলোর কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’ ভাইরাসটিকে ১৬টি ‘এইচ’ (এইচ১-এইচ১৬) এবং নয়টি ‘এন’ (এন১-এন৯) সাব-টাইপে ভাগ করা হয়।
নতুন ভাইরাস হতে পারে মহামারির কারণ
সোয়ান ও হিউম্যান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পারস্পরিক মিউটেশনের মাধ্যমে জন্ম দিতে পারে একটি নভেল বা সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাসের। সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসটি এইচ১-এন১ টাইপের।
এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় এবং দ্রুত এর বৈশিষ্ট্য পাল্টায়। ভয়ের কারণ এখানেই। বিগত শতাব্দীতে ১৯১৮, ১৯৫৭ ও ১৯৬৮ সালে এ ধরনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছিল মহামারি। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ ধরনের একটি পটেনশিয়াল ভাইরাস হচ্ছে এইচ১এন১, যা এই শতাব্দীতে জন্ম দিয়েছে একটি নতুন প্যানডেমিকের।
একটি মহামারি যখন ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন তাকে প্যানডেমিক বলে। ১৯১৮-১৯ সালে প্যানডেমিক স্প্যানিশ ফ্লুতে (এইচ১এন১) চার কোটি, ১৯৫৭-৫৮ সালে প্যানডেমিক এশিয়ান ফ্লুতে (এইচ২এন২) ২০ লাখ এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে প্যানডেমিক হংকং ফ্লুতে (এইচ৩এন২) সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে গোটা বিশ্বে। বিশ্বব্যাপী সোয়ান ফ্লু থেকে আরেকটি সম্ভাব্য প্যানডেমিকের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের প্যানডেমিক মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
অভ্যাস বদলান সুস্থ থাকুন
সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধের জন্যকিছু অভ্যাসের চর্চা করতে হবে আর কিছু বদভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই সহজ এবং কম ব্যয়বহুল। সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য বিধি জানুন। প্রতিদিন বদলেফেলুন অভ্যাস।বদলেফেলুন নিজেকে।
দিনে যতবার সম্ভব দুই হাত কবজি পর্যন্ত এপিঠ-ওপিঠ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হাঁচি, কাশির সময় রুমাল, টিস্যু পেপার অথবা কনুই কিংবা আস্তিনের কাপড় বা ওড়না দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখবেন। সর্দি, জ্বর বা সাধারণ ফ্লুর লক্ষণগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা থাকার চেষ্টা করুন। ছোট বাচ্চাদের সর্দি জ্বর বা ফ্লু হলে স্কুলে পাঠাবেন না। যত্রতত্র থু থু ফেলার অভ্যাস নিজে পরিবর্তন করুন, অন্যকেও পরিত্যাগ করতে বলুন।
হঠাৎ ফ্লুতে আক্রান্ত হলে
— সাধারণ সিজনাল ফ্লুতে আক্রান্ত হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই।
— সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়।
— সর্দি, কাশি হলে হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢাকার ব্যবস্থা করুন, যাতে অন্য কেউ আপনার হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত না হয়।
— যখনই হাতে হাঁচি-কাশি লাগবে, দুই হাত কবজি পর্যন্ত এপিঠ-ওপিঠ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
— কেউ হঠাৎ ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
— জ্বর, সর্দি-কাশি, গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রোগ প্রতিরোধের জন্য টামিফ্লু বা অন্য ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।
ইকবাল কবীর
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৪, ২০০৯
Leave a Reply