স্নিগ্ধার কথাগুলো শুনেই চমকে উঠল রিমঝিম।
– ‘আগের সপ্তাহে’।
– ‘বলছিসটা কী? লাস্ট উইকে তো দাদা অফিস ট্যুরে গেছিল। দিল্লি। আর তুই তো’…
– ‘আমিও সেই সময় দিল্লিতে গিয়েছিলাম। একটা পাবে দেখা হয়েছিল। দুজনেই খুব ড্রিঙ্ক করে ফেলি’। আর তারপর…
স্নিগ্ধার কথাগুলো শুনে রিমঝিমের গা শিরশিরিয়ে ওঠে। ও এসব কী বলছে? নিজের বিবাহিত দাদার সঙ্গে বেস্ট ফ্রেন্ডের শারীরিক সম্পর্ক? বৌদি জানতে পারলে তো…। আর ভাবতে পারছে না রিমঝিম। স্নিগ্ধার বাড়ি থেকে কোনোরকমে বেরিয়ে আসে সে। স্কুটি চালিয়ে সোজা নিজের বাড়ি গিয়ে থামে। স্নিগ্ধ কী বলল এসব। সারা রাস্তা এসব ভেবেই কোনও কূল কিনারা পাচ্ছে না রিমঝিম। বউদির মিষ্টি হাসি মাখা মুখটা দেখে নিজেকে অপরাধী লাগছে তার। শেষে কিনা ওর বান্ধবীই নিজের দাদার সঙ্গে এসব করে বসল? মা বাবা জানতে পারলে কী হবে?
স্নিগ্ধার সঙ্গে দিল্লিতে দেখা হওয়ার ব্যাপারটা দাদা কিন্তু রিমঝিমকে বলেনি। বরং দিল্লি থেকে ফেরার পর থেকেই বেশ চুপচাপ হয়ে পড়েছিল সে। কিন্তু স্নিগ্ধা প্রায় এক সপ্তাহ চেপে থাকার পর বলে ফেলে সত্যি কথাটা। এতদিন স্নিগ্ধা অপরাধবোধে গুমরে ছিল। রিমঝিম চলে যাওয়ার পর একা একা অনেক্ষণ কান্নাকাটি করে সে। তারপর ধীরে ধীরে মন হালকা হতে থাকে। দুই বেস্ট ফ্রেন্ডের দশ দিন যোগাযোগ বন্ধ। তারপর রিমঝিমই ফোন করে স্নিগ্ধাকে। শান্তভাবে বলে যে, “এ ব্যাপারটা এর বেশি এগোস না। বউদির কথাটা একবার ভাবিস।” স্নিগ্ধাও কথা দেয় যে দিল্লির ব্যাপার সে দিল্লিতেই মিটিয়ে এসেছে। দুই বান্ধবীর সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে কতদিন সময় লাগবে কেউ জানে না। আদৌ দুজনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কিনা সন্দেহ। এর জন্য দায়ি স্নিগ্ধার সৎ স্বীকারোক্তি।
বন্ধুরা যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তা স্বীকার করে ফেলে তাহলে ভয়ানক ব্যাপার হয়ে যায়। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাও যায় না আবার ভেঙেও ফেলা যায় না। বন্ধু বান্ধবের মধ্যে টুকটাক মিথ্যে কথা বলা বা কোনও বিষয় নিয়ে গোপনীয়তা থাকতেই পারে। কিন্তু তা যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে তখনই সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কোনও স্বীকারোক্তি শুনলে তখন কী করবেন আপনি? বলাবাহুল্য কেউ নিজের দোষ স্বীকার করছে মানে সে অপরাধবোধে ভুগছে। মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে। মানসিক উদ্বেগে ভুগছে। কিন্তু তার মানেই কি তাঁকে ক্ষমা করা যায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
নিজের অস্বস্তির বিষয়টি মেনে নিন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যে আপনি অস্বস্তিবোধ করছেন সেটি আগে মেনে নিন। সেই সময় প্রাথমিকভাবে আপনি রেগে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য মানসিক উদ্বেগের প্রয়োজন নেই। স্বীকারোক্তি শোনার পর যদি আপনি অস্বাভাবিক রকমের চুপ হয়ে যান তার মানে বিষয়টি আপনাকে মানসিকভাবে ভয়ানক আঘাত করেছে। আচমকা চুপ হয়ে যাওয়ার থেকে রাগারাগি কান্নাকাটি করা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক নিরাপদ। চুপ করে না থেকে মনে যা আছে বলে ফেলুন। মানসিক কষ্ট কমবে।
