হাইলাইটস
- সকাল থেকে কৌশিক খুব টেনশনে আছে। বাড়িতে কয়েকজন অতিথি আসবে।
- অবশ্য চিন্তার বিষয় সেটা নয়। সমস্যা হল ঋতজা আজ নিজের হাতে অতিথিদের জন্য রান্না করবে বলেছে।
- বাইরের খাবার বাড়িতে ঢুকবে না। আর পারফেক্ট শেফ ঋতজার স্পেশাল খাবার তৈরি করা মানে বাড়িতে বিশাল কাণ্ড ঘটা।
প্রথমত রান্নার কাজে সে কাউকে হাত দিতে দেয় না বা সাহায্য নেয় না। ধনে পাতা কাটা থেকে বিরিয়ানি তৈরি সব সে একা হাতে করবে। বিশেষ করে সবজি কাটার ব্যাপারে ও কাউকে ভরসা করে না। সত্যি বলতে কী ঋতজার মতো পারফেক্ট করে সবজি বাড়িতে কেউ কাটতেও পারে না। এমনকি লঙ্কা কিংবা ধনে পাতা কুচি করার ক্ষেত্রেও সে নিখুঁত। এসব কাজ সে ভালোবেসেই করে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় পেঁয়াজ কাটার সময়। একেক রান্নার জন্য একেক ডিজাইনের পেঁয়াজ কাটা হবে। কোনোটা সরু, কোনোটা মোটা, কোনোটা মাঝারি, কোনোটা আবার মিহি করে কুচি করা। আর বিপদটা হয় তখনই। ঝতজার চোখের জল বাধ মানানো যায় না। আর সেই সঙ্গে তার মেজাজও সপ্তমে চড়ে যায়।
ঋতজার মেজাজ সপ্তমে চড়া মানে বাড়িতে একরকম কার্ফিউ লাগা। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। যতক্ষণ না রান্না শেষ হচ্ছে ততক্ষণ বাড়িতে সবাই তটস্থ। তবে এটা ঠিক অতিথিরা বাড়িতে আসার আগে ফের সবকিছু পারফেক্ট করে নেন অধ্যাপিকা এবং সুগৃহিনী ঋতজা মিত্র। তখন কেউ বলবেই না যে ঘণ্টা কয়েক আগে পর্যন্ত এই মেয়ের পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখ রক্তবর্ণ হয়ে চোখ দিয়ে জল পড়ছিল হু হু করে।
পেঁয়াজিগিরির কারণ
আসলে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখে অল্প বা বাধ ভাঙা জল পড়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এর জন্য দোষী স্বয়ং পেঁয়াজ বাবাজি। তার পেঁয়াজিগিরির কারণ হল তার জৈব-রাসায়নিক গঠন। পেঁয়াজ কাটলে, বাটলে কিংবা সেটি নষ্ট হয়ে গেলেও তা থেকে ঝাঁঝ বের হতে থাকে। পেঁয়াজে আছে অ্যাল্লিনেস নামে এক ধরনের উৎসেচক। সেগুলি সালফেনিস অ্যাসিডের কোনও অণুর সঙ্গে মিশলেই ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টর বা LF নামে এক ধরনের উদ্বায়ী পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই কারণে পেঁয়াজ কাটলে বাতাসে তার ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এক নিমেষে। এবং এর ফলে অনেকটা টিয়ার গ্যাসের মতো বায়বীয় পদার্থ তৈরি হয়। যা চোখে গেলে চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। তবে সেটি টিয়ার গ্যাসের মতো কখনওই মারাত্মক নয়। রান্না করার সময় অবশ্য উদ্বায়ী পদার্থটি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আর চোখ জ্বালা করে না।
চোখের জল মুছুন
– পেঁয়াজ কাটার সময় ধারালো ছুরি বা বঁটি ব্যবহার করুন। এর ফলে পেঁয়াজের কোষ কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টর বা LF নামে এক ধরনের উদ্বায়ী পদার্থটি কম নির্গত হবে। ফলে চোখে জল হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
– পেঁয়াজের আগা এবং ডগাতে সবচেয়ে বেশি এনজাইম থাকে। তাই আগেই পেঁয়াজের মুখ একটু বেশি করে কেটে নিন।
– পারলে গ্যাস ওভেনের সামনে পেঁয়াজ কাটবেন। আগুনের সালফার পেঁয়াজের এনজাইমকে নষ্ট করে দেয়। এতে চোখ জ্বালা করার সম্ভাবনা কমে যায়।
– খোলা জায়গায় যেমন জানালার পাশে বা ভেন্টিলেটর চালু করে পেঁয়াজ কাটুন। এতে পেঁয়াজের চোখ জ্বালানি গ্যাস তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়।
– পেঁয়াজের মুখটি কেটে মিনিট দশেক জলে ভিজিয়ে রাখন। তারপর পেঁয়াজ কাটলে চোখ জ্বালা করবে না।
– পেঁয়াজ কাটার আগে সেটি মিনিট পনেরো ফ্রিজে রেখে দিন। বরফ জলেও রাখতে পারেন। এর ফলেও চোখ বাঁচবে।
– পেঁয়াজ যদি খুব দ্রুত গতিতে কাটতে পারেন তাহলেও চোখে জল আসার সম্ভাবনা কমে।
– ফ্যানের নীচে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কাটলেও চোখ জ্বালা তুলনামূলক কম হয়।
– আরেকটি মজাদার কিন্তু ভীষণ কাজের টিপস্ হল পেঁয়াজ কাটার সময় বড় সাইজের রোদ চশমা কিংবা সাঁতার কাটার চশমা পরে নিতে পারেন। এটি দারুণ উপকারী। চোখে পেঁয়াজের ঝাঁঝ যাবেই না।
এ তো গেল ঘরোয়া টোটকার কথা। এগুলি মেনে চললে পেঁয়াজ কাটার সময় চোখের জল একেবার বা অনেকটা কমবে। কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রচলিত টোটকা আছে যেগুলি আদৌ কোনও কাজ দেয় না। সেগুলিও একবার জেনে নিন। নিজেই সাবধান হয়ে যাবেন।
– অনেকে বলে পেঁয়াজ কাটার সময় মুখে একটি পাউরুটির পিস ধরে রাখলে নাকি চোখ দিয়ে জল বের হয় না। এটি একেবারে ভুল এবং মিথ্যে ধারণা।
– পেঁয়াজ কাটার সময় অনেকে আবার বলে দাঁত দিয়ে চামচ কামড়ে ধরে থাকলে চোখ দিয়ে জল পড়ে না। এটিও সর্বাংশে ভুল।
– গোটা পেঁয়াজটিকে মাইক্রোওভেনে গরম করে অনেকে সেটি কাটার পরামর্শ দেন। এই কাজ ভুলেও করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
– কার আবার ধারণা পেঁয়াজ কাটার সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে বুঝি চোখ দিয়ে জল পড়ে না। এটিও একেবারে ভুল ধারণা।
– পেঁয়াজ কাটার সময় চুইংগাম খান। চোখ দিয়ে আর জল পড়বে না। ১০০ শতাংশ ভুল কথা। বিশ্বাস না হলে কোনোদিন চুইংগাম খেতে খেতে পেঁয়াজ কেটে দেখুন। কাজের কাজ কিচ্ছুটি হবে না।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-11-07 16:42:08
Source link
Leave a Reply