সম্পর্ক এমন এক বিষয় যা তার রূপ পরিবর্তন করে জীবনের পরতে পরতে। অবশ্য এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটে মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে। মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল। আর তাই সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশটা হয় নানাভাবে। জীবনযাপনের বিভিন্ন স্তরে আমরা সম্পর্ক নিয়ে সংকটে পড়ি। একটু গভীর মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলেই বোঝা যায় এর কারণ, বের হয়ে আসে সমাধানের পথ-
নিজের ইচ্ছার প্রতি স্বামীর শ্রদ্ধা না পেয়ে এক স্ত্রী বলছিলেন তার মনের কথাগুলো, ‘আমি প্রচন্ডরকম শপিং ফ্রিক। প্রতিদিনের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে ঈদের শপিং, সবসময়ই আমি প্রস্তুত। শপিং ছাড়াও বাইরে ঘুরতে যাওয়া, খেতে যাওয়া আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আমার সাহেব? বই পড়া, অফিস আর গান শোনা ছাড়া তার যেন দুনিয়ায় আর কোনো কাজ নেই। ছুটির দিনে তার হাত থেকে বই সরানো কোনো মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। অনেক বলে কয়ে যদি কোনোদিন শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারি, মুখ এমন গোমড়া করে থাকে যে আমারও আর শপিংয়ের মুড থাকে না। এই নিয়ে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয়। আর এই পার্থক্যটাই আমাদের সম্পর্কের একটা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এরকম রাগ অনেক স্ত্রীর মুখে প্রায়ই শোনা যায়। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেও এমন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া লাগে। একটা বিষয় সত্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনটা একেবারেই নিজস্ব। তাই জীবনধারাও চলে নিজস্ব গতিতে। প্রচলিত অর্থে আমরা যাকে বলি ‘লাইফস্টাইল’। সমস্যাটা হয় যখন অন্যদের মনোভাবনা না বুঝে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আসলে আমাদের লাইফস্টাইল নির্ভর করে আমাদের পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা, পরিবার, চারপাশের পরিবেশ সর্বোপরি ব্যক্তিত্বের ওপর। তাই লাইফস্টাইল হঠাৎ করে আমূল পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু ছোটখাটো বিষয়ে সহনশীল মনোভাব প্রকাশ করে অ্যাডজাস্ট করে নেয়া সত্যিকার অর্থেই সম্ভব। আবার শুধু মানিয়ে চলাই নয়, এই ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো জীবনে আনতে পারে বৈচিত্র্যও। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ধরে নেয়া হোক আপনি হিন্দি সিরিয়ালের পোকা। কিন্তু আপনার স্বামী বাংলা সংবাদ ছাড়া কিচ্ছু বোঝেন না। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি আর ঝগড়া। বেশি রাগ না করে একদিন স্বামীর সাথে বসে সংবাদ দেখুন। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করুন। দিনে আধঘন্টা বরাদ্দ করলে যদি সে খুশি হয় তো ক্ষতি কী। আপনি সহনশীল হলে সে-ও আস্তে আস্তে আপনার ওপর সহনশীল হবে। আপনার পছন্দ অপছন্দ বুঝতে শুরু করবেন। কিন্তু উদ্যোগটা আপনারই নিতে হবে। নিজেদের লাইফস্টাইলের খুটিনাটি পার্থক্য নিয়ে আলোচনা না করে নতুন কিছু চেষ্টা করুন। একদিন আপনার টিভি দেখা আর অপরজনের বই পড়া বাদ দিয়ে ঘুরে আসুন কোনো আত্মীয়ের বাড়ি থেকে। কোনো বিষয়ে একমত না হতে পারলে তৃতীয় কোনো বিষয়ের আবির্ভাব কাজে দেয়। মনে রাখবেন আপনার সঙ্গীর জীবনযাপনের পদ্ধতিতে বিশ্বাস করলেই ভালোবাসা বাড়বে।
মডেল শুভ ও মেহজাবিন
ছবি আশীষ সেনগুপ্ত
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ২৭, ২০১০
Leave a Reply