বিশ্বাসঘাতকতা কতটা জটিল তা ভাবুন
বন্ধু যদি আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন তাতে রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মাথা ঠান্ডা হলে একবার ভেবে দেখুন সেই ব্যবহার কতটা জটিল। যদি কিছুদিন রাগ দেখিয়ে ফের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যায় তাহলে সেটাই করুন। কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকতা যদি যৌন বিষয়ক হয় তাহলে তা ক্ষমা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এবং বাস্তবে দেখা গেছে এসবক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের অপরাধই বেশি ধরা পড়েছে।
পরিস্থিতি যাচাই করুন
বন্ধুকে বার বার প্রশ্ন করে যাচাই করে দেখুন যে কোন পরিস্থিতে সে ভুল কাজটি করে ফেলেছে। সত্যিই যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুল করে ফেলে তাহলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করা যায়। কিন্তু যদি দেখা যায় একই ভুল সে বারবার করছে বা সেই ভুলের স্বীকারোক্তি আপনার কাছে করে বেশ আনন্দে উত্তেজিত হয়ে পড়ছে তখন তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে দুবার ভাবুন। আবার বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা যদি সরাসরি আপনার সঙ্গে যুক্ত না হয় তাহলে তা নিয়ে অতিরিক্ত জল ঘোলা করারও দরকার নেই।
বন্ধুর ব্যবহার খেয়াল করুন
বন্ধুর ব্যবহার বা স্বীকারোক্তির ধরন পছন্দ না হলে বিষয়টি নিয়ে নিজে একটু তদন্ত করে দেখুন। অনেক সময় স্বীকারোক্তির পরেও পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকে মিথ্যে কথা বলেন। সেরকম হলে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করুন। আপনাকে না জানিয়ে কিছু করেছে মানেই সেটি ভুল এমন হয়তো নয়। তবে এমন কিছু যদি করে যার সঙ্গে আপনার সরাসরি যোগাযোগ আছে তাহলে অযথা দয়া দেখানোটা বোকামি। এটি শুধু বন্ধু নয় প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রেও হতে পারে।
বন্ধুকে বুঝুন
অনেক সময়ই দেখা যায় কোনও ভুল করার পর অপরাধবোধে ভুগে বন্ধু আপনার কাছে স্বীকারোক্তি করে। এবং অনুরোধ করে যে সেটি যেন কাউকে না জানানো হয়। সেক্ষেত্রে বন্ধুর পাশে থাকাটাই ভালো। বন্ধু এরকম করছেন মানে তিনি আপনার উপর ভরসা করছেন। হয়তো তাঁর ভুল বা দোষ অতটাও ভয়ানক নয়, পরিস্থিতির চাপে পড়ে তিনি সেরকম করতে বাধ্য হয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব তাঁর বিশ্বাসভাজন হওয়া। তাঁর গোপন কথা নিজের মধ্যে গোপন রাখা।
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইলে…
আপনি যদি সমস্ত কিছু জেনেও বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে বন্ধুর ভুল ভ্রান্তি, স্বীকারোক্তি নিয়ে ভাবা বা তার সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক ধারণা ত্যাগ করুন। স্বাভাবিক থাকুন। বন্ধুর ভুল যখন মেনেই নিয়েছেন তখন আর তাঁর সমালোচনা করে বা তাঁকে টিটকিরি দিয়ে কী হবে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-09-09 22:23:32
Source link
Leave a Reply