ধুলাবালি, রোদের তীব্রতা আর ঘামে চুলগুলো কি প্রাণহীন মনে হচ্ছে? চিন্তা নেই, দেখে নিন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানার দেওয়া পরামর্শ।
‘রোদের তাপ, ধুলাবালুর অত্যাচারে এ সময় আমাদের চুল হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। চুলের গোড়া ঘেমে চুল হয়ে ওঠে আঠালো। রোদের তাপে চুলে পোড়াটে ভাব, ডগা ফাটা, চুল পড়া এসব সমস্যা তো আছেই। তাই এ সময় চুলের জন্য চাই বাড়তি পরিচর্যা।’ বলছিলেন রাহিমা সুলতানা। তাঁর মতে, এ সময় প্রথম গুরুত্ব দিন চুলের পরিচ্ছন্নতার দিকে। চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বেছে নিন। শুষ্ক, স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, কোঁকড়া, রিবন্ড, রং করা চুলের ধরন বুঝে আলাদা আলাদা শ্যাম্পু বেছে নিন। শ্যাম্পু করার আগে ভালো করে চুলের জট ছাড়িয়ে নিন। প্রথমে চুল ভালোভাবে পানিতে ভেজান। তারপর শ্যাম্পু লাগান। হালকা করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। তারপর আবার শ্যাম্পু লাগান। পানির ধারায় খুব ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখুন, চুলের গোড়ায় যেন শ্যাম্পু না লেগে থাকে। চুলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা ঠিক নয়। এতে চুলের স্বাভাবিক লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়। তবে সপ্তাহে তিনবার শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাঁদের মাথার তালু ঘামার প্রবণতা বেশি, তাঁরা একদিন অন্তর অন্তর ভেষজ উপাদান দ্বারা চুল ধুয়ে নিতে পারেন। রাহিমা সুলতানা ভেষজ কিছু উপাদানের কথা বলেন—
মুলতানি মাটি দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ফুলে উঠলে তা ভালোভাবে মিশিয়ে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
রিঠা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে এর পানিটা শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করুন।
পানিতে বেসন গুলে তা দিয়ে শ্যাম্পু করতে পারেন।
সরিষার তেল পানিতে ভিজিয়ে রেখে শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পুর পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটাও আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন। কেরাটিন, অয়েল ও প্রোটিন-সমৃদ্ধ যেকোনো কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ভেষজ নানা উপাদানও ব্যবহার করা যায়।
চায়ের লিকার ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর পানিতে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
পাকা কলা ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
চুল ধোয়ার পর খুব হালকাভাবে চুলের পানি মুছে নিন। কখনোই চুল জোরে ঘষে ঘষে মুছবেন না। এতে চুল ভঙ্গুর হয়ে ফেটে যেতে পারে। চুল শুকানোর পর চুল আঁচড়াবেন। ধীরে ধীরে চুল আঁচড়াবেন। চুলটা ফ্যানের বাতাস দিয়ে শুকানোই বেশি ভালো। আর ড্রায়ার ব্যবহার করতেই হলে এর ঠান্ডা বাতাস দিয়ে চুল শুকান। মোটা দাঁতের চিরনি বেছে নিন। এতে চুল ছিঁড়বে না। রোদের তীব্রতায় যাঁদের চুলে পোড়া ভাব দেখা দিয়েছে, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন রাহিমা সুলতানা।
বাইরে থেকে ফিরে ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে নিন।
গোলাপজল পানির সঙ্গে মিশিয়ে বরফ করে তা পোড়া চুলে আলতো করে ঘষতে পারেন।
ঠান্ডা কাঁচা দুধ চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
নারকেল তেল ও তিলের তেল মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
মধু ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগান।
যাঁদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে, তাঁরা চুলের একটু বাড়তি যত্ন নিন।
সপ্তাহে একদিন মেহেদি লাগান চুলের গোড়ায়।
পেঁয়াজের রসটাও খুব উপকারী।
কাঁচা আমলকী ছেঁচে এর রস চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন।
কাঁচা আমের আঁটি সেদ্ধ করে সে পানিটা ঠান্ডা করে চুলে লাগাতে পারেন।
‘চুলের আগা ফাটা, মাঝখান থেকে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করতে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করা খুব উপকারী।’ বললেন রাহিমা সুলতানা। এ জন্য তেল কুসুম গরম করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে হাতের আঙুলের মাথা দিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। মাঝেমধ্যে চুলে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম লাগান। এতে চুল বাইরের পুষ্টি পাবে। তবে চুলের সৌন্দর্যের জন্য সঠিকভাবে খাবার গ্রহণও জরুরি। ভিটামিন এ এবং ই সমৃদ্ধ ফলমূল, শাকসবজি খান ও পান করুন প্রচুর পরিমাণে পানি। চুলটা এ সময় খোলা না রেখে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিতে পারেন। অথবা করে নিতে পারেন সুন্দর একটা খোঁপা। মাথায় বেঁধে নিতে পারেন রঙিন একটি স্কার্ফ অথবা মাথায় দিতে পারেন চমৎকার কোনো টুপি।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৫, ২০১০
Leave a Reply