চাপ অর্থ অনুভূতি ও শারীরিক চাপ। এ দুটি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি বাড়লে আরেকটি বাড়ে, আরেকটি কমলে অন্যটি কমে। তাই এ লেখায় মানসিক চাপের কথা বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। চাপ নির্ভর করে মানুষের আবেগের ওপর। আবার আবেগটা নির্ভর করে মানুষ তার পরিবেশ-পরিস্থিতি কী করে সামাল দেয় এর ওপর। বিভিন্ন রকমের মানুষ বিভিন্ন রকম উপায়ে পরিবেশ-পরিস্থিতিকে চাপপূর্ণ মনে করে।
শারীরিক চাপ
নানা কারণে চাপ শরীরের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়। যেমনটা সার্জারি করার পর বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে। গলস্টোন অপারেশনের পর যেমন পেটে ব্যথা, গ্যাস্ট্রিকের প্রবণতা, কোমরে ব্যথা-এগুলো হচ্ছে শারীরিক চাপ। এই শারীরিক চাপগুলো আবেগগত চাপ সৃষ্টি করে এবং এই দুইয়ে মিলে তখন পরিবেশটা হয়ে যায় একটু জটিল। চাপ নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন ধরনের টেনশনকে কমানোর এবং তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উপসর্গগুলোকে কমানোকে বোঝায়। তবে কতটুকু চাপ কমতে পারে তা নির্ভর করে চাপের মাত্রা ও ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির ওপর।
বুঝবেন কী করে
দৃষ্টিভঙ্গিঃ ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির ওপরই পরিবেশ চাপপূর্ণ কি চাপপূর্ণ নয়, তা তিনি বুঝে নিতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তার ব্যক্তিরা খুব সহজেই চাপে আক্রান্ত হয়। তাদের চেয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির লোকজন চাপে আক্রান্ত হয় কম।
শারীরিক সক্ষমতাঃ সুষ্ঠু ও সুষম খাদ্য গ্রহণ মানসিক ও শারীরিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অসুস্থ খাদ্যদ্রব্য, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো গ্রহণ শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়। তখনই ব্যক্তি নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে না খাওয়া একজন ব্যক্তির পুষ্টিচাহিদা পরিপূর্ণ করতে পারে না। এ ধরনের শারীরিক চাপ ব্যক্তির মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। কারণ সঠিক পুষ্টি আমাদের মস্তিষ্কে ক্রিয়া সৃষ্টি করে। অপুষ্টি আমাদের মস্তিষ্কে ক্রিয়া করতে পারে না।
মানসিক সহায়তাঃ প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের খারাপ সময়ে এক ধরনের মানসিক সহায়তা আশা করে থাকে। এই সহায়তা বিভিন্ন ধরনের সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি, গ্রুপ থেরাপি ইত্যাদি হতে পারে।
শিথিলায়নঃ শিথিলায়ন বা রিলাক্সেশন, যারা অন্তর্মুখী তাদের চেয়ে যারা বহির্মুখী চরিত্রের তারা সহজভাবে চাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যারা অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের লোক, বহির্জগতের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ কম, তাদের শখ কম থাকে এবং তারা কী করে শিথিলায়ন করতে হয় তা কম জানে।
চাপ কমাবেন কী করে
১· আপনার নেতিবাচক চিন্তাগুলো দূর করার চেষ্টা করুন। ২· বিভিন্ন বিনোদনমূলক, সামাজিক, পারিবারিক আমোদ-প্রমোদমূলক বন্দোবস্ত করুন। ৩· নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচকে পরিবর্তন করুন। একটুখানি অবসর নিন। ইতিবাচক চিন্তা করুন।
কাজের মাধ্যমে চাপ কমান
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ ন্যূনতম ২০ মিনিট করে সপ্তাহে তিন দিন এই পরিশ্রমের কথা বলে থাকেন। বিশেষ সময় ধরন, পরিমাণ ও শারীরিক কাজকর্মে লেভেল নির্ধারণ করে নিন। আপনার সারা দিনের সময়ের সঙ্গে খাপ খায়, এমন সময় বের করুন। আপনাকে উৎসাহ জোগায়, আপনাকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারে, এমন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কঠিন কোনো ব্যায়ামে যাওয়ার দরকার নেই। শুধু ২০ মিনিট করে নিয়মিত হাঁটুন।
পথ্য
ফলমূল, শাকসবজি বেশি করে খান। এতে শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। সঠিক খাদ্য সঠিক সময়ে গ্রহণ করুন।
সামাজিক সহযোগিতা
বিভিন্নভাবে সামাজিকীকরণের পরিবেশে যোগ দিন। তাতে যদি আপনার মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, এর পরও যান। নিজেকে আরও সুন্দরভাবে পরিচালিত করুন এবং বিভিন্ন ধরনের ভালো মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন।
অধ্যাপক এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৯, ২০০৯
Leave a Reply