পাঁচ বছর বয়স জুবায়েদের (ছদ্মনাম)। চার বছরেই খিঁচুনি ধরা পড়েছে। তখন থেকেই একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছে। ফলোআপে যখনই চিকিৎসকের কাছে যান তখনই মা কেবল জানতে চান, আর কত দিন এই খিঁচুনির ওষুধ চলবে? মাকে বলা হয় যে দিন থেকে তার শেষ খিচুনি হবে, সেই দিন থেকে দুই বছর। মা দিন গুনতে থাকেন, কবে সেই দুই বছর হবে! মাঝেমধ্যে কাজের চাপে মা ওষুধ দিতে ভুলে যান। ফলে জুবায়েদের খিঁচুনি হয়, তবে আগের মতো অতটা বড় নয়, হালকা ধরনের খিঁচুনি হয়। ফলোআপে মাকে বলা হয়, যে ওই হালকা খিঁচুনি হলেও হবে না। সুতরাং আগের যত দিন ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল, সেই সব দিন বাদ। অর্থাৎ আবার নতুন করে দুই বছর। আবার মা ভুলে যান এক-দুই বেলা ওষুধ দিতে, ফলে আবার খিঁচুনি হয়। চিকিৎসক এবার প্রথম ওষুধের সঙ্গে দ্বিতীয় ওষুধ যোগ করলেন। ছয় মাস জুবায়েদের নিয়মিত ওষুধ দেওয়ায় তার এই ছয় মাস কোনো খিঁচুনি নেই। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন মা আবার ভুলে গেলেন এবং এবার বেশ বড় ধরনের খিঁচুনি হলো। মা দিশেহারা হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলেন। ওখানকার চিকিৎসক যখন দেখলেন, খিঁচুনির দুটি ওষুধ খাওয়ার পরও যখন খিঁচুনি হয়েছে, তখন তিনি দুটির সঙ্গে তৃতীয় একটি ওষুধ যোগ করলেন।
এখন জোবায়েদ তিনটি ওষুধ খাচ্ছে। এভাবে কেটে গেল এক বছর। ওষুধ তো ছাড়তে পারছেই না বরং ওষুধের সংখ্যা বাড়ছে।
এখন জোবায়েদের বয়স সাড়ে সাত বছর। প্রতিবার সে ওষুধ খেতে চায় না। মাকে প্রত্যেকবার অনেক জোরাজুরি করে খাওয়াতে হয়। সেই শান্ত শিশু জোবায়েদ এখন অস্থির। কথাবার্তা শুনতে চান না। স্কুলেও খুব একটা ভালো করছে না।
মনে রাখবেন
খিচুনি ধরা পড়লেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে হবে। বেশি দিন ওষুধ চললে বাচ্চারা বিরক্ত বোধ করে এবং ওষুধ খেতে চায় না। খিঁচুনি যত দেরিতে নিয়ন্ত্রণ হবে, ততই শিশুর মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। ফলে শিশু হবে অস্থির, চঞ্চল ও অমনোযোগী।
সাধারণত খিঁচুনির ওষুধ শুরু করলে যেদিন শিশুর শেষ খিঁচুনি হবে, সেদিন থেকে দুই বছরের মধ্যে কোনো খিঁচুনি হবে না। এমনকি অল্পস্বল্প খিঁচুনিও নয়।
সেলিনা ডেইজী
সহযোগী অধ্যাপক
শিশু, শিশু নিউরোলজি ও ক্লিনিক্যাল
নিউরোফিজিওলজি বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৩, ২০০৯
Leave a Reply