২০০০ সালথেকে ডেঙ্গু রোগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গু বেশি হয়। বৃষ্টি কমে গেলেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ইদানীং বেড়ে গেছে। এ সময় জ্বর, পেটের ব্যথা ও অপারেশন দরকার এমনরোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলে ডেঙ্গু হবে না; বলা সহজ হলেও কাজটা করা কঠিন-তবু করতে হবে। চিকিৎসার জন্য প্রথম থেকেই পরিমিত পানি (২৪ ঘণ্টায় ২·৫-৩ লিটার) এবংপ্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো ওষুধ লাগে না। প্লেটলেট এক লাখের কম হলেহেমোরেজিক ডেঙ্গু। হেমোরেজিক হলেই মারাত্মক তা নয়, চিকিৎসা একই।
জ্বর চলে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর আর বিপদ থাকে না। বারবার প্লেটলেট পরীক্ষা করে কোনো লাভ নেই, ভয়বাড়ানোর দরকার নেই। আট-দশ হাজার প্লেটলেট প্রায়শই পাওয়া যায় এবংকোনো অতিরিক্ত চিকিৎসা লাগে না।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
হঠাৎ করে জ্বর। কপালে, গায়ে ব্যথা। চোখে ব্যথা, চোখ নাড়ালে বা এদিক-ওদিক তাকালে ব্যথা। দাঁতের মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত অথবা কালো কিংবা লালচে-কালো রঙের পায়খানা, এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত যেতে পারে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার খুবই মারাত্মক। মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে বিশেষ পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য।
কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণ) জ্বর রক্ত পরীক্ষায় যদি অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, তবে বুঝতে হবে, এটি হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী জ্বর। রোগীর শকে চলে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্র ব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া কিংবা বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেওয়ামাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি প্রচুর পরিমাণে পান করাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলা যায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট অথবা প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
লেখকঃ ডা· খাজা নাজিম উদ্দীন
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ১০ অক্টোবর ২০০৭
Leave a Reply