সমস্যাঃ আমার বয়স ২৬ বছর। ওজন ৫৮ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। আমার সমস্যা, প্রথমে ঘন ঘন প্রস্রাব হতো, কিন্তু বুকে ব্যথা হওয়ার কারণে ২০০০ সালের মে মাসে আমার প্রথম উচ্চ রক্তচাপ (৯০/১৫০) ধরা পড়ে। কিন্তু মেডিসিন ও কার্ডিওলজি চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি পরীক্ষা করে ট্যাবলেট প্রপানল-১০ মিগ্রা, ট্যাবলেট অ্যামপলিন ও ভ্যাসোপ্রিল-৫ মিগ্রা এবং আরও কিছু ওষুধ দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন খাওয়ার পরও রক্তচাপ ৯০/১৫০-এর নিচে আসেনি। তাই রক্তচাপ না কমার কারণে ওষুধ দীর্ঘদিন খাইনি। এর মাঝে বেশ কিছু চিকিৎসককে দেখিয়েছি, কিন্তু ফল পাইনি। অবশেষে গত বছরের ২৬ মে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাই। তিনি ইসিজি, আরবিএস, প্রস্রাব, রক্তের ক্রিয়েটিনিন, তলপেটের আলট্রাসনোগ্রাম প্রভৃতি পরীক্ষা করার পর ট্যাবলেট ফ্লেক্সোকর্ড, রিভোট্রিল, সেকলো ও ডরমিকম খেতে দেন। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পরও রক্তচাপ কমেনি। বর্তমানে ভালো ঘুম হয় না, ঘন ঘন প্রস্রাব ও রং লাল, বুক ধড়ফড়, খাবার হজমের সমস্যা, মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা, কোমরে ব্যথা-এসব সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে জীবন নিঃশেষ করতে ইচ্ছে করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
গাইবান্ধা।
পরামর্শঃ আপনি ২৬ বছর বয়সে সংসারবিবাগী হয়ে ইহলোক ত্যাগ করতে চাইছেন-এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। রক্তচাপ যখন নিয়ন্ত্রিত হতে চায় না, তখন আমরা কয়েকটি বিষয়ে নজর দিই-রোগী কি ওষুধ আসলেই ঠিকমতো খাচ্ছে? ওষুধের মাত্রা কি রক্তচাপ অনুযায়ী যথোপযুক্ত? রোগী কি ব্যথার ওষুধ অথবা বাতের ওষুধ খাচ্ছে? রোগীর কিডনি কি ঠিকমতো কাজ করছে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের সমাধান খুঁজলেই অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হলো, একটি ওষুধ শুরু করার পর তার পূর্ণ কার্যক্ষমতা প্রকাশ পেতে অন্তত চার সপ্তাহ সময় দেওয়া প্রয়োজন। সময়ের আগেই আবার উচ্চ রক্তচাপ কন্ট্রোল হলো না বলে মাতম করে ওষুধ এবং ডাক্তার বদলানো-কোনোটিই রোগীর জন্য ভালো নয়। আপনাকে আমি ফিক্সোকার্ড ওষুধের সঙ্গে ডাইসিস প্লাস (৮০) যোগ করে তিন-চার সপ্তাহ ধৈর্য ধরতে বলব। তাতেই কাজ হবে। আর বাকি যে সমস্যা, সেগুলোর কোনোটিই উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এগুলো হলো মানসিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এসব কিছুতে ভয় না পেয়ে এই তরুণ বয়সে জীবনকে উপভোগ করতে শেখা দরকার। জীবনযাপনের নির্দিষ্ট ছক ভেঙে এই সুন্দর পৃথিবীর লুকানো সৌন্দর্য বের করতে সাহস করে এগিয়ে গেলে আর সহজে রোগী হতে হবে না।
পরামর্শ দিয়েছেন
আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৮, ২০০৯
Leave a Reply