আজ রইল এরকমই কিছু জানা অজানা ট্রেকিং স্থানের খোঁজ। বলা বাহুল্য আমাদের দেখে ট্রেকিং-এর সেরা ঠিকানা হিমালয় পর্বতমালার বিভিন্ন অংশ। আর এই সব স্থানে ট্রেক করলে অ্যাডভেঞ্চােরের নেশা আরও বাড়বে।
হাম্পটা পাস ট্রেক, হিমাচলপ্রদেশ
হিমাচলপ্রদেশের আবহাওয়া প্রায় সারা বছরই মনোরম থাকে। তাই মোটামুটি এখানে গরমকালেও ট্রেক করা যায়। জুন মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে মজাসে ট্রেক করা যায়। ট্রেক শুরু হয় কুলু ভ্যালির হাম্পটা গ্রাম থেকে। শেষ হয় লাহৌল এবং স্ফিতি ভ্যালির চাতরুতে। পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এই পথ পেরোতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। এই ট্রেকিং পথের উচ্চতা প্রায় ৪৪০০ মিটার। তবে এই রাস্তার ট্রেকিং তুলনামূলক সহজ। হাঁটতে খুব একটা কষ্ট হয় না। হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। পথে চোখে পড়বে বরফে ঢাকা উপত্যকা, ঘন দেবদারু গাছের জঙ্গল, ফুলে ভরা তৃণভূমি, স্বচ্ছ পরিষ্কার জলের ঝরনা এবং হিমালয়ের সৌন্দর্য্য মানুষকে পাগল করে দেয়। ট্রেকের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হল রাতের বেলা চন্দ্র তালের ধারে তাঁবু ফেলা যায়।
বিপাশা কুণ্ড, হিমাচল প্রদেশ
হিমাচল প্রদেশের আরেকটি দারুণ জনপ্রিয় ট্রেকিং সাইট হল বিপাশা কুণ্ড। দেশের অন্যতম কঠিন ট্রেকিং এটি। হাম্পটা পাসের থেকে বিপাশা কুণ্ডের ট্রেকের দূরত্ব অনেকটাই কম। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে ট্রেক করা যায়। এটি মানালির একটি জনপ্রিয় ট্রেইল। বিপাশা নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পীর পিঞ্জল রেঞ্জের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য চোখে পড়বে। সঙ্গে রয়েছে ধুন্দি এবং বকরথাচের বনভূমি। হাঁটতে হাঁটতে বিপাশা নদীর উৎস্থলের দিকে পৌঁছোনোর অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সেখানে রয়েছে একটি পাহাড়ি হ্রদ। এরই নাম বিপাশা কুণ্ড। ধর্মীয় বিশ্বাস, এই কুণ্ডেই নাকি স্নান করতে যেতেন মহাভারতের রচয়িতা মহাকবি বেদ ব্যাস। এখানে ট্রেক করতে গেলে অবশ্যে কোনও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না।
কুমারী পাস, উত্তরাখণ্ড
ভারতের উচ্চতম পর্বতমালাগুলির মধ্যে অন্যতম নন্দাদেবী। কিন্তু এত বড় নন্দা দেবীকে একবারের ট্রেকিং-এ দেখা সম্ভব নয়। তাই একে বার বার দেখতে যেতে হয়। এরকমই একটি ট্রেকিং সার্কেল হল কুমারী পাস ট্রেকিং। এখান থেকে দ্রোণগিরি পর্বত এবং হাথি পর্বতের স্পষ্ট দর্শন পাবেন। উত্তরাখণ্ডের জোশিমঠ থেকে এই ট্রেকিং শুরু হয়।
হর কি দুন, উত্তরাখণ্ড
উত্তরাখণ্ডের কোটগাঁও থেকে শুরু হওয়া হর কি দুন ট্রেকিং-এর খবর খুব কম লোকেই রাখেন। এই এলাকায় প্রচুর পশু পাখি দেখা যায়। এখানে বিশেষ প্রজাতির হনুমান, কালো হরিণ, ভাল্লুক এবং শাখামৃগ দেখা যায়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ট্রেকিং-এর সেরা সময়।
গোমুখ তপোবন, উত্তরাখণ্ড
গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল গোমুখের গঙ্গোত্রী থেকে শুরু হয় গোমুখ তপোবন সফর। শুধু তাইই নয় মাউন্ট শিবলিঙ্গের সবচেয়ে কাছে যেতে পারবেন এই ট্রেকিং-এর সুবাদে। সেই স্থান থেকে মাউন্ট শিবলিঙ্গে গোড়া থেকে চূড়া সম্পূর্ণ দেখা যায়। তপোবন থেকে দেখা যায় মাউন্ট মেরুর অপূর্ব দৃশ্য। গিদারা বুগ্যাল, উত্তরাখণ্ডের
উত্তরাখণ্ডের আরেকটি অসাধারণ ট্রেকিং সার্কেল হল গিদারা বুগ্যাল। এই সফরকালে পাহাড়ের গায়ের তৃণভূমিতে সবচেয়ে বড় ঘাস দেখতে পারে। উত্তরাখণ্ডের এই স্থানটি সম্পর্কেও অনেক কম লোক জানেন। ট্রেকিং-এর পাশাপাশি এখানে ক্যাম্পিং-এর আনন্দও উপভোগ করা যায়।
কেদারকণ্ঠ, উত্তরাখণ্ড
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকি উত্তরাখণ্ডের কেদারকণ্ঠ। শীতকালেও এখানে প্রচুর মানুষে ট্রেক করতে আসেন। এখানে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় নভেম্বর মাসে। .দিও প্রাকৃতিক শোভা হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানকার সৌন্দর্য্য বেশি থাকে। কেদারকণ্ঠ উত্তরকাশীতে অবস্থিত।
সান্দাকফু, পশ্চিমবঙ্গ
সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তরে ট্রেকিং রুটের চারটি পর্যায় রয়েছে। একটি হল মানেভঞ্জন (৭০৫৩ ফিট) থেকে মেঘমা (৮৫৩০ ফিট)। প্রায় ৪ ঘণ্টার ট্রেকিং। পথ গিয়েছে ছবির মতো গ্রাম চিত্রে হয়ে। দ্বিতীয়টি হল মেঘমা থেকে গৈরিবাস (৮৫৯৯ ফিট)। ট্রেকিংয়ের এই পথ গিয়েছে টংলু (১০০৭২ ফিট) এবং টুমলিং (৯৫১৪ ফিট) হয়ে। অনেকে শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়িতে ধোতরে হয়ে টংলু বা টুমলিং এসে সেখান থেকে ট্রেকিং শুরু করেন। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের সীমানাটি এই পথের ধারেই। তৃতীয় পট্রেকটি হল গৈরিবাস থেকে সান্দাকফু। টানা ৪ ঘণ্টার খাড়াই পথ ধরে পৌঁছতে হয় সান্দাকফুতে। পথে পড়ে কালা পোখরি গ্রাম। এবং চতুর্থটি হল সান্দাকফু-ফালুট (১১৮১১ ফিট)। ট্রেকিং পথে সব চেয়ে আকর্ষণীয় অংশ এটি। ২১ কিলোমিটার পথে সব সময়ের সঙ্গী এভারেস্ট আর কাঞ্চনজঙ্ঘা।
গোয়েচলা, সিকিম
সিকিমের গোয়েচলা ট্রেকের সময় পথে অনেক বড় পড় পর্বতন চোখে পড়ে। এখান থেকে কাঞ্জনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যায়। নেপালের সবচেয়ে বড় মাউন্টেন ট্রেকের খুব কাছেই অবস্থিত এটি।
চক্রমুণ্ডি ট্রেক, মুন্নার
মুন্নারের টা বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছয়-সাত ঘণ্টা যে কী করে বেরিয়ে যাবে বুঝতেও পারবেন না। চক্রমুণ্ডি ট্রেকের এটাই প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাহাড়, পার্বত্য জঙ্গল, নদী, কুয়াশা, সব মিলিয়ে মনে হবে যেন স্বর্গের দুয়ারে পৌঁছে গেছেন। যাঁরা প্রথমবার ট্রেকিং-এ যাবেন তাঁদের জন্য এই ট্রেক আদর্শ। সফর শুরু হয় চক্রমুন্ডি পাহাড় থেকে। এটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার আনাইমুদির উচ্চতম শৃঙ্গ। ট্রেকিং-এর সময় পথে পড়বে ইদুক্কি বাঁধ। এটি এশিয়ার সর্বোচ্চ বাঁধ। ট্রেকের সবচেয়ে উঁচু স্থানের উচ্চতা ২১০০ মিটার। এখানে সারা বছর ট্রেক করা যায়।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-11-07 15:41:39
Source link
Leave a Reply