নয়ের দশকে সিনেমায় নায়কের পরিবারের লোকের মুখে তাও শোনা যেত যে, “বিয়ের পর বউমা চাকরি করতে চাও নাকি?” তাতে নায়িকা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের অসহায় লাজুক উত্তর, “আপনারা যা বলবেন।” বলাবাহুল্য শ্বশুরবাড়ির লোকেদের স্পষ্ট কথা, তাঁরা বাড়িতে বউয়ের রোজগারে খেতে চান না, বউ বাড়িতে থাকবেন মেয়ের মতো। শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করাই হবে তাঁর একমাত্র কাজ। নায়িকা রাজি। নায়ক রাজি। আর ভাগ্যক্রমে যদি নায়িকা বিয়ের পরেও চাকরি করতেন তাহলে তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা উঠতে বসতে তাঁকে কড়া কথা শোনাত। বাড়ির সমস্ত কাজ করে তবে চাকরি করতে যেতে পারত নায়িকা।
শুধু সিনেমাই নয় ধারাবাহিক বা বিজ্ঞাপনগুলিতেও দর্শক এবং পরিবেশকের মনোভাব এরকমই ছিল।
সময় সঙ্গে সঙ্গে বরং বলা ভালো বিশ্বায়নের পরিবর্তনের পর থেকেই বাড়ির বউয়ের চাকরি করার ধারনাটি অনেকেই মেনে নিতে থাকেন। বিশেষ করে পড়াশোনা শেখা স্বাধীনচেতা মেয়েরাই নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে পড়েন। তাই সংসার করে জীবন না কাটিয়ে উপার্জনও চালিয়ে যান নিজের জেদে। মোট কথা
একমাত্র অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরশীল হওয়ার প্রবণতা আগের থেকে এখন অনেকটাই বেশি।
আর এই দাবি আরও স্পষ্ট করল একটি ডেটিং সাইট। সেই সাইটের সমীক্ষা যে তাদের অন্তত ৬৫ শতাংশ গ্রাহক আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার পক্ষে সায় দিয়েছেন। ভারতের মতো দেশে এটা আশাজনক ব্যাপার তো বটেই।
আমাদের দেশে এখনও অনেকে মানুষ বা পরিবার রয়েছে যাঁরা নিদেন পক্ষে প্রেম করে বিয়ের পক্ষেও সায় দেন না। এখন এদেশে জাতপাত, অর্থনৈতিক অবস্থার উপর দুজন মানুষের সম্পর্ক নির্ভর করে। সেখানে ছেলে মেয়ে উভয়ের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই।
ডেটিং সাইটের সদস্যরা সকলেই প্রায় আজকের প্রজন্মের মানুষ। তাতে ৬৫ শতাংশ জন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছেন। ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে সায় দিয়েছেন অন্তত পক্ষে ৭৬ শতাংশ।
এখানেই শেষ নয়। ৩০ শতাংশ লোক সমর্থন করেছেন চলাফেরার স্বাধীনতাকে। ২২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে স্বাধীনভাবে যৌনজীবন যাপন করার। এবং স্বাধীনভাবে শিল্পকলা চালিয়ে যাওয়ার সমর্থন করেছেন ৯ শতাংশ মানুষ।
বাক স্বাধীনতার সমর্থক রয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। সঙ্গে রয়েছে স্বাধীন চিন্তা ভাবনা এবং বিশ্বাসের স্বাধীনতার দাবিও।
শুধু তাই নয়, আজকের প্রজন্ম স্বাধীন চিন্তা ভাবনায় অনেকটাই এগিয়েছে তার প্রমাণ ডেটিং সাইটের এই সমীক্ষা। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, অন্তত পক্ষে ৭৩ শতাংশ মানুষ শুধু নিজেদেরই নয় সঙ্গীরও ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পক্ষে সায় দিয়েছেন। যদিও জয়েন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমর্থনেও ভোট রয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশের।
মোট কথা নারী পুরুষ নির্বিশেষে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে একটা বড় অংশ রায় দিয়েছে। এই প্রজন্মের এই পরিবর্তন যে ইতিবাচক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বলাবাহুল্য এটি একেবারই শহরাঞ্চলের হিসেব। ভারতের গ্রামাঞ্চলের মানসিকতার কিন্তু কোনও খোঁজ মেলেনি। তবে হ্যাঁ, একথা বলা যায় যে ডেটিং সাইটের সদস্যদের মধ্যে গ্রাম থেকে শহরের আসা লোকজনের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। মানসিকতা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে সেই মানুষগুলির মধ্যেও। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মূল্য এবং প্রয়োজনীয়তা যে আজকের শিক্ষিত প্রজন্ম বুঝতে শুরু করেছে সেটাই অনেক।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-09-07 22:07:00
Source link
Leave a Reply